আলাপন সাহা, বেঙ্গালুরু: বেঙ্গালুরুর আবহাওয়া সবসময়ই বেশ আরামদায়ক। খুব একটা গরম কখনওই পাবেন না। নভেম্বরের শুরুতে আরও বেশি মনোরম। ফ্লাইট কেম্পেগৌড়া এয়ারপোর্টে নামার কিছুক্ষণ আগে পাইলটের ঘোষণা এল, বাইরের তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি। এয়ারপোর্ট থেকে বেরোতেই স্বাগত জানাল ঝকঝকে নীল আকাশ আর মিঠে রোদ্দুর। সঙ্গে হালকা মিষ্টি হাওয়ার মিশেল মন এমনিই ভালো করে দেবে। ঠিক যেমন ভালো করে দেবে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) ড্রেসিংরুমের অন্দরমহলের ছবিটাও।
রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) টিমের পরিবেশও ঠিক বেঙ্গালুরু আবহাওয়ার মতোই ফুরফুরে। প্র্যাকটিসে সবাই মন খুলে হাসছেন। ফুটভলি খেলার সময় নিজেদের মধ্যে খুনসুটি চলছে। প্র্যাকটিস শেষে বেরোনোর সময় ভক্তদের আবদার মিটিয়ে সবার সঙ্গে সেলফি তুললেন হিটম্যান। চলতি বিশ্বকাপে (ICC ODI World Cup 2023) টানা আটটা ম্যাচ জয়। শুধু জয় বললে অত্যুক্তি হয়। প্রত্যেক ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে জয় আসছে। রবিবার গ্রুপ পর্বের নেদারল্যান্ডসের (Netherlands) বিরুদ্ধে লড়াই। যে ম্যাচটা নিয়ে কারওই খুব একটা মাথাব্যথা থাকার কারণ নয়।
যদিও রোহিতরা একেবারেই সেভাবে দেখছেন না। রবিবাসরীয় চিন্নাস্বামীতে দুটো লক্ষ্য নিয়ে ভারতীয় দল নামছে। এক, টানা ন’টা ম্যাচ জেতা। একইসঙ্গে সেমিফাইনালের জন্য প্রস্তুতিটাও সেরে রাখা। অলৌকিক কিছু না ঘটলে আগামী বুধবার ওয়াংখেড়েতে বিরাট কোহলি (Virat Kohli)-মহম্মদ শামিদের (Mohammed Shami) প্রতিপক্ষ হতে চলেছে কেন উইলিয়ামসন (Kane Williamson), ট্রেন্ট বোল্টদের (Trent Boult) নিউজিল্যান্ড (New Zealand)। এদিনের প্র্যাকটিসের টুকরো-টুকরো কোলাজগুলো দেখে মনে হবে চিন্নাস্বামী থেকেই বোল্টদের খেলার মহড়া শুরু করে দিল ভারত।
[আরও পড়ুন: বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতেই কুশল মেন্ডিসের শ্রীলঙ্কাকে নির্বাসিত করল আইসিসি]
নেটে বাঁ-হাতি থ্রো-ডাউন স্পেশালিস্ট নুয়ানের বিরুদ্ধে দীর্ঘক্ষণ খেললেন ভারতীয় ব্যাটাররা। রোহিত-বিরাটরা নেটে ঢুকতেই রবীন্দ্র জাদেজা (Ravindra Jadeja) চলে এলেন। ঘণ্টা খানেক বোলিং করে গেলেন জাদেজা। যা দেখে কারও কারও মনে হল বোল্ট, স্যান্টনারদের খেলার প্রস্তুতি চলছে। এই ম্যাচের পর সেমিফাইনালের আগে বড়জোর একটা দিন প্র্যাকটিসের সুযোগ থাকবে। তাই প্রস্তুতিতে কোনওরকম খামতি রাখতে চাইছেন না রাহুল দ্রাবিড়রা (Rahul Dravid)। ভারতীয় কোচকে একটা সময় দেখা গেল শুভমান গিল (Shubman Gill), লোকেশ রাহুলদের (KL Rahul) থ্রো-ডাউন দিতে। সেটাও চলল বেশ অনেকক্ষণই।
এসবের বাইরে আরও একটা ব্যাপার থাকছে। বিরাটের ওয়ান ডে ক্রিকেটে সেঞ্চুরির ‘হাফসেঞ্চুরি’-র হাতছানি। দিল্লি ছেড়ে এখন মুম্বইয়ে থাকলেও বেঙ্গালুরু বিরাটের সেকেন্ড হোম। আইপিএলের আবির্ভাব বছর থেকেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে (Royal Chellengers Bangalore)। তাই যতই ভারতীয় টিমে রাহুল, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর মতো ভূমিপুত্ররা থাকুক না কেন, চিন্নাস্বামীর হৃদয়ের বেশিরভাগ থাকবে কিং কোহলির জন্য। আর নেটে কোহলি যেরকম একের পর এক শট খেলছিলেন তাতে মনে হল নিজের সেকেন্ড হোমেই নতুন একটা মাইলস্টোন ছোঁয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। শটগুলোতে যেমন ক্রিকেটীয় স্কিল রয়েছে, তেমনই রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়াও।
এক সাক্ষাৎকারে বিরাট বলেছেন, ‘‘নিজেকে আরও উন্নত করে টিমকে জেতানোই হল আসল উন্নতি করা। নইলে আপনি কখনওই একজন ভাল ব্যাটার হতে পারবেন না। প্র্যাকটিস ছাড়া কখনও টেকনিকের দিক থেকে নিখুঁত হওয়া যাবে না। তাই আমি নতুন শট শিখে, আরও বেশি রান করে নিজের টিমকে জেতানোর চেষ্টা করি।’’ বেঙ্গালুরুও এখন ঠিক সেটাই চাইছে। ‘ঘরের ছেলে’ যেন পঞ্চাশের মাইলফলকটা এখানেই ছুঁয়ে ফেলেন।