আলাপন সাহা, পুণে: হিঞ্জেওয়াড়ির সঙ্গে রাজারহাট-নিউটাউনের একটা মিল পাওয়া যেতে পারে। জায়গাটা মূল শহরের একটু বাইরে। বেশিরভাগই সব বিশাল-বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট। আরও নতুন কিছু তৈরি হচ্ছে। পুরনো দিনের বাড়ি-টাড়ি বিশেষ চোখে পড়বে না। ঝাঁ চকচকে সব মার্কেট। এই প্রথম বিশ্বকাপের (ICC ODI World Cup 2023) ম্যাচের সাক্ষী থাকতে চলেছে পুণে। শোনা গেল, বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১৯ অক্টোবর টিম ইন্ডিয়া (Team India) বনাম বাংলাদেশ (Bangladesh) নিয়ে প্রবল উন্মাদনা রয়েছে। টিকিট নিয়ে হাহাকার নতুন কিছু নয়। ভারতীয় দল ইতিমধ্যেই পুণেতে ঢুকে পড়েছে। টিম অবশ্য মাঠমুখো হয়নি। হোটেলেই যে যাঁর মতো করে কাটিয়েছেন। এরমধ্যে আবার ছিল শার্দূল ঠাকুরের জন্মদিন। একপ্রস্থ সেলিব্রেশন হয়েছে শোনা গেল। মঙ্গলবার ভারতীয় দলের ঐচ্ছিক অনুশীলন রাখা হয়েছে। বলাবলি চলছে, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি মাঠে নামার পর উন্মাদনাটা আরও বাড়বে। সাজিয়ে তোলা হচ্ছে স্টেডিয়ামও।
তবে পুণে শহরটার আধুনিকতার মোড়কেও এলফিসস্টোন জায়গাটার মধ্যে একটা সনাতনী ছোঁয়া লাক্ষ্য করা যাবে। এয়ারপোর্ট থেকে খুব বেশি দূর নয়। মিনিট পনেরো মতো লাগবে। স্থানীয়রা বলেন ক্যানটনমেন্ট এরিয়া। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। পুরনো সব স্থাপত্যের ছোঁয়া। বাড়িগুলো দেখে সেটা আরও ভালরকমভাবে বোঝা যাবে। ঝাঁ-চকচকে ব্যাপার-স্যাপার নেই। রয়েছে অলস অভিজাত্য।
[আরও পড়ুন: ফুটবলে ‘কালো দিন’, ব্রাসেলসে দুই সুইডিশকে খুন আইএস জঙ্গিদের! বাতিল বেলজিয়াম-সুইডেন ম্যাচ]
রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) যেমন। আধুনিকতার চাকচিক্যেও ভারত অধিনায়ক যেন অলস অভিজাত্য আর সনাতনী ঐতিহ্যের প্রতিমূর্তি হয়ে রয়ে গিয়েছেন। যাঁর কাছে আজও প্রাধন্য পায় সারল্য। তাই আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর ষোলো বছর পরও সেই সারল্যভরা কথা-বার্তা আজও একইরকম শুনতে পাবেন! সোশাল মিডিয়ার বাড়-বাড়ান্তর যুগে রোহিত আজও নিজেকে সাত-আট মাস অবলীলায় সে’সব থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন।
ক্রিকেটার রোহিত শর্মা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বিশ্বকাপে যেরকমভাবে ব্যাটিং করছেন, গোটা ক্রিকেটবিশ্ব জুড়ে বন্দনা চলছে। আগের দিন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) বলছিলেন, “রোহিত আলাদা একটা ক্লাস।” কিন্তু ব্যক্তি রোহিত শর্মা? সেটাও ক্রিকেটার রোহিতের মতোই একইরকম সৌরভ ছড়াচ্ছে। রোহিত-ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে যা জানা গেল, সেটা চমকপ্রদ। যা শুনলে রোহিত নিয়ে অপার ভালবাসা জন্ম নেবে।
শোনা গেল, আন্তর্জাতিক অভিষেকের সময় রোহিত যেরকম ছিলেন, এখনও ঠিক একইরকম আছেন। নিজেকে এতটুকু বদলালনি। কথাবার্তায় নাকি একেবারে বোরিভালির প্রথাগত ছাপ স্পষ্ট ফুটে ওঠে। সঙ্গে সারল্য মেশানো হাসিটা সবসময় থাকে। সেখানে তারকা সুলভ কোনও ব্যাপার-স্যাপার নেই। বরং মনে হতে পারে আপনি অতি-ঘনিষ্ঠ কারও সঙ্গে কথা বলেছেন। ভারতীয় টিমে তারকা হয়ে ওঠার পর অনেকেই নিজেকে বদলে ফেলেন। রোহিত সেই গোত্রে কখনও বিচরণ করেননি। আজও করেন না। সাংবাদিক সম্মেলন করতে এসেও নিজস্ব ঢংয়েই কথা বলে যান। সেখানেও সবসময় মিশে থাকে সারল্যের ছোঁয়া। রোহিত ঘনিষ্ঠ একজন বলছিলেন, “রোহিত এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। ভারতের ক্যাপ্টেন। কিন্তু ওর সঙ্গে কথা বলে কখনও সেই ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন না। বরং রনজি খেলার সময় যেরকম ছিল, এখনও সেরকমই আছে।” এটাও শোনা গেল ক্রিকেট থেকে কখনও ‘ব্রেক’ নিলে, নিজেকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে একেবারে দূরে সরিয়ে রাখেন। তাঁর কাছে তখন শুধু প্রাধান্য পায় নিজের পরিবার। বন্ধু-বান্ধব।
[আরও পড়ুন: কুশলকে দুবার ‘মানকাডিং’ করার সুযোগ পেয়েও আউট করলেন না স্টার্ক! কেন এই সিদ্ধান্ত?]
আরও একটা ব্যাপার শোনা গেল। সেটাও অবাক করার মতো। রোহিত নাকি টি-টোয়েন্ট ফরম্যাট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার একটা ভাবনা-চিন্তাও শুরু করে দিয়েছেন। রোহিত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আর খেলতে চান না। কেউ কেউ বলছিলেন, বিশ্বকাপটা জিততে পারলে সেই ঘোষণাটা দ্রুত চলেও আসতে পারে। কারণ রোহিত চান জুনিয়রদের সুযোগটা করে দিতে। কোথাও গিয়ে তাঁর মনে হচ্ছে, তরুণদের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার এটাই নাকি
আদর্শ সময়।
কী বলবেন? এরপরও ব্যক্তি রোহিত নিয়ে মুগ্ধতা আসবে না?