সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত রবিবার অর্থাৎ ৫ নভেম্বর সকাল থেকে সোশাল মিডিয়ায় বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ৩৫তম জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তার বন্যা বইছিল। সন্ধ্যার ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) বিরাট তাঁর একদিনের কেরিয়ারে ৪৯তম সেঞ্চুরি করার পর আরও একবার নেট পাড়া তোলপাড় হয়ে যায়। সেটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কারণ দিনের পর দিন বিরাটভক্তরা অপেক্ষায় ছিলেন, কবে কিং কোহলি স্পর্শ করবেন শচীন তেণ্ডুলকরের (Sachin Tendulkar) ৪৯তম ওডিআই সেঞ্চুরির রেকর্ড। আর এমন বিরল রেকর্ড গড়ার পর ফের একবার বিরাটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন রবি শাস্ত্রী (Ravi Shastri)।
টিম ইন্ডিয়ার হেড কোচ থাকার সময় তাঁর সঙ্গে বিরাটের কেমন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সেটা সবাই জানে। এহেন শাস্ত্রী বলেন, “ক্রিকেট খেলাটাই এমন। মানুষকে একেবারে বদলে দেয়। একজন মানুষকে নম্র হিসাবে গড়ে তোলে। জীবনে অনেক কিছু শেখায়। যা প্রতিদিনের জীবনে চরিত্র গঠনের শিক্ষা। বিরাট শিখেছে একটা সময় অহংকে কীভাবে কবর দিতে হয়।”
[আরও পড়ুন: অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের ‘টাইমড আউট’-এর জের, ম্যাচের শেষে শাকিবদের সঙ্গে হাত মেলালেন না কুশল মেন্ডিসরা]
২০১৯ সালের পর ২০২২, প্রায় তিন বছর ফর্মের ধারেকাছে ছিলেন না বিরাট। এরমধ্যে সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স ছিল ২০২২ সালে। ১১টি একদিনের ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ৩০২ রান। সঙ্গে ছিল মাত্র ১টি শতরান ও ২টি অর্ধ শতরান। সর্বাধিক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ১১৩ রান। গড় ২৭.৪৫। স্ট্রাইক রেট ৮৭.০৩। তাঁর সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল একাধিক বিতর্ক। কিন্তু সেই খারাপ সময় কাটিয়ে বিরাট আবার স্বমহিমায় ধরা দিয়েছেন। চলতি বছর কিং কোহলি ফর্মের তুঙ্গে রয়েছেন। পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালে এখনও পর্যন্ত ২৪টি ম্যাচে বিরাটের রান ১১৫৫। সর্বাধিক শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অপরাজিত ১৬৬। গড় ৭২.১৮। স্ট্রাইক রেট ৯৯.৮২। সঙ্গে রয়েছে ৫টি শতরান ও ৬টি অর্ধশতরান।
সেটা মনে করিয়ে শাস্ত্রী যোগ করলেন, “প্রতিদিন দোকানে গিয়ে নতুন টি-শার্ট কেনার মতো করে বিরাট শতরান করছে। এক একটা সময় আসে, যখন মানুষকে একটু বেশিই আত্মবিশ্বাসী করে দেয়। তখন মনে হয় যে, যে কোনও বোলারকে শাসন করা যাবে। এর পরেই শুরু অফ ফর্ম। তখন রান আসে না। ঠিক সেই সময়ই ফিরে যেতে হয় একদম বেসিকসে। শূন্য থেকে আবার শুরু করতে হয়। নিজের শতরান করা পুরনো ইনিংসগুলো ফিরে দেখতে হয়। যেখানে প্রচুর রানিং বিটুইন দ্য় উইকেটস থাকে। মাঠ কামড়ে প্রচুর শট থাকে। বড় শট থাকে না। হিসেবি ঝুঁকি থাকে। বিরাট এসবই করেছে। এখন আপনারা ফারাকটা দেখতে পারছেন, ও শরীরী ভাষাই বদলে গিয়েছে। ওর চাপ শুষে নেওয়ার ক্ষমতাই অন্য়রকম হয়ে গিয়েছে। ও যখন ব্য়াট করতে নামে, তখন অনেক শান্ত। বিরাট আর গরম টিনের ছাদে বসা বিড়াল নয়। চাপ নেওয়ার ক্ষমতাও বেড়েছে অনেক। ও সময় বেঁধে খেলছে। এটাই গুরুত্বপূর্ণ। সেঞ্চুরি করার অভিজ্ঞতাকেই ও কাজে লাগাচ্ছে।”
সুনীল গাভাসকরের সময় ক্রিকেট কোচেরা বলতেন তাঁর খেলা দেখে শিখতে। শচীনের যুগে তাঁরা বলতেন মুম্বইকরের খেলা উপভোগ করতে। বর্তমান যুগের কোচরা বলেন বিরাটের খেলা দেখ আর শুধু হাততালি দাও, কারণ অন্য গ্রহের মানুষের খেলা কখনও অনুকরণ করা সম্ভব নয়। তবে কি বিরাটই ভারতের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার? কারণ এবার যে তিনি একদিনের ক্রিকেটে ‘মাস্টার ব্লাস্টার’-এর ৪৯তম শতরানে ভাগ বসিয়ে নিলেন। গত ম্যাচের তুলনায় এবার প্রতিপক্ষ এবং পিচ ছিল আরও কঠিন। তবুও বিরাট সদর্পে গড়লেন মাইলস্টোন। ফলে শুধু সংখ্যার বিচারে বিরাটকেই কি সর্বকালের সেরা ব্যাটার বলে দেওয়া যায়? ফের একবার এই বিতর্ক কিন্তু বিরাটই জিইয়ে রাখলেন।