সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টিভি-মোবাইলে ম্যাচ জেতানো ব্যাটিং কিংবা বোলিং দেখা চোখের শান্তি। সোশাল মিডিয়ার যুগে সেই মুহূর্তগুলো ভাইরাল যায় মুহূর্তের মধ্যেই। তবে সেই আগুনে পারফরম্যান্সের নেপথ্যে থাকে অনেক লড়াই। কঠোর পরিশ্রম,দায়বদ্ধতা ও আত্মত্যাগ। সেগুলো একসঙ্গে মিশিয়েই চলতি বিশ্বকাপে (Cricket World Cup 2023) রাজার মতো কামব্যাক আগেই করেছিলেন মহম্মদ শামি (Mohammed Shami)। নিউজিল্যান্ডের (New Zealand) বিরুদ্ধে নিয়েছিলেন ৫৪ রানে ৫ উইকেট। এর পর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিয়েছিলেন ২২ রানে ৪ উইকেট। আর এবার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের বাইশ গজে শ্রীলঙ্কাকে (Sri Lnaka) উড়িয়ে তাঁর ঝুলিতে এল ১৮ রানে ৫ উইকেট। ফলে মাত্র ৫৫ রানে বিপক্ষকে শেষ করে ৩০২ রানের বড় ব্যবধানে জয় পেল টিম ইন্ডিয়া (Team India)। এখনও পর্যন্ত কাপ যুদ্ধে মাত্র ৩ ম্যাচেই নিয়ে ফেলেছেন ১৪টি উইকেট। আর এমন সাফল্যের সৌজন্যে বিশ্বকাপের মঞ্চে তিনটি রেকর্ড গড়লেন তিনি। স্বভাবতই ম্যাচের সেরা পুরস্কার পেলেন ‘সহেসপুর এক্সপ্রেস।’
এহেন শামি ম্যাচের শেষে বলছিলেন, “প্রথমেই আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই। সব কঠিন পরিশ্রমের মূল্য পাচ্ছি। নিজের পুরনো ছন্দ আবার ফিরে পেয়েছি। সেইজন্য আপনারা আমাদের পেস বোলারদের ঝড় উপভোগ করতে পারছেন। আসলে আমাদের দলের সব জোরে বোলাররা একে অপরের সাফল্যকে উপভোগ করছি। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই এমন ভাবেই আমরা পারফর্ম করছি। আশাকরি বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলোতেও আমরা এভাবেই বিপক্ষের ব্যাটিংকে চাপে রাখতে পারব।”
বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়ার পর কাপ যুদ্ধের মঞ্চে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সব থেকে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়লেন শামি। টপকে গেলেন জাহির খান এবং জভগল শ্রীনাথকে। বিশ্বকাপের মঞ্চে ৪৫টি উইকেট নিয়ে ফেললেন তিনি। যদিও সব দেশের মধ্যে এই তালিকায় শীর্ষে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রা। তাঁর দখলে রয়েছে ৭১টি।
[আরও পড়ুন: এশিয়া কাপ ফাইনালের রিমেক! শামি-সিরাজের পেসে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে শেষ চারে টিম ইন্ডিয়া]
এমনকি একদিনের ক্রিকেটে দ্বিতীয় বার টানা তিনটি ম্যাচে চার উইকেট নেওয়ার নজির গড়লেন শামি। এর আগে পাকিস্তানের ওয়াকার ইউনিস এই কীর্তি গড়েছিলেন। তিনি ১৯৯০ এবং ১৯৯৪ সালে পর পর তিনটি ম্যাচে চার উইকেটের বেশি নিয়েছিলেন। শামি এর আগে ২০১৯ বিশ্বকাপে পরপর তিনটি ম্যাচে চার বা তার বেশি উইকেট নিয়েছিলেন।
একইসঙ্গে কাপ যুদ্ধের ইতিহাসে দ্বিতীয় বোলার হিসাবে দুবার ৫ উইকেট নেওয়ার নজির গড়লেন শামি। এর আগে এই তালিকায় মিচেল স্টার্কের নাম ছিল। এবার সেই তালিকায় শামি নাম তুলে নিলেন।
তবে এমন সাফল্য পেলেও নির্লিপ্ত শামি। তিনি যোগ করলেন, “একজন পেস বোলারকে সাফল্য পেতে হলে সবচেয়ে জরুরি হল ছন্দ বজায় রাখা। সেটাই বজায় রাখতে পেরেছি। আসলে বড় প্রতিযোগিতায় ছন্দপতন ঘটলে সেই ছন্দ ফিরে পাওয়া খুব কঠিন হয়ে যায়। সুতরাং প্রথম থেকেই সঠিক লাইন-লেন্থ বজায় রাখার দিকেই ফোকাস ছিল। এবং সেটাই খেটে গিয়েছে। তাহলে সেটা করব না কেন!”
ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে নিজেকে নিংড়ে দেওয়ার জন্য শামি নিজের আলি নগরের ফার্ম হাউসে বেশ কয়েকটা পিচ তৈরি করেছিলেন। সেখানে হার্ড লেন্থে বোলিং করার জন্য একেবারে পাটা পিচ তৈরি করেছিলেন। ঘাসের পিচে শামি কেমন বোলিং করে সেটা গোটা দুনিয়া জানে। ওর সিম মুভমেন্ট একেবারে সোজা থাকে। সেটা আরও ক্ষুরধার করতে একটা পিচে প্রচুর ঘাস রেখেছেন শামি। আর একটা পিচ একটু স্লো ধরনের। থমকে আসা পিচে কীভাবে বোলিং করতে হয় সেটা ঝালাই করে নেয় শামি। এভাবেই নিজেকে সবার আড়ালে তৈরি করে বাইশ গজে ঝড় তুলছেন।