shono
Advertisement

রোহিঙ্গাদের বসতি তৈরিতে পরিবেশের ক্ষতি, বাংলাদেশে ধ্বংস হাজার হাজার একর বনাঞ্চল

আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২৪২০ লক্ষ কোটিরও বেশি।
Posted: 02:02 PM Dec 19, 2020Updated: 02:06 PM Dec 19, 2020

সুকুমার সরকার, ঢাকা: রোহিঙ্গাদের (Rohingya) আশ্রয় দিতে গিয়ে নিজেদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের পথে বাংলাদেশ। মায়ানমার সেনা অভিযানের মুখে পড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপনের জন্য সেখানকার আট হাজার একরেরও বেশি জঙ্গল উজাড় হয়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, এভাবে অরণ্য ধ্বংসের জেরে আর্থিক ক্ষতির অঙ্কও প্রচুর। ২৪২০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি লোকসানের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ (Bangladesh)। সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি এই রিপোর্ট পেশ করেছে।

Advertisement

সম্প্রতি বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি অষ্টম সম্মেলনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তাতে উল্লেখ, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ব্যাপক হারে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে থাকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষজন। এই মুহূর্তে তাঁদের সংখ্যা ১১ লক্ষ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। এঁরা সকলেরই রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলের বনভূমিতে এঁরা বসতি স্থাপন করেছে। পুরনো দুটি রেজিস্টার্ড ক্যাম্প এবং নতুন ৩২টি ক্যাম্প রয়েছে রোহিঙ্গাদের। এই ক্যাম্পগুলি তৈরিতে মোট ৬১৬৪.০২ একর বনভূমি (Forest) দখল করা হয়েছে। নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, ভূমিরূপ পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের অবক্ষয় ঘটেছে।

[আরও পড়ুন: বায়ুদূষণেই কিশোরীর প্রাণহানি! ব্রিটেনে প্রথমবার মৃত্যুতে দায়ী করা হল এই কারণকে]

এর জেরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২৪২০ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকারও বেশি। বনবিভাগের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। তবে সংসদীয় কমিটির দাবি, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। কমিটির মতে, ক্ষতি প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত বনজ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি টাকার অঙ্কে প্রায় ৪৫৭ কোটি টাকা এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি প্রায় ১৪০৯ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা। মোট ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ প্রায় ১৮৬৫ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তৈরি করা জঙ্গলের ৫৮০ একর এবং ১২৫৭ একর প্রাকৃতিক বন-সহ ক্যাম্প এলাকার বাইরে জ্বালানি সংগ্রহে রোহিঙ্গারা বনাঞ্চল উজাড় করেছে মোট ১৮৩৫ একর। সামগ্রিক ক্ষতির পরিমাণে মোট ধ্বংসপ্রাপ্ত বনের পরিমাণ ৮০০১.০২ একর এবং সর্বমোট বনজদ্রব্য ও জীববৈচিত্র্য-সহ ক্ষতির পরিমাণ ২৪২০ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা।

রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে সে সম্পর্কিত আরও বিস্তারিত তথ্য বিশ্লেষণ করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য বনবিজ্ঞানের অধ্যাপককে আহ্বায়ক এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে (কক্সবাজার) সদস্য সচিব করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী কমিটির ৪ সদস্যকে নিয়ে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে পরিবেশ, বন ও জীববৈচিত্র্যে যে প্রভাব পড়ছে, তা তাঁরা সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করেন। দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের ৮ হাজার একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে।

[আরও পড়ুন: সফল চিনের চন্দ্রাভিযান, চাঁদের মাটি নিয়ে ফিরল মহাকাশযান চ্যাং ই–৫]

অন্যদিকে, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে এ পর্যন্ত ৯ হাজারের বেশি টিউবওয়েল তৈরি করতে হয়েছে। এই কারণে জলের স্তর ক্রমান্বয়ে নিচে নামছে। কক্সবাজার বনাঞ্চলেই প্রথম রোহিঙ্গারা বসতি স্থাপন করে। দিন দিন মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধির জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণও বেড়েছে। অপরদিকে, গাছ কাটার মাধ্যমে কার্বন শোষণের ‘প্রাকৃতিক মেশিন’ও বন্ধ। ফলে এই মুহূর্তে এসব এলাকায় দ্বিগুণ পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড জমেছে। সবদিক থেকেই পরিবেশের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে রোহিঙ্গাদের কারণে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement