ভারত: ৩৫৭/৮ (শুভমান ৯২, বিরাট ৮৮, শ্রেয়স ৮২, মধুশঙ্কা ৫/৮০)
শ্রীলঙ্কা: ৫৫ (শামি ৫/১৮, সিরাজ ৩/১৬, বুমরাহ ১/৮, জাদেজা ১/৪)
ভারত ৩০২ রানে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় বোলারদের মধ্যে মহম্মদ শামি (Mohammed Shami) যতই দুরন্ত ফর্মে থাকুক, আসল ব্যাপারটা হল মহম্মদ সিরাজকে (Mohammed Siraj) বল হাতে দেখলেই শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka) ভয়ে কেঁপে যায়! দুই দলের মধ্যে শেষ দুটি ম্যাচের তথ্য সেটাই বলছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপের ফাইনাল (Asia Cup Final 2023)। মাত্র ২১ রানে ৬ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ৫০ রান অলআউট করে দিয়েছিলেন সিরাজ। এবার ২ নভেম্বর। প্রায় একই চিত্রনাট্য। প্রায় দেড় মাসের মাথায় সেই একই বিপক্ষের বিরুদ্ধে আবারও আগুনে বোলিং করলেন সেই সিরাজ। নিলেন ১৬ রানে ৩ উইকেট। তবে তৃতীয় পেসার হিসাবে হাতে বল নিয়েও সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন ‘সহেসপুর এক্সপ্রেস’। নিলেন ১৮ রানে ৫ উইকেট। দুজনকে যোগ্য সঙ্গত দিলেন জশপ্রীত বুমরাহ (Jasprit Bumrah)। ফলে চলতি বিশ্বকাপের (ICC ODI World Cup 2023) মঞ্চে ৩৫৮ রান তাড়া করতে নেমে শ্রীলঙ্কা শেষ ৫৫ রানে। তিন পেসারের দাপটে বিপক্ষকে ৩০২ রানে উড়িয়ে সাতে সাত করার পাশাপাশি সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলল টিম ইন্ডিয়া।
সিরাজ, বুমরাহ-মহম্মদ শামির আগুনে পেসে বিপক্ষের ব্যাটারদের তখন ঘাম ঝরতে শুরু করেছে, এমন সময় মনে হচ্ছিল জিম্বাবোয়েকে পিছনে ফেলে শ্রীলঙ্কা একদিনের ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হয়ে লজ্জার নজির গড়বে না তো! এর আগে সর্বনিম্ন রেকর্ড ছিল জিম্বাবোয়ের দখলে। ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৩৫ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল জিম্বাবোয়ে। তবে এবার সেই লজ্জা থেকে আপাতত রেহাই পেল শ্রীলঙ্কা। এমনকি বিশ্বকাপে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার লজ্জার নজিরও এড়িয়ে গেল কুশল মেডিন্সরা। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সর্বনিম্ন ৩৬ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল কানাডা। ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৪৩ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সেই লজ্জাও বাঁচানো গেল। তবে লজ্জার হার কিন্তু বাঁচানো গেল না।
২, ০, ১৭, ০, ০, ৪, ০, ৮, ১৩, ১, ০। সঙ্গে অতিরিক্ত ৫ রান। এই ছিল এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ড। আর এবার স্কোরবোর্ডের হাল আরও খারাপ। ০, ০, ১, ০, ১, ১২, ০, ০, ১২*, ১৪, ৫। অতিরিক্ত ১০ রান। সিরাজের পেসে বিপক্ষকে উড়ে গেলেও, প্রথম ধাক্কা দিয়েছিলেন বুমরাহ। বাকি কাজটা সারলেন হায়দরাবাদি। এর পর বল হাতে নিয়ে ফের বিপক্ষ ব্যাটিংকে গুঁড়িয়ে দিলেন ‘সহেসপুর এক্সপ্রেস’। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৫৪ রানে ৫ উইকেট নেওয়ার, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিয়েছিলেন ২২ রানে ৪ উইকেট। এবারও সেই ফর্ম বজায় রাখলেন শামি। এবার নিলেন ১৮ রানে ৫ উইকেট। একইসঙ্গে কাপ যুদ্ধের ইতিহাসে দ্বিতীয় বোলার হিসাবে দুবার ৫ উইকেট নেওয়ার নজির গড়লেন শামি। এর আগে এই তালিকায় মিচেল স্টার্কের নাম ছিল। এবার সেই তালিকায় শামি নাম তুলে নিলেন।
প্রথমে বিরাট কোহলি ও শুভমান গিলের জুটি। এবং পরে মিডল অর্ডার কিছুটা ধাক্কা খেলেও, শ্রেয়স আইয়ারের পালটা লড়াই। বিশেষ করে শ্রেয়সের কথা আলাদাভাবে বলতেই হবে। ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শ্রেয়স রুখে না দাঁড়ালে ভারতীয় দল স্বস্তিতে থাকতে পারত না। শ্রেয়স আউট হয়ে যাওয়ার পর স্লগ ওভারে ঝড় তুলে দিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। চলতি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এই চার তারকার ব্যাটের উপর ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৫৭ রান তুলেছিল টিম ইন্ডিয়া। দিলশান মাধুশঙ্কা ৮০ রানে ৫ উইকেট নিলেও, বিপক্ষের হার যে শুধু সময়ের অপেক্ষা সেটা দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হওয়ার আগেই জানা ছিল। আর সেটাই হল। ভারতের পেসারদের আগুনে ঝলসে কাপ যুদ্ধ থেকে ছিটকে গেল শ্রীলঙ্কা।
২০১১ সালের বিশ্বকাপ থেকে বাদ গিয়েছিলেন। ঘরের মাঠে তাঁর উপর প্রত্যাশা ছিল অনেক। তবে ফর্মে থাকা রোহিত চলতি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার পর এবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কম রানে ফিরলেন রোহিত শর্মা। মাধুশঙ্কাকে প্রথম বলেই চার মারেন ভারত অধিনায়ক। তবে দ্বিতীয় বলেই ছন্দপতন। বাঁহাতি জোরে বোলারের ভিতরে আসা ডেলিভারির লাইন মিস করতেই বোল্ড হলেন হিটম্যান। প্রথম উইকেট হারায় ভারত।
আর এর পর শুরু হল আসল খেলা। প্রথমিক ধাক্কার চাপ কাটিয়ে বিরাট কোহলি ও শুভমান গিল দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেন ১৮৯ রান। যদিও আসুমদ্র হিমাচল টিম ইন্ডিয়ার দুই মহাতারকার শতরান দেখার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু সেটা আর হল কোথায়! চলতি কাপ যুদ্ধে বেশ কয়েকটি ম্যাচে ভালো শুরু করেও শুভমান তাঁর ইনিংসকে বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। তবে এদিন তাঁকে চেনা আগ্রাসী মেজাজে দেখা গেল। তবে শেষরক্ষা হয়নি। শুভমানকে ফিরিয়ে ভারতীয় দলকে ফের ধাক্কা দেন সেই মাধুশঙ্কা। ৯২ বলে ৯২ রানে আউট হন তরুণ ওপেনার। ইনিংসে ছিল ১১টি চার ও ২টি ছক্কা।
বিরাট নিজের সেরা পারফরম্যান্স তুলে ধরার জন্য বেছে নেন সেরা মঞ্চ। তাঁর ব্যাটিং দেখে কলমচিরা এভাবেই হয়তো লেখাটা শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেটা আর হল কোথায়!ভারতীয় দল ও বিরাটের সামনে ফের একবার বাধা হয়ে দাঁড়ালেন মাধুশঙ্কা। গোটা দেশের সামনে আরও একবার স্বপ্নভঙ্গ! ৯৪ বলে ৮৮ রানে ফিরলেন ‘কিং কোহলি’। তাঁর ইনিংস ১১টি বাউন্ডারি দিয়ে সাজানো ছিল। তাঁকেও ফেরান বিরাটের এমন প্রস্থান ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ভিভিআইপি বক্সে বসে দেখলেন শচীন তেন্ডুলকর।
১৯৩ রানে ২ উইকেট থেকে ১৯৬ রানে ৩। স্বভাবতই চাপে পড়ে যায় ভারত। ফর্মে থাকা লোকেশ রাহুল শুরুটা ভালো করলেও তাঁর ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। ১৯ বলে ২১ রানে আউট হন। তাঁকে আউট করেন দুশ্মন্ত চামিরা। সূর্য কুমার যাদব (৯ বলে ১২) এদিন বেশি রান পেলেন না। তাঁর উইকেটও নিলেন মাধুশঙ্কা। তবে মিডল অর্ডারে ভাঙন ধরলেও রুখে দাঁড়ালেন শ্রেয়স আইয়ার। ওয়াংখেড়ে তাঁরও ঘরের মাঠ। চলতি কাপ যুদ্ধে উইকেট ছুড়ে আসার জন্য প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন শ্রেয়স। যদিও এদিন কিন্তু একা রুখে দাঁড়ালেন। তাঁর ব্যাট থেকে এল ৫৬ বলে ৮২ রান। তাঁর ইনিংস ৩টি চার ও ৬টি ছক্কা দিয়ে সাজানো ছিল। শ্রেয়সকেও আউট করেন মাধুশঙ্কা। তবে জাদেজা ৩৫ রানে আউট রান আউট হন। ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৫৭ রান তুলে দেয় টিম ইন্ডিয়া। এর পর বিপক্ষের ব্যাটিংকে ফের একবার বুঝে নেন শামি-সিরাজ-বুমরাহ। ফলে বিপক্ষকে ৫৫ রানে অলআউট করে ৩০২ রানে জিতে শীর্ষে টিম ইন্ডিয়া।