shono
Advertisement

‘প্রথা ভাঙলাম’, স্বনির্ভরতায় ভিন্ন পথ বেছে গর্বিত হাবড়ার ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’

বিকল্প পথে নিজের ভবিষ্যৎ তৈরি করে খুব খুশি টুকটুকি দাস।
Posted: 05:54 PM Nov 06, 2021Updated: 10:06 PM Nov 07, 2021

অর্ণব দাস, বারাসত: পড়াশোনা, উচ্চশিক্ষা, যোগ্যতা প্রমাণ, চাকরি, স্বনির্ভরতা – সমাজে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য এটাই মোটের উপর চিরাচরিত পথ। তবে চিরকাল তো একই রাস্তা ধরে হেঁটে সমাজ এগোতে পারে না। কোথাও না কোথাও প্রথা ভাঙার পথে হাঁটবেন কেউ না কেউ। হয়ত হাবড়ার (Habra) টুকটুকি দাসই সে-ই ব্যক্তি। নাহলে ইংরাজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাশের পর কেনই বা তিনি চায়ের দোকানে খুঁজে নেবেন নিজের ভবিষ্যৎ? হ্যাঁ, এটাই খাঁটি বাস্তব। হাবড়া স্টেশনের ২ নং প্ল্যাটফর্মে টুকটুকির চায়ের দোকান শুধুই তাঁর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অবলম্বন নয়, এ এক ব্র্যান্ডও। তাই তো তিনি দোকানের নাম রেখেছেন – ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’ (MA English Chaiwali), যার প্রতিটি শব্দে তথ্যই নয়, তাঁর ভাবনাও জড়িয়ে রয়েছে। ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে টেলিফোনে টুকটুকি বলছেন, ”স্বনির্ভর হওয়া নিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের চিরাচরিত ভাবনার পথে না হেঁটে আমি প্রথা ভাঙলাম। এখন যা করছি, তা নিয়ে দারুণ খুশি।”

Advertisement

গল্পের এ পর্যন্ত পড়ার পরও যদি অস্পষ্টতা কোথাও থেকে থাকে, তাহলে আরেকবার দু-একটি তথ্য ঝালিয়ে নিলেই দিনের আলোর মতো সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। হাবড়া স্টেশনে এই সপ্তাহের শুরু থেকেই নতুন এক চায়ের দোকান (Tea Stall) চালু হয়েছে। তার নামেই মালকিনের পরিচয় – ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’। মালকিন টুকটুকি দাস ইংরাজিতে এমএ। মা-বাবার কথা মেনে উচ্চশিক্ষার পর হন্যে হয়ে চাকরি না খুঁজে নিজেই তৈরি করেছেন চায়ের দোকান। ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত একাই দোকান চালান, চা বিক্রি করেন। কিছুক্ষণের বিরতি, টুকটাক কাজ সারা। সন্ধেবেলা তাঁর দোকানে স্ন্যাকস পাওয়া যায়। তারও প্রস্তুতি নেন টুকটুকি একাই। আপাতত তার দোকানের বয়স মাত্র ৬ দিন।

[আরও পড়ুন: বিজেপি ছাড়ছেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, মোদিকে চিঠি লিখে জানালেন ‘অভিমানী’ নেতা]

প্রথা ভাঙা পথে হাঁটা মেয়ে। সেই পথ তো কণ্টকাকীর্ণ হবেই। ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’র শুরুও তেমনটাই ছিল। নিজের সেই লড়াইয়ের কাহিনি ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে শোনাচ্ছিলেন টুকটুকি। প্রথম ঘরে বিরোধিতা, তারপর বাইরের অসহযোগিতা। দোকানদার বাবা কিংবা গৃহবধূ মায়ের ইচ্ছা ছিল, এমএ পাশের পর মেয়ে সরকারি চাকরি করুক। কিন্তু মেয়ে ভেবেছিল অন্য পথে। অন্য মালিকের অধীনে চাকরিবৃত্তি বিশেষ পছন্দ ছিল না। টুকটুকি নিজের মতো করে শিল্পদ্যোগী হয়ে উঠছিলেন। দোকান ভাড়া নেওয়া, ব্যবসায়িক ভাবনাচিন্তা চলেছে এ বছরের গোড়া থেকে। ব্যবসা করবে, তাও মেয়ে এত কমবয়সি মেয়ে! কেউ গুরুত্বই দেয়নি প্রথমে। দোকানঘর ভাড়াও পাওয়া যাচ্ছিল না। টুকটুকির সাফল্য নিয়ে বোধহয় তিনি নিজে ছাড়া সংশয়ী ছিলেন প্রত্যেকেই।

মায়ের সঙ্গে টুকটুকি

লড়াই করে জেতার কোনও বিকল্প হয় না। টুকটুকির লড়াইয়ের প্রথম ধাপে তিনি সফল। হাবড়া স্টেশনের ২ নং প্ল্যাটফর্মে খুলেছেন চায়ের দোকান – ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’। গুণমান, খরচের ভারসাম্য বজায় রেখে চা বানাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যেই তাঁর দোকানটি রীতিমতো ভাইরাল (Viral)। খাটনি কম পড়ে না, কিন্তু সেই খাটনিতে তিনি খুশি। বলছেন, ”কোথাও চাকরি করতে গেলে এত খাটনি করতে ভাল লাগত না। কিন্তু এখনও আমি খুশি হয়েই কাজ করতে যাই।”

[আরও পড়ুন: ভাইফোঁটাতেই রাজ্যজুড়ে শীতের আমেজ, আরও নামল পারদ]

ভাইরাল হওয়ার দৌলতে টুকটুকিকে নিয়ে নানা আলোচনাও শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে একটি বিষয়েই আপত্তি তাঁর। ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর কাছে তা খোলসা করে বললেনও। বলছেন, ”কোথাও কোথাও বলা হচ্ছে, আমি চাকরি না পেয়ে এই চায়ের দোকান খুলেছি। কিন্তু তা নয়, আমি চায়ের দোকান স্বেচ্ছায় খুলেছি। আজকালকার দিনে অনেক তরুণ শিল্পোদ্যোগী রয়েছেন। তাঁদের পথ অনুসরণ করেই আমি নিজের মতো করে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথ বেছে নিয়েছি।” ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’ সেদিক থেকে নিঃসন্দেহে কুর্নিশযোগ্য এক উদ্যোগ।

সন্ধেবেলা সিঙাড়াও পাওয়া যায় এই দোকানে
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup ছাঁদনাতলা toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার