অভিরূপ দাস: সুন্দর চকচকে পাকা ফলের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে মারণ বিষ৷ শরীরে ঢুকছে রাসায়নিক৷ জেনে অথবা না জেনে আমরা তারই শিকার৷ তাই জেনে নেওয়া জরুরি- কোন ফলের আড়ালে রয়েছে কী!
Advertisement
মোম-ফল:
“অ্যান অ্যাপেল আ ডে/কিপস দ্য ডক্টর অ্যাওয়ে”৷ এমনটাই জানতেন সকলে৷ রোজ আপেল খাওয়ার এই বিধান আপাতত শিকেয়৷ চিকিৎসকরা বলছেন বাজারের চকচকে আপেল খেলে উপকার তো দূর, উল্টে ছুটে আসতে হবে চিকিৎসকের কাছেই৷ বাজারের চকচকে, স্টিকার দেওয়া আপেলের গা রেশমের মতো মোলায়েম৷ ক্রেতাদের টানতে আপেলের গায়ে মোম দিচ্ছেন ফল বিক্রেতারা৷ গায়ে মোম জাতীয় প্রলেপ দিয়ে রাখলে আপেল সহজে নষ্ট হয় না৷ অনেকদিন পর্যন্ত সতেজ থাকে৷ দেখতেও তা সাধারণ আপেলের তুলনায় অনেক বেশি ঝাঁ চকচকে৷ শুধু আপেল নয়, বাজারের পাতি লেবুতেও মোমের হদিশ পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷ সাধারণত সস্তার পেট্রোলিয়াম জাতীয় মোম ব্যবহার করেন চাষিরা৷ দেখা গিয়েছে আপেল-লেবুর গায়ে এমন মোম ব্যবহার করা হয় যা সাধারণত সস্তার লিপস্টিক, গায়ে মাখার ক্রিমে থাকে৷ রোজ লিপস্টিক খাওয়ার পরিণাম সহজেই অনুমেয়৷
লাল ইঞ্জেকশন:
বাজারে তরমুজ কিনতে গিয়ে গরু খোঁজা খোঁজেন ক্রেতা৷ নিটোল গোল, রসালো লাল তরমুজই পছন্দ৷ লম্বাটে তরমুজ ব্যাগে ভরতে চান না কেউই৷ তরমুজ কেনার আগে অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, “দাদা ভেতরটা লাল হবে তো?” ছুরি দিয়ে এক ফালি কেটে দেখালেই মনখুশ৷ তরমুজের গায়ে হাত বুলিয়ে ক্রেতা দেখে নেন মাখনের মতো মসৃণ কি না৷ আর এখানেই থাকে কারসাজি৷ তরমুজকে গাঢ় মসৃণ সবুজ রঙ দিতে কপার সালফেটে চুবিয়ে রাখা হয়৷ প্রায় একদিন চুবিয়ে রাখলেই এর গা মসৃণ হয়ে ওঠে৷ এর পর ভেতরের পাল্পে গাঢ় লাল রং আনতে এরিথ্রোসাইন ইনজেক্ট করা হয়৷ ব্যস, এর পর তরমুজ কাটলেই টকটকে লাল- তা সে খেতে যতই পানসে হোক না কেন৷ আপনিও খুশি, কিন্তু শরীরে ঢুকছে বিষাক্ত রাসায়নিক৷
কারবাইড-ফল:
বাজারে যে আম, পেঁপে, কলা, বিক্রি হয় তার বেশিরভাগই বিষাক্ত ক্যালসিয়াম কারবাইডে পাকানো৷ আম, কলা, পেঁপে সবুজ থাকতেই গাছ থেকে পেড়ে ফেলেন চাষি৷ কাঁচা ফলের ঠাঁই হয় হাওয়া নিরোধক বদ্ধ ঘরে৷ এই ঘরে এথিলিন গ্যাস থাকে৷ সেই গ্যাসেই চটজলদি পাকে ফলগুলি৷ শরীরে যার ফল মারাত্মক হতে পারে৷
খেলে কী ক্ষতি?
• ফল পাকানোর ক্যালসিয়াম কারবাইড নিয়মিতভাবে শরীরে প্রবেশ করলে কিডনির দফারফা৷ ক্যালসিয়াম কারবাইডে আর্সেনিকের নমুনা মিলেছে৷ এই রাসায়নিক বিভিন্ন উন্নত দেশে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে৷ কারবাইডে পাকানো ফল খেলে হতে পারে ইনসমনিয়া, আলসার জাতীয় অসুখ৷ হজম প্রক্রিয়াও বিঘ্নিত হয় কারবাইডে৷
• আনারসের ভেতরটা হলুদ করতে ‘মেটানীল ইয়েলো’ নামক রং ব্যবহার করা হয়৷ কৃত্রিম এই রং যকৃৎ-এর ক্যানসারের প্রধান কারণ৷
• আপেলের বাইরে যে মোম ব্যবহৃত হয়, তাও শরীরের পক্ষে মারাত্মক৷ লেড নাইট্রেট জাতীয় এই মোম স্নায়ুতন্ত্রের উপর আঘাত হানে৷
• বিভিন্ন ফল মসৃণ করতে অনেক সময় কপার সালফেটে চুবিয়ে রাখা হয়৷ কপার সালফেট শরীরে প্রবেশ করলে অ্যানিমিয়া অবশ্যম্ভাবী৷ হতে পারে হার্টের একাধিক অসুখ৷
সুস্থ থাকার সাত পথ:
• রাস্তার ফল কিনেই মুখে দেবেন না৷ বাড়িতে আনুন৷ এক দু’দিন পরে খান৷
• ফল খাওয়ার আগে জলে ডুবিয়ে রাখুন৷ রানিং ওয়াটারে ধুয়ে নিন৷
• উষ্ণ গরম জলে ফল ডুবিয়ে রাখলে ভাল৷ সাধারণত ৮০ ডিগ্রি বা তার বেশি তাপে ফরমালিন বা অন্য রাসায়নিক ধুয়ে যায়৷
• ফলের খোসা ছাড়িয়ে খান৷ কারবাইড জাতীয় রাসায়নিক খোসায় বেশি থাকে৷ আর হ্যাঁ, খেয়াল রাখবেন, ঘরের খুদে যেন খোসা মুখে না দেয়!
• তিনভাগ জলে একভাগ ভিনিগার মিশিয়ে স্প্রে তৈরি করুন৷ ফল খাওয়ার আগে এই হোমমেড ফ্রুট ওয়াশ স্প্রে করে নিন৷ তার পরে টিস্যু পেপার দিয়ে ফলের বাইরেটা মুছে নিতে ভুলবেন না৷
• আপেল, লেবুর বাইরের কৃত্রিম মোম ছাড়াতে নরম ব্রাশ দিয়ে জলের তলায় রেখে ঘষে নিন৷ মাইক্রোওয়েভ থাকলে তার মধ্যে আপেল বা লেবু রেখে অল্প তাপমাত্রায় ১০ সেকেন্ড রাখলেই মোম ছেড়ে যাবে৷
এগুলো মেনে চললেই সুস্বাস্থ্য আপনার হাতের মুঠোয়! ফলটা তো ছিলই!
The post জানেন কি, কোন ফল থেকে কোন বিষ ঢুকছে আপনার শরীরে? appeared first on Sangbad Pratidin.