আইটিতে চাকরি করে ক্যাট পরীক্ষায় দারুণ রেজাল্ট, সহজ কথা নয়। কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন? পৌষালী দে কুণ্ডুকে জানালেন আইআইএম কলকাতার ছাত্র দেবত্র চট্টোপাধ্যায়।
ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিটেক করার পরে টিসিএসের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার। চাকরি করতে করতেই ক্যাটের পড়াশোনা। ব্যালান্স করতেন কীভাবে?
আর কয়েক দিন পরে জোকার আইআইএম কলকাতায় ক্লাস শুরু। তাই সম্প্রতি আইটির চাকরি থেকে ইস্তফা দিলাম। কলেজ শেষ হতে না হতেই চাকরি পেয়ে যাই। তখনও এমবিএ করব ভাবিনি। তাই ক্যাট পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ারও কোনও পরিকল্পনা ছিল না। বছর দুয়েক চাকরি করার পর গত বছর ক্যাটের প্রিপারেশন নেব ঠিক করি। এর আগে পরীক্ষার সিলেবাস কী সেটাও জানতাম না। প্রথম দু-এক মাস অফিসের কাজ সামলে কখন কী কী পড়ব তা ঠিক করতেই চলে যায়। করোনা পরবর্তী সময় হওয়ায় দুদিন অফিসে গিয়ে কাজ করতে হত।
বাকি দিনগুলো সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাড়ি থেকেই অফিসের কাজ। রোজ রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে ক্যাটের কোচিং ক্লাস করতাম। তারপর আরও তিন-চার ঘণ্টা নিজে পড়তাম। ভোরে কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে আবার সকালে অফিস। আমার বাড়ি বেহালা, নিউটাউনে অফিস। যাতায়াতে অনেকটাই সময় চলে যেত। আগে থেকে ঠিক করে রাখতাম গাড়িতে জার্নির সময় কোন কোন জিনিসগুলি পড়ব। তাই যাতায়াতের সময়টায় মোবাইলেই পড়তে থাকতাম। সব মিলিয়ে গত বছর এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় আট মাস এই ছিল রুটিন। স্বাভাবিকভাবেই উইকএন্ডে পড়ার সময়টা আরও বাড়ত।
২০২৩-এর ক্যাটে তোমার ৯৯.৮৫ পার্সেন্টাইল। আইআইএম কলকাতায় এমবিএ করবে এবার। ক্যাট কতটা কঠিন ছিল?
সত্যি কথা বলতে কী, ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্র হওয়ায় ক্যাটের সিলেবাস অতটা কঠিন লাগেনি। আমাদের কলেজে বিটেকের সময় সব কিছু এত ভালো করে পড়ানো হয়েছিল যা আমাকে ক্যাটের প্রস্তুতি নিতে ভীষণ সাহায্য করেছিল। বিশেষ করে বিটেকের ম্যাথসের চেয়ে ক্যাটের ম্যাথসের সিলেবাস আমার সহজই লেগেছে। যাদের ইলেভেন-টুয়েলভ বা কলেজে ম্যাথস থাকে না তাদের ক্যাটের ম্যাথস কঠিন লাগতেই পারে।
আমি এলিটস গ্রিড নামে একটি অনলাইন কোচিং ক্লাসে এনরোল করেছিলাম। যারা চাকরি করতে করতে ক্যাটের প্রিপারেশন নিচ্ছে তাদের জন্য আইডিয়াল এটা। অফিসের সময়ের পর এখানে ক্লাস করার সুবিধা ছিল। পাশাপাশি, ক্যাটের সিলেবাস কী, কোনটা কখন কতটা পড়তে হবে তা এই ক্লাসেই বলে দেওয়া হত। আমাকে আলাদা করে খুব একটা খুঁজতে হয়নি। ওরা যখন যা পড়তে বলেছে আমি শুধু পড়ে গিয়েছি।
[আরও পড়ুন: কোন চ্যাপটার বেশি গুরুত্বপূর্ণ? JEE অ্যাডভান্সডের আগে দেখে নিন লাস্ট মিনিট সাজেশন]
বিটেকের পর এমবিএ করতে চাওয়া জুনিয়রদের আপনার টিপস। কীভাবে তৈরি
হবে তারা?
ধারাবাহিকভাবে পড়াশোনা করতে হবে। রোজের পড়ার পাশাপাশি মক টেস্ট দিয়ে লেখা প্র্যাকটিসও ভীষণ জরুরি। এই টেস্টগুলো দিলে পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন আসে তা যেমন বোঝা যায় তেমনই কত দ্রুত নির্ভুলভাবে তুমি সলভ করতে পারছ তা বুঝতে পারবে। কোন জায়গাগুলো ঠিক করে পারছ না তা দেখে নিয়ে সেইসব অংশ আরও ভালো করে পড়তে পারবে। আমি ২০-৩০টার বেশি মক টেস্ট দেওয়ার সময় পাইনি। আরও বেশি দেওয়ার চেষ্টা করবে। সর্বভারতীয় স্তরেও আইএমএস-এর মাধ্যমে মক টেস্ট দেওয়া যায়। ওই পরীক্ষায় প্রচুর ছেলেমেয়ে অংশ নেওয়ায় নিজের পজিশন কেমন তা বোঝা সম্ভব।
আমি যখন প্রথম প্রথম মক টেস্ট দিতে শুরু করি তখন বেশ খারাপ পার্সেন্টাইল পাই। ক্রমাগত টেস্ট দিতে দিতে শেষে অনেক ইমপ্রুভ করি। এছাড়াও জুনিয়রদের বলব, নিজের প্রোফাইল সুন্দর করে তৈরি করো। ক্যাটের লেখা পরীক্ষায় ভালো ফল করলেই হল না। ইন্টারভিউতেও নজর কাড়তে হবে। সেখানে কিন্তু তোমার বোর্ড পরীক্ষা ও কলেজের রেজাল্ট দেখার পাশাপাশি কোন কোন ইভেন্টে অংশ নিয়েছ বা কলেজের প্রতিনিধি হয়ে কোথায় কোথায় গিয়েছ, এক্সট্রা কী কী করেছ তাও দেখা হয়। গুছিয়ে এসওপির মতো নিজের প্রোফাইল তৈরি করা খুব জরুরি। কেন তুমি এমবিএ করতে চাইছ সেটা জানতে চায়।
বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাড়াও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স নিয়েও নানা প্রশ্ন করে। উত্তর না জানলে সেটা প্রশ্নকর্তাকে বলে দেওয়াই ভালো। ওরা দেখে তুমি প্রশ্নের উত্তর না জানলে কীভাবে রিঅ্যাক্ট করছ। ক্লাস টুয়েলভের ফিজিক্সের একটি ইকুয়েশনের উপর আমাকে প্রশ্ন করেছিল। দীর্ঘদিন প্র্যাকটিস না থাকায় ভুলে গিয়েছিলাম। আমি সেটা প্রশ্নকর্তাকে জানাই। তারপর সেই সম্পর্কিত বিষয় অন্য আর কী কী জানি সেটা বলব কি না ওঁদের জিজ্ঞাসা করি। ওঁরা তা বলতে বললে আমি ব্যাখ্যা করি। এছাড়া যে কলেজে ভর্তির জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাবে সেই কলেজের ইতিহাস, প্রাক্তনীদের সম্পর্কেও ভালো করে জেনে যেতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিং করে এমবিএ পড়তে চাইলে কেন? দুটো দিক তো সম্পূর্ণ আলাদা।
এখনও পর্যন্ত প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট পড়ার ইচ্ছা আছে। আইটি বা কোনও সফটওয়্যার কোম্পানি যেসব প্রোডাক্ট বানায়, সেগুলি ম্যানেজ করতে হয় প্রোডাক্ট ম্যানেজারকে। এর জন্য টেকনোলজির পাশাপাশি ম্যানেজমেন্টেও দক্ষ হতে হয়। এই কাজের দিকে আমার ইন্টারেস্ট আছে। ম্যানেজমেন্ট বৃহৎ একটি সাবজেক্ট। এর মধ্যে এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলি আগে কখনও পড়িনি। সেই সব বিষয়গুলি কীভাবে পড়ব, তা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এমবিএ করতে আসা সিনিয়রদের থেকে গাইডেন্স পেয়ে যাব বলে আশা করি।