shono
Advertisement

খারাপ কোলেস্টেরল বাড়লে কি ওষুধেই ভরসা? জেনে নিন চিকিৎসকের পরামর্শ

রক্তে কোলেস্টেরল বাড়লে কখন ওষুধ দরকার সেটা জানা খুব জরুরি।
Posted: 09:39 PM Feb 24, 2022Updated: 09:39 PM Feb 24, 2022

রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লেই যে তা অসুখের ইঙ্গিতবাহী, এমনটা নয়। গুড কোলেস্টেরল বেশি থাকা ভাল। কিন্তু খারাপ কোলেস্টেরল বাড়লে তখন কি ওষুধেই ভরসা? নাকি জীবনযাপনের পরিবর্তন ওষুধের পরিপূরক হতে পারে? বুঝিয়ে বললেন এসএসকেএম হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের অধ‌্যাপক ডা. প্রদীপ মুখোপাধ‌্যায়। শুনলেন সোমা মজুমদার

Advertisement

কোলেস্টেরল শুনলেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ কোলেস্টেরলের প্রয়োজন রয়েছে। তবে তা বেড়ে গেলে চিন্তার আছে বই কি! কারণ এই সমস্যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাজীবন ওষুধ খাওয়ার ভয়ে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেন না। যদিও জীবনযাপনকে নিয়ন্ত্রণে রেখে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, তবুও যখন ওষুধ দরকার তখন যদি ওষুধ না খাওয়া হয় সেক্ষেত্রে দেরি হলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। তাই রক্তে কোলেস্টেরল বাড়লে কখন ওষুধ দরকার সেটা জানা খুব জরুরি।

প্রকারভেদ
কোলেস্টেরলের মধ্যে এলডিএল সবচেয়ে ক্ষতিকারক, তারপরে ভিএলডিএল। এবং এইচডিএল হার্টকে রক্ষা করে। তাই শরীরে এলডিএল, ভিএলডিএলের মাত্রা যত কম থাকবে তত ভাল। অন্যদিকে, এইচডিএলের মাত্রা যত বেশি তা শরীরের জন্য ভাল। এইচডিএল বাদ দিয়ে আর যে সব কোলেস্টেরল আছে তাকে নন এইচডিএল কোলেস্টেরল বলা হয়। অর্থাৎ কোলেস্টেরলের মাত্রা কারও যদি ২০০ হয়, তার মধ্যে এইচডিএল ৪০ হলে নন এইচডিএল হবে ১৬০।

[আরও পড়ুন: ঋতুর খামখেয়ালিতে উধাও বসন্ত, ব্যাপক প্রভাব শিশু-বয়স্কদের স্বাস্থ্যে, কীভাবে এড়াবেন অসুস্থতা? ]

আদর্শ মাত্রা
বয়স ও রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী এলডিএল কোলেস্টেরল কত থাকা উচিত ঠিক হয়। সাধারণত এলডিএল ১০০-এর নিচে থাকা আদর্শ। কিন্তু যদি হার্টের সমস্যা কিংবা অন্যান্য কো-মর্বিডিটি থাকে কিংবা রোগী যদি ধূমপান করেন তাহলে ৭০-এর নিচে রাখতে হবে। কোলেস্টেরল ৭০-এর নিচে আসার পরেও বুকে ব‌্যথা কিংবা অ‌্যাঞ্জাইনাল পেন হয় কিংবা একাধিক রিস্ক ফ্যাক্টর থাকে তাহলে ৫৫-র নিচে থাকা উচিত। যদিও কিছু ল‌্যাবরেটরিতে ১৫-কে এলডিএলের টার্গেট হিসাবে ধরা হলেও তা ঠিক নয়। এইচডিএল ছেলেদের ৪৫-এর বেশি এবং মেয়েদের ৫০-এর বেশি হওয়া খুবই জরুরি।

ওষুধ কখন
সাধারণত ১০০-র উপরে এলডিএল কোলেস্টেরল থাকলেই ওষুধ খাওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি এলডিএল ১০০-র নিচে থাকলেও নন-এইচডিএল ১৩০-এর বেশি থাকে তখন ওষুধ খেতে হবে। অন্যদিকে, ট্রাইগ্লিসারাইড ১৫০-এর নিচে থাকলে স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ট্রাইগ্লিসারাইড ৪০০-এর উপরে না গেলে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় না। ট্রাইগ্লিসারাইড ১৫০-৪০০-র মধ্যে গেলে রোগীর ওজন কমাতে হবে, লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনতে হবে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম খেতে হবে, থাইরয়েড কিংবা ডায়াবেটিস থাকলে তার চিকিৎসা কররে হবে। তবে ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি হলে প্যানক্রিয়াসে সমস্যা হতে পারে।

রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে
ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলে বেশ কয়েকটি রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে কিনা দেখতে হবে। যেমন রোগীর ব্লাড প্রেসার এবং ডায়াবেটিস রয়েছে কিনা, রোগীর অর্থাৎ পুরুষের ৪৫ বছর এবং মহিলাদের ৫৫ বছরের বেশি বয়স হলে এবং পরিবারে কোনও পুরুষ আত্মীয়র ৫৫ বছরে এবং মহিলাদের ৬৫ বছর বয়সে হার্ট অ‌্যাটাকের ইতিহাস থাকলে, রোগী ধূমপায়ী কিনা, ওজন বেশি রয়েছে কিনা। সেক্ষেত্রে যত বেশি রিস্ক ফ্যাক্টর থাকবে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা তত বেশি থাকে। তাই কোলেস্টেরলের ওষুধ খাওয়ার ব‌্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

আমৃত্যু ওষুধ কেন
মূলত ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতেই কোলেস্টেরলের ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় । তাই যেহেতু মৃত্যুকাল পর্যন্ত হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থেকে যায় তাই কোলেস্টেরল ওষুধ বন্ধ করা যায় না। তবে এমন নয় যে ওষুধ খেয়ে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে গেলেই আর হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা নেই। সেক্ষেত্রে ওষুধ বন্ধ করে দিলে বা না খেলে তৎক্ষনাৎ কোনও প্রভাব বুঝতে পারবেন না। কিন্তু কয়েক বছর বাদেই হৃদরোগ হতে পারে। তবে ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনও রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলেও সেগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

প্রথমেই ওষুধ না খেলে
প্রথমেই ওষুধ না খেলে রোগীর উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বেশি থাকলে কমাতে হবে। এছাড়া হাঁটাচলা, এক্সারসাইজ ইত্যাদি করে শারীরিকভাবে সচল থাকতে হবে এবং ডায়েটের দিকে নজর দিতে হবে। যদি বয়স অল্প থাকে এবং কোনও রিস্ক ফ্যাক্টর না থাকে তাহলে লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমছে কিনা তা দেখতে হবে। তবে প্রয়োজনে ওষুধও খেতে হতে পারে।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সাধারণত এই ধরনের ওষুধ খেলে বড়সড় কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। তবে দেহে হাল্কা ব্যথা, পেশি ও পিঠে ব্যথা হতে পারে। তবে ওষুধ খাওয়ার পর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে বলে মনে হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

[আরও পড়ুন: অ্যাম্বিলিক্যাল কর্ডের রক্ত প্রতিস্থাপনে এডস মুক্ত রোগী, আশার আলো দেখছেন কলকাতার বিশেষজ্ঞরা ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement