স্টাফ রিপোর্টার: তুখড় ক্রিকেট-মস্তিষ্ক হিসাবে প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়া কোচ ট্রেভর বেলিসের (Trevor Bayliss) বেশ সুনাম আছে। কোচ হিসাবে ইংল্যান্ডকে ওয়ানডে বিশ্বকাপ দিয়েছেন। তা, বৃহস্পতিবারের ভারত-ইংল্যান্ড যুদ্ধ নিয়ে বিলেতের এক কাগজে এ দিন কলাম লিখেছেন বেলিস। লিখেছেন, ‘আমার আবেগ বলছে, আজ জিতবে ইংল্যান্ড। কিন্তু মন বলছে, ভারত!’ যা শুনলে যে কোনও নীল জার্সির সমর্থকের মনটা ফুরফুরে হয়ে যাওয়ার কথা। কাগজে-কলমে, ধারে-ভারে সবাই যেখানে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে রাখছেন ভারত-যুদ্ধে, সেখানে জস বাটলারদের বিশ্বকাপ দেওয়া বেলিসের বাজি কিনা ভারত! তবে ভয়ও আছে একটা। ইতিহাসের ভয়।
২০১৩ সালের পর কোনও আইসিসি (ICC) টুর্নামেন্ট জেতেনি ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে সেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ই শেষ। তার পর থেকে ভারত হয় সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়েছে, নইলে ফাইনাল থেকে।
খতিয়ান এ রকম:
২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: ফাইনালে হার।
২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ: সেমিফাইনালে হার।
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: সেমিফাইনালে হার।
২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি: ফাইনালে হার।
২০১৯ ওয়ান ডে বিশ্বকাপ: সেমিফাইনালে হার।
এটা ঘটনা যে, বর্তমান ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) উপরোক্ত আইসিসি টুর্নামেন্টের একটাতেও অধিনায়ক ছিলেন না। কিন্তু খেলেছিলেন। এবার ভারত অধিনায়ক হিসাবে ইতিহাসের চাকা ঘোরানোর মহাপরীক্ষা তাঁর সামনে। কিন্তু তাঁর ব্যাট, রোহিতের ব্যাট গর্জন করছে কোথায়? এখনও পর্যন্ত চলতি বিশ্বকাপে দুঃসহ ফর্ম চলছে ভারত অধিনায়কের। পাঁচ ম্যাচে রান মাত্র ৮৯। গতকাল কবজিতে চোট পাওয়ার পর এ দিন আর নেটে ব্যাট করতে যাননি রোহিত। বরং কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে (Rahul Dravid) নিয়ে অ্যাডিলেড পিচ দেখতে চলে গেলেন। তার পর সোজা বসে পড়লেন সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে।
[আরও পড়ুন: রাজ্যের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ নির্বাচন কমিশনের, কমল ভোটারের সংখ্যা, উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী ]
আসলে অ্যাডিলেড মাঠের বাউন্ডারি সব এক নয়। সোজাসুজি বাউন্ডারি বড়, আবার স্কোয়্যার বাউন্ডারি বেশ ছোট। তাই মাঠের মাপ অনুযায়ী, খেলায় বদল আনা প্রয়োজন। বিরাটের আবার এ দিন নেটে ব্যাট করার সময় ছুটকো লাগল এ দিন। কুঁচকিতে। হর্ষল প্যাটেলের বোলিংয়ে। কিন্তু সেটা ভয়ের কিছু নয়। রোহিতও পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে অ্যাডিলেড মাঠের মাপ নিয়ে নানাবিধ চ্যালেঞ্জের কথাই বেশি করে বললেন। বললেন, ‘‘গতবার দুবাইয়ে এ জিনিস ছিল না। সব মাঠের মাপই প্রায় একই ছিল। অস্ট্রেলিয়ায় এক একটা মাঠের বাউন্ডারির মাপ এক এক রকম। মানিয়ে নেওয়াটা সত্যিই বড় চ্যালেঞ্জ।’’
[আরও পড়ুন: ‘আইন না মানলে পরীক্ষা বন্ধ করে দেব’, টেট নিয়ে পর্ষদকে হুঁশিয়ারি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের]
ভারত অধিনায়কের সামনে চ্যালেঞ্জ আরও একটা আছে। সেমিফাইনালে ভারত খেলাবে কাকে? ঋষভ পন্থকে? না কি দীনেশ কার্তিককে? যুজবেন্দ্র চাহালকে? নাকি অক্ষর প্যাটেলকে? কার্তিক বা পন্থ কাউকেই দেখে স্বচ্ছন্দ মনে হয়নি এখনও পর্যন্ত। অক্ষর গ্রুপ পর্বে খেলেছেন যথেষ্ট। কিন্তু কোনও প্রভাব ফেলতে পারেননি। সেখানে যুজবেন্দ্র চাহালকে ফের বসিয়ে রাখা ব্যুমেরাং হয়ে যেতে পারে। অতএব, নানাবিধ অঙ্ক ক্যাপ্টেন রোহিতের সামনে। ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলারের সামনেও প্রতিবন্ধকতা কম নয়। ভয়াল পেসার মার্ক উডের খেলা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন আছে। না খেললে টিমে ঢুকবেন ক্রিস জর্ডন। কিন্তু উডের গতি তাঁর বোলিংয়ে নেই। দাউইদ মালান ঘোরতর অনিশ্চিত। তিনি না পারলে, খেলবেন ফিল সল্ট। বাটলারের আবার নিজের ব্যক্তিগত একটা যুদ্ধ আছে ভুবনেশ্বর কুমারের বিরুদ্ধে। ভুবনেশ্বরের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টিতে পাঁচ বার আউট হয়েছেন বাটলার। রান করেছেন মাত্র ৩০। ইংরেজ অধিনায়ক অবশ্য সেই স্ট্যাটসে পাত্তাও দেননি। উলটে বলে গেলেন, ‘‘আমি কাউকে ভয় পাই না।’’ ঠিক আছে, সেটা দেখা যাবে। দুটোর একটা তো হবে আজ। ভারত আজ হারলে ফিরবে ’৯২-এর ফাইনাল, জিতলে ফিরবে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল। অ্যাডিলেডে আজ যা-ই ঘটুক, ইতিহাস ঠিকই ফিরছে!