সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখরে সূর্যকিরণ এবারও পাঠিয়েছে আগমনি বার্তা। আশ্বিণের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড় থেকে সমতলে। পুজো পুজো আবহ রাজ্যের শৈলশহরে। কিন্তু তাতে আনন্দ কই? বরং একরাশ অনিশ্চয়তাই যেন এ বছরের সঙ্গী শিলিগুড়ির (Siliguri) মৃৎশিল্পীদের। করোনার কোপে এবার যে প্রতিমার বরাত কমে গিয়েছে এক ধাক্কায় অনেকটা।
শুধুমাত্র পাহাড় এবং সিকিমের পুজো বন্ধ হওয়ায় কোটি টাকা বেশি ক্ষতির মুখে শিলিগুড়ি কুমোরপাড়ার শিল্পীরা। সিকিমের আড়াইশোটি দুর্গাপূজায় (Durga Puja)প্রতিমা পাঠানো বাতিল। কালিম্পং, দার্জিলিং কার্শিয়াং, মিরিক মিলিয়ে আরও আড়াইশো প্রতিমার বরাত নেই এবার। শিলিগুড়ির কুমোরটুলির শিরদাঁড়া কার্যত ভেঙে গিয়েছে এই বিপুল সংখ্যক প্রতিমা বাতিল হওয়ায়। কোভিড থেকে সুরক্ষিত থাকতে সিকিম এমনিতেই এখনও পর্যন্ত রাজ্যের সীমানা প্রায় বন্ধ করে রেখেছে। ফলে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া অন্য কিছু পাঠানো যাচ্ছে না।
[আরও পড়ুন: ফেন্সিংয়ের বিরোধিতা, সকাল থেকে ফের আন্দোলনে শান্তিনিকেতনের মেলামাঠ বাঁচাও কমিটি]
করোনাতঙ্ক কাটিয়ে পাহাড়ে সব স্বাভাবিক খোলা থাকলেও পুজোর আড়ম্বর এবার নেই। মাত্র দু’একটি মন্দিরে পুজো, আর আছে রামকৃষ্ণ মিশনের দুর্গাবরণ। সেসব মূর্তি যাচ্ছে শিলিগুড়ি থেকেই। আর শিলিগুড়িতেও যে সব পুজো কমিটিগুলি নিয়ম রক্ষার পুজো করছে, তারা এবার অন্তত মূর্তিতে খরচ করতে রাজি নয়। বেশিরভাগই দাতব্য অনুষ্ঠানের উপর জোর দিচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে মুষড়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা। সরকারি সহায়তা না পেলে কোনভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে আক্ষেপ করেছেন শিলিগুড়ি কুমারটুলির সম্পাদক অশোক পাল। অশোকবাবু জানালেন, প্রতি বছর গড়ে ২০হাজার টাকা প্রতি প্রতিমা হিসেবে অন্তত ৫০০টি প্রতিমা পাহাড় এবং সিকিমে পাঠাতে হয়। এই হিসেব একেবারে বাঁধাধরা। সেখানে এই বিপুল ক্ষতি কী করে সামাল দেওয়া যাবে তা বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা।
[আরও পড়ুন: ‘পুজো আসছে বলে করোনাকে অবহেলা করা যাবে না’, প্রশাসনিক সভা থেকে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর]
এ বিষয়ে তাঁরা শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (SJDA) সহ-সভাপতি নান্টু পালের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে আবেদন জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন নান্টুবাবু। কুমোরটুলির শিল্পী ভবেশ পাল বলছেন, প্রতি বছর শুধুমাত্র দুর্গাপুজো বাদ দিয়ে অন্যান্য পুজোর প্রতিমা বিক্রি করে তাঁদের সারা বছরের খরচ ওঠে। দুর্গাপুজোর লাভটুকু দিয়ে তাঁরা একটু স্বাচ্ছন্দ্য খোঁজেন। এবার পুজোই হচ্ছে নমো নমো করে। ফলে সংসার টানাই এখন হয়ে পড়েছে কঠিন।
The post পাহাড়ে পার্বতীর পথ আটকেছে করোনাসুর, পুজোর প্রাক্কালে অলক্ষ্মীর ছাপ কুমোরটুলিতে appeared first on Sangbad Pratidin.