রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়, আহমেদাবাদ: মাঝখানে ২০ বছরের ব্যবধান। পুরো ৭৫৪৬ দিন পর ফের একবার বিশ্বকাপের ফাইনালে (ICC ODI World Cup 2023 Final) ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া (IND vs AUS) মহারণ দেখার অপেক্ষায় বসে ক্রিকেট দুনিয়া। আগামী ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টস করতে নামবেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) ও প্যাট কামিন্স (Pat Cummins)। ঠিক যেভাবে ২০০৩ সালের ২৩ মার্চ জোহানেসবার্গের বাইশ গজে টস করতে গিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) ও রিকি পন্টিং (Ricky Ponting)। তবে শেষ পর্যন্ত ‘মাইটি অস্ট্রেলিয়া’র কাছে সেই কাপযুদ্ধের ফাইনালে ১২৫ রানে হেরে যায় ‘মেন ইন ব্লু’ ব্রিগেড। রোহিতের টিম ইন্ডিয়া (Team India) কি সেই হারের জ্বালা সুদে-আসলে তুলে নেবেন? অপেক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করেছে আসমুদ্রহিমাচল। এমন মহারণের আগে আগে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে (Mahendra Singh Dhoni) মনে করছেন হিটম্যান।
মেগা ফাইনালের আগে সাংবাদিক বৈঠকে এসেছিলেন রোহিত। সেখানে অবধারিত ভাবে উঠে এসেছিল ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের প্রসঙ্গ। রোহিত বলে ওঠেন, “আমরা যেভাবে খেলে এসেছি ঠিক সেভাবেই খেলব। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেমন আগ্রাসী মানসিকতা নিয়ে খেলে কাপ জিতেছিলাম, এবারও সেই মানসিকতা বজায় রেখেই খেলব।”
২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রোহিতের স্ট্রাইক রেট নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। ঘোরাঘুরি করছিল ৯০ থেকে ৯১-এর মধ্যে। তবে চলতি বছর স্ট্রাইক রেট চোখে পড়ার মতো। ২০২৩ সালে হিটম্যান ১১৬.০৪ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে বিপক্ষ বোলারদের খুন করে ফেলছেন। বিশ্বকাপে তো রোহিত আরও আগ্রাসী। ১০ ম্যাচে রান করেছেন ৫৫০। সর্বাধিক আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ১৩১ রান। গড় ৫৫। ১২৪.১৫ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে করেছেন ১টি শতরান ও ৩টি অর্ধশতরান।’
[আরও পড়ুন: ‘শামির ভয়ে কাঁপছে অস্ট্রেলিয়া!’ মেগা ফাইনালের আগে স্বীকার করে নিলেন প্যাট কামিন্স]
নিজের আগ্রাসী মেজাজে ব্যাটিং নিয়ে রোহিত ফের বলেন, “একটা বিশেষ ব্র্যান্ড বজায় রেখে খেলা খুব জরুরি। প্রত্যেকটি ক্রিকেটারকে নিজের নিজের ভূমিকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল।” প্রায় দুই বছর দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর রোহিতের দল কেন আগ্রাসী মেজাজে ধরা দিল? রোহিত ফের বলেন, “ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলা মানেই বাড়তি চাপ নেওয়া। দেশের বিভিন্ন শহর, এয়ারপোর্ট সব জায়গায় সেই বিশ্বকাপ জয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই চাপ থেকে রক্ষা পেতে আগ্রাসী মেজাজে খেলা খুব জরুরি। সেটা ফাইনালেও বজায় থাকবে।”
২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য রোহিত ছিলেন না। সেটা নিয়ে এখনও আক্ষেপ করেন টিম ইন্ডিয়ার সেনাপতি। কিন্তু প্রশ্ন হল রোহিত কি ২০ বছর আগে ২০০৩ সালের ফাইনাল হারের বদলা নিতে পারবেন? তাঁর দাবি, “আমি এইসব তথ্য মাথায় রাখি না। বিশ্বাস করি না। শুধু আগ্রাসী মেজাজে খেলতে চাই। এবারের বিশ্বকাপে যেভাবে আমরা খেলে এসেছি, ঠিক সেভাবেই ফাইনাল খেলতে নামব।”
এবারের বিশ্বকাপ অভিযান অজিদের হারিয়েই শুরু করেছিল ভারত। ৮ অক্টোবর চেন্নাইয়ের বাইশ গজে রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের স্পিনের জাদুতে ১৯৯ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। পরে রান তাড়া করতে নেমে দ্রুত উইকেট হারালেও, বিরাট ৮৫ ও কেএল রাহুল ৯৭ রানে অপরাজিত থেকে দলকে এনে দিয়েছিলেন প্রথম জয়। এর পর থেকে ১০-এ ১০ করে ফাইনালের টিকিট কনফার্ম করেছে। অন্যদিকে বিশ্বকাপের শুরুতেই নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ পরপর হেরে চাপে পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৩৪ রানে হেরে যায়। সেই দু’টি হারের পর যখন সকলে ধরেই নিয়েছিল, এই বিশ্বকাপে অজিরা খারাপভাবে লিগ পর্ব থেকেই ছিটকে যাবে, ঠিক তখন তৃতীয় ম্যাচ থেকে ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ডেভিড ওয়ার্নার-ট্রাভিস হেডরা জয়ে ফেরে। এমনকি লিগ পর্বে পরপর সাত ম্যাচ জেতার পর এবার রুদ্ধশ্বাস সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালের চলে গেল পাঁচবারের বিশ্বজয়ী দল।
২০০৩ সালের ২৩ মার্চ হয়েছিল একদিনের বিশ্বকাপের ফাইনাল। তার ২০ বছর পর আবার বিশ্বকাপের ফাইনালে আবার মুখোমুখি হচ্ছে দু’দেশ। দিনের হিসাবে ৭৫৪৬ পর। এবার কি ভারত নতুন ইতিহাস লিখবে? সেই ২০১১ সালের ২ এপ্রিলের রাতের মতো ১৯ নভেম্বর উৎসবে মাতবে গোটা দেশ। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা।