সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাঝখানে ২০ বছরের ব্যবধান। পুরো ৭৫৪৬ দিন পর ফের একবার বিশ্বকাপের ফাইনালে (ICC ODI World Cup 2023 Final) ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া (IND vs AUS) মহারণ দেখার অপেক্ষায় বসে রয়েছে ক্রিকেট দুনিয়া। আগামী ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টস করতে নামবেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) ও প্যাট কামিন্স (Pat Cummins)। ঠিক যেভাবে ২০০৩ সালের ২৩ মার্চ জোহানেসবার্গের বাইশ গজে টস করতে গিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) ও রিকি পন্টিং (Ricky Ponting)। তবে সেবার শেষ পর্যন্ত ‘মাইটি অস্ট্রেলিয়া’-র কাছে সেই কাপযুদ্ধের ফাইনালে ১২৫ রানে হেরে যায় ‘মেন ইন ব্লু’ ব্রিগেড। রোহিতের টিম ইন্ডিয়া (Team India) কি সেই হারের জ্বালা সুদে-আসলে তুলে নেবে? অপেক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করেছে আসমুদ্রহিমাচল।
আইসিসি প্রতিযোগিতায় দু’দেশের প্রথম ফাইনালের স্মৃতি ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে সুখের নয়। ২০ বছর আগের সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১২৫ রানে হেরে গিয়েছিল ভারত। প্রথমে ব্যাট করে ২ উইকেটে ৩৫৯ রান তুলেছিল অস্টেলিয়া। ১৪০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন পন্টিং। জবাবে ভারতের ইনিংস শেষ হয়ে গিয়েছিল ২৩৪ রানে। বীরেন্দ্র শেহওয়াগের ৮২ রান ছাড়া ভারতের কোনও ব্যাটারই তেমন লড়াই করতে পারেননি।
২০০৩ সালের একদিনের বিশ্বকাপের ফলাফল দিয়ে এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালের লড়াইকে অবশ্য বিচার করা যাবে না। সেবারের কোনও ক্রিকেটারই এবার মাঠে নামবেন না। শুধু ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড় থাকবেন রোহিতদের সাজঘরে। দলগত শক্তির বিচারেও কাছাকাছি দু’দল। দু’দেশের গত কয়েকটি বিভিন্ন ফরম্যাটের সিরিজেও দেখা গিয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। যদিও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেও সিরিজ দুবার টেস্ট সিরিজ জিতেছে ভারত। বিরাট কোহলি, শুভমান গিলদের ব্যাট কিংবা জশপ্রীত বুমরাহ-মহম্মদ শামিদের বোলিংয়ের দাপটের জন্য এবার ভালো কিছুর আশা করতেই পারেন ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা।
[আরও পড়ুন: অদলবদল! বেকহ্যামকে ভারতীয় দলের জার্সি দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের সাজে রোহিত]
অবশ্য সেই ২০০৩ সালের ফাইনাল হারের দগদগে ঘা মনে রাখার পাশাপাশি, প্যাট কামিন্সের দলকে মেগা ফাইনালে উড়িয়ে দেওয়ার আরও একটা বড় কারণও আছে। ঘরের মাঠে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি জেতার পরেও, চলতি বছরের জুনে এই অজিদের কাছেই ২০৯ রানে হারতে হয়েছিল বিশ্ব টেস্ট ফাইনাল। সেই হারের আবার সাক্ষী এবারের কাপযুদ্ধের অধিকাংশ ক্রিকেটার। তাই এবার নিজেদের ডেরায় ভারতীয় দল অজিদের ফের একবার বড় ধাক্কা দেবে বলে মনে করছে ক্রিকেট মহল।
এবারের বিশ্বকাপ অভিযান অজিদের হারিয়েই শুরু করেছিল ভারত। ৮ অক্টোবর চেন্নাইয়ের বাইশ গজে রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের স্পিনের জাদুতে ১৯৯ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। পরে রান তাড়া করতে নেমে দ্রুত উইকেট হারালেও, বিরাট ৮৫ ও কেএল রাহুল ৯৭ রানে অপরাজিত থেকে দলকে এনে দিয়েছিলেন প্রথম জয়। এর পর থেকে ১০-এ ১০ করে ফাইনালের টিকিট কনফার্ম করেছে। অন্যদিকে বিশ্বকাপের শুরুতেই নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ পরপর হেরে চাপে পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৩৪ রানে হেরে যায়। সেই দু’টি হারের পর যখন সকলে ধরেই নিয়েছিল, এই বিশ্বকাপে অজিরা খারাপভাবে লিগ পর্ব থেকেই ছিটকে যাবে, ঠিক তখন তৃতীয় ম্যাচ থেকে ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ডেভিড ওয়ার্নার-ট্রাভিস হেডরা জয়ে ফেরে। এমনকি লিগ পর্বে পরপর সাত ম্যাচ জেতার পর এবার রুদ্ধশ্বাস সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালের চলে গেল পাঁচবারের বিশ্বজয়ী দল।
২০০৩ সালের ২৩ মার্চ হয়েছিল একদিনের বিশ্বকাপের ফাইনাল। তার ২০ বছর পর আবার বিশ্বকাপের ফাইনালে আবার মুখোমুখি হচ্ছে দু’দেশ। দিনের হিসাবে ৭৫৪৬ পর। এবার কি ভারত নতুন ইতিহাস লিখবে? সেই ২০১১ সালের ২ এপ্রিলের রাতের মতো ১৯ নভেম্বর উৎসবে মাতবে গোটা দেশ। আর কয়েকটা দিনের অপেক্ষা।