সিদ্ধার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়: পারথে ভারতের ২৯৫ রানে ঐতিহাসিক টেস্ট (BGT 2024-25) জয়ের পর প্রচুর টেকনিকগত বিশ্লেষণ চলবে। আমি সম্পূর্ণ অন্য প্রেক্ষিত থেকে লেখাটা লিখছি। লিখছি, দীর্ঘদিন অস্ট্রেলিয়ায় থেকে সঞ্চয় করা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে। লিখছি, এমন এক ফ্যাক্টর নিয়ে যা জশপ্রীত বুমরাহর ভারতের পারথ টেস্ট জয়ের নেপথ্যে অনুঘটকের কাজ করেছে।
পারথ পিচ! ভারতীয় টিমের দুর্ধর্ষ প্রত্যাবর্তনের মতো নিউ অপ্টাস স্টেডিয়াম পিচের আচরণ অনেককেই বিস্মিত করে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড পর্যন্ত প্রেস কনফারেন্সে এসে বলে গিয়েছেন যে, পিচ যে এমন আচরণ করবে, ভাবতে পারেননি। কারণ, ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস চলার সময় অস্ট্রেলীয় বোলাররা প্রচুর চেষ্টা-চরিত্র করা সত্ত্বেও পিচ থেকে ফায়দা তুলতে পারেননি। আমি ১৯ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছি। এককালে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে খেলতে আসতাম। তার পর পাকাপাকি ভাবে এ দেশে বসবাস করছি উনিশ বছর ধরে। এখন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া স্বীকৃত কোচ। অতীতে খেলেছি বলে পারথের পিচ আমার চেনা। তাই পারথ পিচে ঠিক কী হয়েছে, কী করে সেটা ভারতের জয়ে অনুঘটকের কাজ করল, বুঝিয়ে বলছি।
দেখুন, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় প্রচণ্ড গরম, শুষ্ক গরম। যা ভারতের মতো নয়। তাপমাত্রা তেত্রিশ-চৌত্রিশ ডিগ্রি থাকছে। আর সেই গরম এতটাই শুকনো যে, চেক করলে প্রায়ই ‘বুশ ফায়ার’-এর খবর পাবেন। বাতাসে আর্দ্রতা থাকে না এখানে। যে কারণে, অস্ট্রেলিয়ায় বল মুভ করে না সেভাবে। আর অস্ট্রেলিয়ায় এখন দিনের আলো যেতে যেতে রাত আটটা-সাড়ে আটটা হয়ে যাচ্ছে। তাহলে ভেবে দেখুন, এই ভয়ংকর গরমে কতক্ষণে খোলা পড়ে থাকছে পারথ পিচ। আনুমানিক হিসেবে দশ ঘণ্টা মতো।
পারথ টেস্ট। ছবি: এপি
টেস্টের প্রথম দিন পারথ পিচে ঘাস ছিল। উইকেটের বাঁধুনিকে ধরে রাখতে। তাই সেদিন ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া- দু’টো টিমই ব্যাট করতে নেমে বেসামাল হয়ে যায়। কিন্তু দ্বিতীয় দিন ভারত যখন দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে নামে, তখন ব্যাট করা সহজ হয়ে গিয়েছিল। কারণ একটাই। অসহ্য শুষ্ক গরমে পারথ পিচের ঘাস মরে গিয়েছিল। এরপর খেলা যত এগিয়েছে, পিচে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। লম্বালম্বি, আড়াআড়ি- নানাবিধ ফাটল। এবং সেই ফাটল ধরার কারণও একই। গরম। সেই ফাটলে বল পড়লে কখনও উঁচু-নিচু হবে। কখনও আবার বল ভিতর-বাইরে করবে। পারথ পিচ সেই বেয়াড়া আচরণ শুরু করেছে তৃতীয় দিন দুপুরের পর থেকে।
এক্ষেত্রে বুমরাহর টস জেতা বিশাল একটা ফ্যাক্টর হয়ে গিয়েছে বলব। কারণ, ভারত টস না জিতে প্রথমে বল করলে এ সমস্ত সুযোগ-সুবিধে অস্ট্রেলিয়া পেতে পারত। তবে আবারও লিখছি, যা বললাম, সেটা নিছক ক্যাটালিস্টের কাজ করেছে মাত্র। তার চেয়ে বেশি কিছু নয়। ভারত দুর্ধর্ষ খেলে পারথ টেস্ট জিতেছে, সেটাই ধ্রুব সত্যি। আর হ্যাঁ, আমার সবচেয়ে ভালো কোন জিনিসটা লেগেছে জানেন? অস্ট্রেলিয়ার পছন্দের পিচ পেয়ে তরুণ ভারতীয় পেসারদের আবেগে ভেসে না যাওয়া। বুমরাহ অভিজ্ঞ বোলার। ও জানে, কোন পিচে কী করতে হবে। কিন্তু হর্ষিত রানা জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল। তার পরেও ‘ক্যারেড অ্যাওয়ে’ হয়ে যায়নি। আর এটাই ভারতীয় টিমের ‘সুপ্রিমেসি’।
(লেখক প্রাক্তন ক্রিকেটার ও ক্রিকেট কোচেস অস্ট্রেলিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া স্পোর্টস কমিশনের স্বীকৃত কোচ)