আলাপন সাহা: গত কয়েক বছর মুম্বই শহরটা একটু বদলেছে। রাস্তার দু’পাশ দিয়ে মেট্রোর কাজ চলছে। মেরিন ড্রাইভের রাস্তায় একটা ব্রিজ তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাকি ব্যাপারগুলো একদম একইরকম রয়েছে। জ্যাম-জট ঠিক আগের মতোই। আধ ঘণ্টার রাস্তা পৌঁছতেও অনেক সময় দেড় ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। গরম ঠিক একইরকম। নভেম্বরের শুরুতেও চড়চড়ে রোদ। মিনিট দু’য়েকের বেশি দাঁড়ানো যাবে না। সূর্যাস্তের পরও আবহাওয়া যে খুব একটা সুখকর হচ্ছে, সেটা একেবারে নয়। ক্রিকেট নিয়েও উন্মাদনাটা ঠিকই একই রকম। ওয়াংখেড়ের দু-তিন কিলোমিটার দূরে উইলসন কলেজ। ভারতবর্ষের প্রাচীনতম কলেজ। পাশে জিমখানা ময়দান। স্থানীয় ক্রিকেটের ম্যাচ চলছে। সে’সবের মাঝেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা। উইলসন কলেজের সামনে ভিড়টা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। তাঁদের বেশিরভাগই সেখান থেকে একবার ওয়াংখেড়ে (Wankhede Stadium) ঢুঁ মেরে গেলেন। যদি শেষবেলায় টিকিট পাওয়া যায় আর কী! কিন্তু টিকিট কোথায়! ম্যাচের অনেক আগে থেকেই সে’সব একেবারে নিঃশেষিত।
এমনিতে শুক্রবারের ম্যাচটা আপাত ‘নিরীহ’ একটা ম্যাচ। ভারতের সেমিফাইনাল ওঠা প্রায় নিশ্চিত। তেমনই শ্রীলঙ্কার অবস্থা বেশ খারাপ। বড় কোনও অঘটন না হলে তারা শেষ চার যাচ্ছে না। কোনও হুঙ্কার-পাল্টা হুঙ্কারের বালাই নেই। তবে মাঠের আবহটা ঠিক যতটাই নিরুত্তাপের, বাইরেরটা ঠিক ততটাই উৎসবের। রোহিত-সূর্যকুমার-শ্রেয়স আইয়ারদের মতো প্রায় জনা পাঁচেক ক্রিকেটারের ঘরের মাঠ। তার উপর আবার বারবার ফিরে আসছিল বিশ্বজয়ের সেই সোনালি স্মৃতি। যদিও ভারতীয় দল সে’সব একেবারেই মনে রাখতে চাইছে না। রোহিত (Rohit Sharma) এসে বলে গেলেন, সেই প্রায় এক যুগ আগের কথা। এটা নতুন একটা ম্যাচ। শুধু বারো বছর আগের ফাইনাল কেন, সম্প্রতি এশিয়া কাপের ফাইনালের স্মৃতি একেবারে নিজেদের মেমোরি থেকে ডিলিট করে দিয়ে শুক্রবার নামছে রোহিতরা। মাস দেড়েক আগে ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে চূর্ণ করে এশিয়া কাপ জিতেছিলেন রোহিতরা। ভারতীয় দলের কাছে সবকিছুই এখন অতীত। বরং বাকি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নামার আগে দল যতটা সতর্ক থাকে, এই ম্যাচের আগেও টিমের মননটা একইরকম থাকছে। প্রতিপক্ষ নিয়ে সম্ভ্রম আছে। কিন্তু বাড়তি ভাবনা নেই। যাবতীয় ফোকাসের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন রোহিতরা নিজেরাই। বরং শ্রীলঙ্কা এখনও এশিয়া কাপ ফাইনাল ওরকম লজ্জাজনকভাবে হারের হ্যাংওভার থেকে যে বেরোতে পারেনি সেটা তাঁদের কোচের কথায় বোঝা যাচ্ছিল। ওই ম্যাচ থেকেই এখন তারা অনুপ্রেরণা খুঁজছেন। বলা হচ্ছে, ওরকম হারটাই এখন ক্রিকেটারদের কাছে সবচেয়ে বড় মোটিভেশন। এখানে ভাল কিছু পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে টিম সেই দুঃস্বপ্ন ভোলার অঙ্গীকার নিয়েছে।
[আরও পড়ুন: পাক ফৌজের হাতে হেনস্তার সম্ভাবনা, দ্রুত পাকিস্তান ছাড়ছেন আফগান শরণার্থীরা]
ইংল্যান্ড-বধের দু’দিনের মধ্যেই ফের নামতে হচ্ছে। আগের দিন মতো বৃহস্পতিবারও ঐচ্ছিক প্র্যাকটিস রাখা হয়েছিল ভারতের। এদিনও জনা সাতেক ক্রিকেটার এলেন। সেই তালিকায় রোহিত-বিরাট (Virat Kohli) দু’জনেই ছিলেন। ওয়াংখেড়ের উইকেট প্রথাগত যেরকম ব্যাটিং স্বর্গ হয়ে থাকে, এবারও সেরকমই হচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সতর্ক রোহিত (Rohit Sharma)। খুব ভাল করেই জানেন, যতই ব্যাটারদের কাছে স্বর্গভূমি হোক না কেন, বোলারদের জন্যও অনেক সময় কিছু ‘সারপ্রাইজ’ অপেক্ষা করে থাকে এখানে। ভারতীয় অধিনায়ক সেটা বলেও গেলেন। বলছিলেন, “দেখুন ওয়াংখেড়ের পিচ যথেষ্ট ভাল। এরকম নয় যে শুধু ব্যাটাররা সাহায্য পায়, তবে বোলারদের জন্যও অনেক কিছু থাকে। এর আগেও দেখেছি বোলাররা সঠিক জায়গায় বোলিং করতে পারলে ওরাও যথেষ্ট সাহায্য পায় এই উইকেট থেকে।”
[আরও পড়ুন: গাজা যুদ্ধে নিহত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইজরায়েলি সেনা, শোকস্তব্ধ ‘লিটল ইন্ডিয়া’]
কম্বিনেশন নিয়েও মনে হয় না খুব একটা বদল হবে। যদিও রোহিত স্পষ্ট করে কিছু বলে যাননি। শুধু বললেন, সব কিছু ভাবনাই তাঁদের মাথায় রয়েছে। ম্যাচের আগে এসে উইকেট দেখার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে মনে হয় না ভারতীয় দল (Indian Cricket Team) কোনও পরিবর্তনের রাস্তায় হাঁটবে। একটাই চিন্তা ছিল, যদি পেসারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো হয়। কিন্তু রোহিত এটাও পরিষ্কার করে দিয়ে গেলেন যে পেসারদের কেউই খুব একটা বিশ্রাম নিতে চায় না। যার অর্থ ওয়াংখেড়েতেও শামি-বুমরাহ-সিরাজ পেস-ত্রয়ী থাকছে। ব্যাটিংয়েও বদল হচ্ছে না। বরং শ্রেয়স আইয়ারের কাছে অ্যাসিড টেস্ট হতে চলেছে এই ম্যাচ। আসলে কয়েকটা ম্যাচে যেভাবে আউট হচ্ছেন, সেটা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে। বলা হচ্ছে হার্দিক পাণ্ডিয়া (Hardik Pandya) চোট সারিয়ে ফিরলে, শ্রেয়সকে বাইরে রাখা হোক। চাপটা যে অনেক ক্রমশ পাহাড়-প্রমাণ হচ্ছে, সেটা মুম্বইকর নিজেও খুব ভাল করেই জানেন। নিজের ঘরের মাঠে চাপের গন্ধমাদন সরিয়ে রানে ফিরতে পারেন কি না, সেটাই দেখার!
আজ বিশ্বকাপে
ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা
মুম্বই, দুপুর ২.০০, স্টার স্পোর্টসে