পাকিস্তান: ২৮২/৭ (বাবর ৭৪, আবদুল্লা ৫৮, শাদাব ৪০, ইফতিকার ৪০, নুর ৩/৪৯, নবীন ২/৫২)
আফগানিস্তান: ২৮৬/ ২ (ইব্রাহিম ৮৭, রহমত ৭৭*, রহমানুল্লাহ ৬৫, শাহিদি ৪৮*)
আফগানিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তাহলে কি ১৪ অক্টোবর রাতের পর থেকেই বাবর আজমের (Babar Azam) দলটা একেবারে ঘেঁটে গিয়েছিল! টিম ইন্ডিয়ার (Team India) কাছে হারের পর অস্ট্রেলিয়ার (Australia) কাছে উড়ে যাওয়া। আর এবার চেন্নাইয়ের চিপক স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের (Afghanistan) কাছে ল্যাজেগোবরে হয়ে যাওয়া। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের বিরুদ্ধে হেরে আগেই আত্মবিশ্বাস তলালিতে চলে গিয়েছিল। আর এবার দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ (Rahmanullah Gurbaz) ও ইব্রাহিম জারদানের (Ibrahim Zadran) ১৩০ রানের জুটির জন্য আফগানিস্তান শুধু পাকিস্তানকে প্রথমবার একদিনের ক্রিকেটে হারিয়েই ক্ষান্ত থাকল না। চলতি বিশ্বকাপের (ICC ODI World Cup 2023) সেমি ফাইনাল খেলাও মহম্মদ রিজওয়ান (Mohammad Rizwan)-শাহিন শাহ আফ্রিদিদের (Shaheen Shah Afridi) কাছে তীব্র অনিশ্চিত হয়ে গেল। কারণ ইংল্যান্ডকে (England) ৬৯ রানের হারিয়ে দেওয়া পর এবার আফগানরা ৮ উইকেটে জিতে পাক বধ করল। দলকে জিতিয়ে ফের একবার ইতিহাস গড়ার কাজটা অনায়াসে সারলেন রহমত শাহ (Rahmat Shah) ও হাসমতুল্লাহ শাহিদি (Hashmatullah Shahidi)। ৬ বল বাকি থাকতে ২ উইকেটে ২৮৬ রান তুলে বাবর আজমদের চাপ বাড়িয়ে দিল আফগানরা।
আধুনিক যুগের মারকাটারি ক্রিকেটে ২৮২ রান জেতার জন্য নিশ্চিত নয়। তবে পাক দলের কাছে শাহিন-হ্যারিস রউফের মতো জোরে বোলার রয়েছেন। তাই যে কোনও দিন এই রান পাক বোলাররা রুখে দিতেই পারেন। কিন্তু খারাপ ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে ক্যাচ ফেলে দেওয়ার বহর চলতে থাকলে জয় কীভাবে আসবে! এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল বাবর আজমের ভুলেভরা অধিনায়কত্ব। ব্যাটার বাবর আজম যতটা ভালো। অধিনায়ক বাবর আজম ঠিক ততটাই খারাপ সিদ্ধান্ত নিতে সিদ্ধহস্ত। সেটা তিনি এবারের কাপ যুদ্ধে বারবার প্রমাণ দিচ্ছেন। এর আগে দুই দেশের মধ্যে ৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্যে ৩টি ম্যাচে জয় পেয়েছিল আফগানরা। প্রতিটা জয়ই এসেছিল চলতি বছর। এবার একদিনের ক্রিকেটেও বাজিমাত করলেন রশিদ খান-মহম্মদ নবিরা।
[আরও পড়ুন: দিলখোলা, বিতর্কিত না পারফর্মার! বন্ধুদের কাছে কেমন ছিলেন স্পিন লেজেন্ড বিষাণ?]
রান চেজ করতে নেমে রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জারদান শুরু থেকেই ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে চালিয়ে খেলতে শুরু করেন। দেখতে দেখতে স্কোরবোর্ডে উঠে যায় ১৩০ রান। সেই সময় অবশ্য পাকিস্তানকে প্রথম সাফল্যে এনে দেন শাহিন। রহমানুল্লাহ ৫৩ বলে ৬৫ রানে ফিরে যান। মারলেন ৯টি চার ও ১টি ছক্কা। যদিও এতে আফগান রান চেজ করতে একেবারেই বেগ পেতে হয়নি। এর পর সেই গতিতেই রান তুলতে থাকেন ইব্রাহিম জারদান। সঙ্গে পেয়ে গেলেন রহমত শাহকে। ফলে দ্বিতীয় উইকেটে উঠে যায় ৬০। ইব্রাহিম ১১৩ বলে ৮৭ রানে আউট হন। এর পর বাকি কাজটা সারেন রহমত ও আফগান অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদি। রহমত ৮৪ বলে ৭৭ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। তাঁর মারকুটে ইনিংস ৫টি চার ও ২টি ছক্কা দিয়ে সাজানো ছিল। হাসমতুল্লাহ শাহিদি ৪৫ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন। তিনি মারলেন ৪টি চার।
এবারের কাপ যুদ্ধে বড় রান পাচ্ছিলেন না। যা নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। বলা হচ্ছিল, বিরাট কোহলি, স্টিভ স্মিথ যখন রানের ফোয়ারা ছোটাচ্ছেন, সেখানে তাঁর ব্যাটিং ব্যর্থতা পাকিস্তানকে বিপাকে ফেলছে। চাপের মুখে অবশেষে ঘুরে দাঁড়ালেন বাবর আজম। ৭৪ রান করলেন পাক অধিনায়ক। ৫৮ রান করেন ওপেনার আবদুল্লা শফিকেরও। শেষ দিকে মারকুটে মেজাজে ব্যাট করলেন শাদাব খান ও ইফতিকার আহমেদ। ৩৮ বলে ৪০ রান করলেন শাদাব। ২৭ বলে ৪০ রান ইফতিকার আহমেদের। দুজনকেই শেষ ওভারে ফেরান নবীন উল হক। সব মিলিয়ে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান তুলেছিল ৭ উইকেটে ২৮২ রান।
পাকিস্তান বনাম আফগানিস্তান ম্যাচ চেন্নাইয়ে। যে মাঠে স্পিনারদের জন্য বাড়তি সুবিধা থাকে। আর প্রতিপক্ষ আফগান শিবিরের সেরা শক্তি রশিদ খান, মহম্মদ নবি ও মুজিব উর রহরমানের স্পিন ত্রয়ীই। যে কারণে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া নিয়ে দুবার ভাবেননি বাবর। দ্বিতীয় ইনিংসে আরও শুকনো হয়ে যাওয়া উইকেটে আফগান স্পিনারদের খেলার ঝুঁকি নিতে চায়নি পাক শিবির। তবে এতে লাভ হল না। স্কোরবোর্ডে লড়াই করার মতো রান উঠলেই জঘন্য বোলিংয়ের জন্য কাপ যুদ্ধের শেষ চারে যাওয়ার রাস্তা পাকিস্তানের পক্ষে কঠিন হয়ে গেল। প্রথমে তরুণ বাঁহাতি স্পিনার নুর আহমেদ ৪৯ রানে ৩ উইকেট নিলেন। এবং পরে রান চেজ করতে নেমে ব্যাটারদের দাপটে জয় ছিনিয়ে নিল কাবুলিওয়ালার দেশ।