গৌতম ব্রহ্ম: ঝগড়াটা অনেকক্ষণ ধরেই চলছিল। কিন্তু মীমাংসা যে এভাবে হবে দু’জনের কেউই ভাবেনি। বইমেলার শেষ রবিবার। তার উপর সরস্বতী পুজো। শহরের সব পথ যেন শেষ হয়েছিল সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে। বই কেনা তো ছুতো! আসলে ভালবাসার উদযাপন। নীল জিনসের সঙ্গে হলুদ শাড়ির অভিসার। এর মধ্যেই শুরু ঝগড়া। কে বেশি চালাক, তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক।
মেয়েটির দাবি, “আমি বোকা বলেই তোমার মতো ছেলের সঙ্গে প্রেম করছি।” ছেলেটির পালটা, “আমি বোকা বলেই তুমি আমায় ল্যাজে খেলাচ্ছ।” হঠাৎই দু’জনে চুপ। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্যাভেলিয়নের সামনে এসে চোখ আটকে গেল ‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’-র স্টলে। এখানেই গত বছর আইকিউ মাপিয়েছিল ছেলেটি। মওকা পেয়ে সঙ্গিনীকে নিয়ে সটান ঢুকে গেল স্টলের ভিতর। শুরু হল আইকিউ-র পরিমাপ। ‘কো’স ব্লক ডিজাইন টেস্ট এবং আলেকজান্ডার পাস অ্যালং টেস্ট। দু’রকম পরীক্ষা চলল। দেখা গেল বুদ্ধিতে মেয়েটি ছেলেটির চেয়ে এগিয়ে। ছেলেটির ‘ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট’ ৮১। মেয়েটির ৮৯। ভালবাসার উৎসবে গা ভাসানো এমন বহু ছেলেমেয়ের বুদ্ধি মেপেছে বইমেলা।
[এমআর বাঙুর হাসপাতালে ‘মিরাকল’, নবজীবন পেলেন ‘ব্রেন ডেথ’ রোগিণী]
‘আইওপি’-র অধিকর্তা ডা. প্রদীপ সাহা জানালেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে মনোরোগ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতেই এই স্টল দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন আলাদা বিষয়। যেহেতু সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা। তাই এক্সামফোবিয়া নিয়েও দু’টো সেশন রাখা হয়েছিল। ছিল হতাশা, পেরেন্টিং, ‘স্লিপ ডিসঅর্ডার’, ‘ইটিং ডিসঅর্ডার’, হ্যাপিনেস অ্যান্ড ওয়েলবিয়িং’ নিয়ে সেশন। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও সাইকিয়াট্রিস্টরা পালা করে স্টলে আসা ‘আগন্তুক’দের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কিন্তু এদিন সব কিছুকে টেক্কা দেয় ‘আইকিউ’ মাপার সেশন। লম্বা লাইন পরে স্টলের বাইরে। কচিকাঁচাদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়েছেন প্রবীণরাও। তিনি আরও বলেন, আসলে ই কিউ মাপার বিষয়টি খুবই মজাদার। প্রত্যেকেই জানতে চান, তাঁর মগজাস্ত্রে কতটা ধার। বিজ্ঞান বলছে, যার আই কিউ ১১০ তিনি বুদ্ধিমান। ‘ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট’ ৭০ হলে আপনাকে অত্যন্ত কেউ বোকা বলার সাহস পাবে না। তবে তা ৫০ বা তার নিচে হলে চিন্তার বিষয়। আর ৩০-এর নিচে থাকার অর্থ মানসিক স্থিতাবস্থার অভাব। আর তাই আইনস্টাইন কিংবা স্টিফেন হকিনের আই কিউ ভাবলে অবাক হতে হয়। তাঁদের ‘ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট’ ছিল ১৬০। অবশ্য দুই ভারতীয় কিশোর-কিশোরী এই পরীক্ষায় দুই বিজ্ঞানীকেও হার মানিয়েছিলেন। বইমেলায় অবশ্য এমন কোনও বিস্ময় বালক-বালিকাকে রবিবার খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় আয়োজকরা।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ছবি তিওয়ারি জানিয়েছেন, দম ফেলার ফুরসৎ পাননি। প্রচুর অভিজ্ঞতা হল এখানে। নানা ধরনের মানুষকে কাউন্সেলিং করার সুযোগ হল। তবে, সবচেয়ে বেশি মজাদার সেশনটি ছিল আইকিউ মাপার সেশন।
[#MeToo নিয়ে প্রতিবাদ, তনুশ্রীকে ডাকল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়]
The post মগজ কতটা সচল? উত্তর খুঁজতে বইমেলায় বুদ্ধি মাপার হিড়িক appeared first on Sangbad Pratidin.