সংবাদ প্রতদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যুদ্ধ কী কখনও মানবিক হতে পারে? যুদ্ধের লক্ষ্যই তো ধ্বংস। যুদ্ধবাজ মৃত্যু আর রক্ত দিয়ে মাপে সাফল্য। সেখানে শিশু থেকে বুড়ো সব সমান, দয়ামায়ার প্রশ্ন নেই। তবু বেলারুশ সীমান্তে রাশিয়া-ইউক্রেনের (Russia-Ukraine War) শান্তি বৈঠকে একটি বিষয়ে একমত হয়েছিল দু’দেশের প্রতিনিধিরা, তা হল যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আটকে পড়া সাধারণ নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। এই অবসরে প্রাণ বাঁচল দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত ১২ জন শিশুর। যাদের চিকিৎসা চলছিল খারকভের হাসপাতালে। বিশেষ মেডিক্যাল ট্রেনে তাদের নিয়ে যাওয়া হল পোল্যান্ডে (Poland)।
খারকভ (Kharkiv) হল ইউক্রেনের চেন্নাই! উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার জন্য বিখ্যাত এ শহর। যদিও রুশ বাহিনীর লাগাতার হানায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে শহরের বিরাট অংশ। অভিযোগ, নির্বিচারে অসমারিক এলাকাতেও গোলা বর্ষণ করেছে পুতিনের বাহিনী। হতাহত হয়েছে বহু। মৃত্যু হয়েছে শিশুদেরও। এইসঙ্গে ভেঙে পড়েছে চিকিৎসার শহরের সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালগুলির উন্নত পরিকাঠামো। যুদ্ধের ভয়াবহতার পাশাপাশি কঠিন রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন অভিভাবকরা। কারণ সন্তানদের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এবার খানিক নিশ্চিন্ত হলেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন: জেলেনস্কিকে হত্যার ছক! ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের বাগানে আছড়ে পড়ল রুশ মিসাইল!]
বিশেষ মেডিক্যাল ট্রেনে ইউক্রেন থেকে ১২ জন শিশু ও তাঁদের অভিভাবকদের নিয়ে আসা হল পোল্যান্ডে। ওই ট্রেনে ছিলেন খারকভের বিশিষ্ট শিশুচিকিৎসক ইউজেনিয়া সুজকিউইচ-সহ বেশ কয়েক জন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। আপাৎকালীন চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল ট্রেনে। মানবিক এই উদ্যোগ সফল হল ইউজেনিয়ার নেতৃত্বে। সাহায্য করল বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত এক শিশুর মা জানান, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সন্তানের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পোল্যান্ড পৌঁছে খানিকটা নিশ্চিন্ত হতে পারলেন তিনি। এদিকে জানা গিয়েছে, খারকভ শহরে এখনও এমন ২০০ জন শিশু রয়েছে, যাদের দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া প্রয়োজন। ধাপে ধাপে তাদেরকেও নিরপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: চাপ বাড়ছে পুতিনের উপর, ব্যবসা বাঁচাতে যুদ্ধ বন্ধের আরজি রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল সংস্থার]
প্রসঙ্গত, রুশ সংবাদমাধ্যম ‘Sputnik’-কে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা এএনআই এদিন সকালেই জানিয়েছিল, ‘গ্রিনিচ মিন টাইম’ হিসেবে ইউক্রেনে সকাল ৬টা বা ভারতীয় সময়ে প্রায় সকাল ১১.৩০ থেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে রাশিয়া। নাগরিকদের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলি থেকে বেরিয়ে নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা সময় দিয়েছে পুতিনের বাহিনী।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ইউক্রেনে যুদ্ধের ময়দানে এখনও আটকে রয়েছেন প্রায় ৩ হাজার ভারতীয়। তাদের নিরাপদে দেশে ফেরাতে মরিয়া মোদি সরকার। গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানান, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে শেষ ভারতীয় নাগরিককে না ফেরানো পর্যন্ত চলবে ‘অপারেশন গঙ্গা’। এই মর্মে দুই পক্ষের কাছেই সাময়িক সংঘর্ষবিরতির আবেদন জানিয়েছে ভারত সরকার। এবার কি তবে নয়াদিল্লির আবেদনেই সাড়া দিল মস্কো?