অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: দু’জনে দুই রাজমিস্ত্রির সঙ্গে প্রেম করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোলেও শেষপর্যন্ত পুলিশের জালে পড়লে বালির দুই গৃহবধূ। বুধবার সকালে আসানসোল স্টেশন থেকে ৪ জনকে আটক করে পুলিশ। দুপুরে নিশ্চিন্দা থানায় নিয়ে আসা হয় তাদের। দুই গৃহবধূকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে শেখর রায় ও শুভজিৎ দাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আটক করা হয় দুই গৃহবধূ অনন্যা কর্মকার ও রিয়া কর্মকারকে।
এদিকে, ওই দুই গৃহবধূকে আর বাড়িতে গ্রহণ করতে নারাজ তাদের পরিবারের সদস্যরা। একমাত্র দুই গৃহবধূর সঙ্গে যাওয়া রিয়া কর্মকারের সাত বছরের ছেলে আয়ুশ কর্মকারকেই তাঁরা বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। বুধবার চার জন পুলিশের জালে পড়ার পর অনন্যা কর্মকারের স্বামী পলাশ কর্মকার জানালেন, অনন্যা ও রিয়া যে কাণ্ড ঘটিয়েছে তাতে তাদের আর মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা। আইনি পরামর্শ নিয়ে আয়ুশকে কাছে রাখার চিন্তাভাবনাও করছেন তাঁরা। সূত্রের খবর, স্বামীরা সময় না দেওয়ায় বাড়ি ছেড়ে রাজমিস্ত্রিদের হাত ধরে বেরিয়ে যান বলেই জানান ওই দুই বধূ।
এদিন চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানায়, গত ১৫ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে শেখর ও শুভজিৎ দুই গৃহবধূকে নিয়ে গেলে তাদের পরিবারের লোকেরা বিষয়টি মেনে নেয়নি। এর পরই গত ১৭ ডিসেম্বর পাঁচ জন মুর্শিদাবাদ থেকে হাওড়া স্টেশনে এসে সেখান থেকে গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসে করে মুম্বইয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। সেখানে তিন দিন থাকার পর শেখর রায়ের বাড়ি থেকে তার পরিবারের তরফে ফের মুর্শিদাবাদে ফিরে যেতে বলা হয়।
[আরও পড়ুন: ভয়াবহ বিস্ফোরণ কেঁপে উঠল লুধিয়ানা আদালত চত্বর, মৃত অন্তত ২]
সেইমতোই গত ২০ ডিসেম্বর মুম্বই মেলে চেপে তারা মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে রওনা দেয়। শেখর ও রিয়া কর্মকারের ফোন ট্র্যাক করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, মুম্বই মেলে বুধবার আসানসোলে নামবে তারা। এরপর স্টেশন থেকে বাসে চেপে মালদহ হয়ে মুর্শিদাবাদ যাবে ৫ জন। সেইমতোই আসানসোল স্টেশনে উপস্থিত ছিল পুলিশ। আসানসোল জিআরপির সাহায্যে মুম্বই মেল থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই গৃহবধূকে নামানো হয়।
বুধবার সকাল ৮ টা নাগাদ আসানসোল স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে মুম্বই-হাওড়া মেল আসামাত্র তল্লাশি শুরু হয়। মোবাইলে ছবি দেখে কামরায় কামরায় শুরু হয় দুই গৃহবধূর সন্ধানে তল্লাশি। আরপিএফ ও জিআরপি যৌথভাবে তল্লাশি চালানোর পর স্লিপার ক্লাস থেকে উদ্ধার করা হয় দুই গৃহবধূ অনন্যা, রিয়া ও সাত বছরের শিশু আয়ুশকে। ধরা হয় শেখর ও শুভজিৎকেও।
তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, গত ১৫ ডিসেম্বর বালির আনন্দনগরে বাড়ির কাছে লোকনাথ মন্দিরের কাছে অটোয় চাপে দুই গৃহবধূ। সেখান থেকে বেলুড় স্টেশন হয়ে প্রথমে শ্রীরামপুর যায়। সেখানে শেখর ও শুভজিতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর তারা ট্রেনে করে কাটোয়া যায়। সেখান থেকে আবার ট্রেনে করে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে পৌঁছয়। সেখানে পৌঁছতে রাত ১১টা হয়ে যায়। তারপরই তারা তাদের ফোন সুইচড অফ করে দেয়। কিন্তু শেখর ও রিয়ার ফোন মাঝে মাঝে খোলায় এই দু’টি ফোনই ট্র্যাক করে পুলিশ তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে।