shono
Advertisement
Kashmir

'হাইব্রিড টেররিজম' নিয়ে কাশ্মীরে বাড়ছে উদ্বেগ, টার্গেট বিজেপি নেতা, পরিযায়ী শ্রমিকরা!

কী এই হাইব্রিড টেররিজম? কীভাবে কাজ করে?
Posted: 03:37 PM Apr 05, 2024Updated: 08:11 PM Apr 05, 2024

সোমনাথ রায়, শ্রীনগর: হাইব্রিড টেররিজম। কাশ্মীরের নিরাপত্তাবাহিনী, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কপালের ভাঁজ বাড়িয়ে দিচ্ছে এই দুটি শব্দই। কী এই হাইব্রিড টেররিজম?

Advertisement

৩৭০ ধারা বিলোপ হওয়ার আগে পর্যন্ত যে সব স্থানীয় যুবক বিপথে পরিচালিত হয়ে সন্ত্রাসবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনে যোগ দিত, তারা প্রত্যেকে ছিল ঘোষিত সন্ত্রাসবাদী। কেউ সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে, কেউ অন্য উপায়ে পরিবারকে জানিয়ে দিত, তারা নিজেদের অভীষ্ট পূরণে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। তাই তাদের চিহ্নিত করা অনেকটাই সহজ ছিল জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ, সিআরপিএফ, সেনার পক্ষে। কিন্তু এখন পরিস্থিতিতে বদল এসেছে অনেকটাই। ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে উপত্যকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রের তৎপরতা, কড়াকড়িতে বেশ কিছুটা দমেছিল ভূস্বর্গের সন্ত্রাসবাদের আবহ। শ্রীনগর, দক্ষিণ কাশ্মীর-সহ প্রায় গোটা কাশ্মীরেই কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড। কিছু কিছু অংশে সামান্য কিছু গতিবিধি থাকলেও মোটের উপর বেশ শান্ত কাশ্মীর।

কিন্তু তা হলে আর বিচ্ছিন্নতাবাদী, ভারতবিরোধী শক্তিদের চলবে কীভাবে? এই কারণেই ‘ইন্ডিয়া’-কে শায়েস্তা করতে নতুন পরিকল্পনা। ‘হাইব্রিড টেররিস্ট’ তারাই, যারা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ্যে আনে না। যাদের হয় অর্থের ব্যাপক প্রয়োজন, অথবা মুখে না বললেও যারা মনে-প্রাণে বিচ্ছিন্নতাবাদে বিশ্বাসী, খুঁজে বের করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পিস্তল। সঙ্গে মোটা টাকা। এর পর কাকে খুন করতে হবে তা দেখিয়ে দিলেই কাজ শেষ। নিজের পরিচয় গোপন রেখে হত্যালীলা চালিয়ে ফের সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যায় এই হাইব্রিড টেররিস্টরা। সিআরপিএফ-এর একটি সূত্রের দাবি, এদের মধ্যে রয়েছে ফলের রস বিক্রেতা, ছোট দোকানদার থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবক এমনকী ডাক্তার, অধ্যাপকরাও। কোনও তথ্য না থাকায় তাদের খুঁজে বের করতে নানা প্রতিকূলতায় পড়তে হয় নিরাপত্তাবাহিনীকে। যদিও সাম্প্রতিক দুটি ঘটনায় দুই হাইব্রিড টেররিস্টকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

[আরও পড়ুন: রাজনৈতিক উদ্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ব্যবহার, বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ রাজ্যপালের]

কিন্তু চিন্তার বিষয় হল, অঘটনের আগে তাদের খুঁজে বের করা যাচ্ছে না। নানা মহলের দাবি, এই গোটা চক্রান্তই ঘটছে আইএসআই-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। স্থানীয়দের বোঝানো হচ্ছে, তাদের প্রধান লক্ষ্য বিজেপি, তাদের সমমনোভাবাপন্ন দলগুলির নেতা এবং পরিযায়ী শ্রমিকরা। মগজ ধোলাই হয়েছে এই বলে যে, ৩৭০ প্রত্যাহারে দায়ী তাঁরাই। পরিযায়ীদের প্রসঙ্গে বোঝানো হচ্ছে, তাঁরা যত বেশি কাশ্মীরে থাকবেন, তত কমবে স্থানীয়দের রোজগারের পথ। আদতে এভাবে দুই উপত্যকাতেই নিরাপত্তারক্ষীদের ব্যস্ত রেখে পুঞ্চ ও রাজৌরির নিরাপত্তা একটু দুর্বল করিয়ে সেখানে অনুপ্রবেশ ঘটানোই উদ্দেশ্য আইএসআই-এর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গাড়িচালক বলছিলেন, “ধরুন, আমি গাড়ির সিটের নিচে পিস্তল নিয়ে ঘুরছি। সঠিক সময়ে যাকে মারার দায়িত্ব পেয়েছি, তাকে গুলি করে চুপচাপ গাড়ি নিয়ে বাড়ি চলে এলাম। এরপর কোনও এক সময়ে পিস্তলটা জমা দিলেই কাজ শেষ। টাকা তো আগেই পেয়ে গিয়েছি।” সিপিএম নেতা মহম্মদ ইউসুফ তারিগামির প্রশ্ন, “সীমান্ত তো বন্ধ। তাহলে কীভাবে এত আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে কাশ্মীরে?” হাইব্রিড টেররিজমের তত্ত্ব মেনে নিয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি-র মুখপাত্র ইমরান নবি, মোহিত ভানরা। কাশ্মীরি পণ্ডিত সংঘর্ষ সমিতির সভাপতি সঞ্জয় টিক্কু জানতে চাইলেন, “পাথর ছোড়া বন্ধ হয়েছে ঠিক, তবে উপত্যকায় এখন মুড়ি-মুড়কির মতো পিস্তল মিলছে। কে বা কারা এর জোগান দিচ্ছে?” এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য দিলেন সিআরপিএফ-এর এক আধিকারিক। বললেন, “পুরনো বহু অস্ত্র এখনও লুকিয়ে রাখা আছে কাশ্মীরজুড়ে। সেগুলিই ব্যবহার করা হচ্ছে।”

এই আবহে উঠতে শুরু করেছে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই যে কদিন আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাশ্মীর থেকে 'আফস্পা' প্রত্যাহারের পরিকল্পনার কথা জানালেন, তা কি শুধুই নির্বাচনী চমক? নাকি ভূস্বর্গের সত্যিকারের পরিস্থিতি নিয়ে কোনও তথ্যই নেই অমিত শাহর কাছে। দ্বিতীয়টি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাহলে...?

[আরও পড়ুন: শিশুর জন্মের নথিভুক্তকরণে আলাদা ভাবে জানাতে হবে মা-বাবার ধর্ম, বড় বদল নিয়মে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে উপত্যকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রের তৎপরতা, কড়াকড়িতে বেশ কিছুটা দমেছিল ভূস্বর্গের সন্ত্রাসবাদের আবহ।
  • শ্রীনগর, দক্ষিণ কাশ্মীর-সহ প্রায় গোটা কাশ্মীরেই কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড।
  • কিছু কিছু অংশে সামান্য কিছু গতিবিধি থাকলেও মোটের উপর বেশ শান্ত কাশ্মীর।
Advertisement