অস্ট্রেলিয়া: ৩৬৭/৯ (ডেভিড ওয়ার্নার ১৬৩, মিচেল মার্শ ১২১, শাহিন আফ্রিদি ৫/৫৪, হ্যারিস রউফ ৩/৮৩)
পাকিস্তান: ৩০৫ (ইমাম ৭০, আবদুল্লা শফিক ৬৪, রিজওয়ান ৪৬, জাম্পা ৪/৫৩, স্টোইনিস ২/৪০)
অস্ট্রেলিয়া ৬২ রানে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতের বিরুদ্ধে হেরে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করলেও, পরপর দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে হারিয়ে সেমি ফাইনালে যাওয়ার আশা জিইয়ে রাখল অস্ট্রেলিয়া। ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শের জোড়া শতরানের উপর ভর করে ৯ উইকেটে ৩৬৭ রান তুলে নেয় অজিরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করলেও অ্যাডাম জাম্পার স্পিনের ফাঁদে ৩০৫ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। লেগ স্পিনার জাম্পা নিলেন ৫৩ রানে ৪ উইকেট। ফলে অস্ট্রেলিয়া ৬২ রানে জিতে মাঠ ছাড়ে।
বাইশ গজ যতই পাটা হোক, ৩৬৮ রান চেজ করে দেওয়া জলভাত নয়। তবে দলটার নাম যে পাকিস্তান। অঘটন ঘটাতে যারা ওস্তাদ। টিম ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে গত ম্যাচেই ১৯১ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল ‘সবুজ বাহিনী’। তবে এটাও ঠিক যে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সর্বাধিক ৩৪৫ রান চেজ করে ইতিহাস গড়েছিল বাবর আজমের দল। তাই অজিদের বিরুদ্ধে পাক দল একেবারে হাল ছেড়ে দেবে সেটাই অনেকে মনে করেছিলেন। যদিও শেষরক্ষা হল না। ব্যাট হাতে লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত হাসিমুখে মাঠ ছাড়ল ছয় বারের বিশ্বকাপ জয়ী দল।
তবে চেজ দারুণ ভাবে শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার ইমাম-উল-হক ও আবদুল্লা শফিক। দুজন দাপটের সঙ্গে প্রথম উইকেটে ১৩৪ রান তুলে দেন। অজিদের প্রথম সাফল্য এনে দেন মার্কাস স্টোইনিস। ৬১ বলে ৬৪ রানে আউট হন আবদুল্লা শফিক। এর কিছুক্ষণ পর ফের একবার পাক শিবিরে ধাক্কা দেন সেই স্টোইনিস। এবার তাঁর শিকার ইমাম। ১৫৪ রানে ২ উইকেট হারায় পাকিস্তান। ৭১ বলে ৭০ রানে ফিরে যান।
[আরও পড়ুন: ‘সাদা বলের ক্রিকেটে বুমরাহ ভারতের সর্বকালের সেরা’, বড় মন্তব্য করে দিলেন ইরফান পাঠান]
এত বড় রান চেজ করার ক্ষেত্রে সবাই বাবর আজমের দিকে চেয়েছিলেন। কিন্তু এবারও ব্যর্থ হলেন অধিনায়ক। চলতি কাপ যুদ্ধে তাঁর ব্যাটে বড় রান নেই। অধিনায়কত্বের চাপে নুব্জ বাবর। তাই তো এবারও আগ্রাসী মেজাজে শুরু করে ১৮ বলে ১৪ রানে ফিরলেন। কামিন্সের হাতে ক্যাচ ধরিয়ে তাঁকে আউট করলেন অ্যাডাম জাম্পা। ফলে ১৭৫ রানে ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
তবে মহম্মদ রিজওয়ান হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। প্রথমে চতুর্থ উইকেটে সউদ শাকিলের সঙ্গে ৫৭ রান যোগ করার পর ইফতিকার আহমেদের সঙ্গে জুড়ে দেন ৩৭ রান। কিন্তু সেই দুটি পার্টনারশিপ জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। কারণ রিজওয়ান নিজে ৪৬ রানে ফিরতেই পাকিস্তানের জয়ের সব আশা শেষ হয়ে গেল।
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন একসঙ্গে দুই অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার – ডেভিড ওয়ার্নার (David Warner) ও মিচেল মার্শ (Mitchell Marsh)। দুজনই সেঞ্চুরি করেন। জোড়া ব্যাটিং ফলায় বিদ্ধ হয় পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শেষ লগ্নে প্রত্যাঘাত করলেন পাক বোলাররা। একটা সময় ৩৮ রানে ৬ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। তবুও দুই ওপেনারের দাপটে নির্ধারিত ৫০ ওভারে প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া তুলল ৯ উইকেটে ৩৬৭ রান। বল হাতে একা লড়াই করলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ১০ ওভারে একটি মেডেন-সহ ৫৪ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন পাক পেসার।
[আরও পড়ুন: বিরাট-রোহিতদের ফিট রাখতে কোন বিশেষ সিদ্ধান্ত নিল বিসিসিআই?]
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ক্রিকেটে ওয়ার্নারের টানা চার সেঞ্চুরি হয়ে গেল। শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। বেঙ্গালুরুতে করলেন টানা চতুর্থ সেঞ্চুরি। তিনি ধরে ফেললেন বিরাট কোহলিকে। ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ওয়ান ডে ক্রিকেটে কোনও এক দেশের বিরুদ্ধে টানা চার সেঞ্চুরির নজির গড়েছিলেন কোহলি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। সেই নজির স্পর্শ করলেন ওয়ার্নার। সব মিলিয়ে ওয়ান ডে বিশ্বকাপে এটা ওয়ার্নারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। স্বদেশীয় কিংবদন্তি রিকি পন্টিং ও শ্রীলঙ্কার কুমার সঙ্গকারার রেকর্ড ছুঁলেন ওয়ার্নার। তাঁর সামনে শুধু শচীন তেন্ডুলকর ও রোহিত শর্মা। বিশ্বকাপে ৬টি সেঞ্চুরি রয়েছে মাস্টার ব্লাস্টারের। অন্যদিকে হিটম্যান রোহিত ওয়ান ডে বিশ্বকাপের মঞ্চে করেছেন ৭টি সেঞ্চুরি। তিনিই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক।
নজির গড়েছেন মার্শও। বিশ্বের সপ্তম ক্রিকেটার হিসাবে জন্মদিনে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। ১০৮ বলে ১২১ রান করে আউট হন মার্শ। ২০১১ সালে পাল্লেকেলেতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে-তে জন্মদিনে সেঞ্চুরি করেছিলেন রস টেলর। তার ১২ বছর পর ফের জন্মদিনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ক্রিকেটে সেঞ্চুরি মার্শের। ১২৪ বলে ১৬৩ রান করেন ওয়ার্নার। তবে বাকি আর কোনও ব্যাটার বড় রান করতে পারেননি। যদিও এতে ম্যাচ জিততে অজিদের বেগ পেতে হল না। অন্যদিকে টিম ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে লজ্জার হার হজম করার পর, এমনিতেই চাপে ছিল পাকিস্তান। এবার অজিদের কাছে হেরে ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নকে আরও কঠিন করে ফেললেন বাবর আজমের সতীর্থরা।