সন্দীপ্তা ভঞ্জ: ‘ছিঃ!’ ছবিটা দেখার পর একটাই শব্দ ঘুরছে সংস্কৃতিমহলে। রবীন্দ্র ভারতীর এবারের দোল উৎসব সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। ছাত্রছাত্রীদের গায়ে আবির দিয়ে লেখা অশ্লীল শব্দ। সঙ্গে ‘বিকৃত’ রবীন্দ্র সংগীতে উদ্দাম নাচ। কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে আমাদের সংস্কৃতি? প্রশ্ন তুলেছেন ইমন চক্রবর্তী-সহ সংস্কৃতিমনস্কদের অনেকেই।
ফাগুন উৎসব মানেই রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রঙের মাখামাখি। প্রত্যেকবছরই শাড়ি, পাঞ্জাবী পরে আদ্যোপান্ত বাঙালিয়ানার সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বসন্ত উৎসব পালিত হয় এখানে। রংবেরঙের ছবি তুলতে ভীড় জমান ফটোগ্রাফাররাও। এবারেও তাই হয়েছে। কিন্তু জোর চর্চা শুরু হয়েছে গতকালের ভাইরাল হওয়া একটি ছবি ঘিরে। যেখানে পড়ুয়াদের পিঠে লেখা অশ্লীর শব্দ। যে ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে বাংলার সংস্কৃতিমহল।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়িকা তথা রবীন্দ্রভারতীর প্রাক্তনী ইমন চক্রবর্তীর কথায়, “ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ২০১১ সাল অবধি আমি পড়েছি ওখানে। যেহেতু আমি ছাত্র সংসদের দায়িত্বে ছিলাম, বসন্ত উৎসব আমরাই আয়োজন করতাম। আমাদের সময় কখনও এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমরা ঘটতেও দিইনি। আজ ৯ বছর পরে যখন দেখছি এরকম ঘটনা ঘটছে, প্রাক্তনী হিসেবে লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। আসলে বর্তমানে কোন জায়গায় পৌঁছেছে বাংলা সংস্কৃতি সেটা দেখলেই বোঝা যায়। আমি অত্যন্ত বিরক্ত। যারা এসব করেছে তাদের উদ্দেশে বলব, ‘ওদের চৈতন্য হোক’ এবং যিনি বাঙালিকে গোটা বিশ্বের দরবারে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তাঁকে নিয়ে এই ছেলে খেলাগুলো বন্ধ হোক এবার। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ করা উচিত। এদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।”
ইমন আরও বলেন, “রবীন্দ্রনাথের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরই গানকে বিকৃত করে একটি গান চলছে, এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ভীষণ লজ্জাজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ছাত্রছাত্রী এরকম কাণ্ড ঘটাবে বলে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় না। কঠোর নিয়ম করে দেওয়া উচিত যে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা কিংবা প্রাক্তনীরাই এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারবে। আগে জোড়াসাঁকোতে যে বসন্ত উৎসব হত, বিটি রোডের ক্যাম্পাসে সেই উৎসবের চেহারা বর্তমানে অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই পর্যায়ে যে পৌঁছবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি। যাঁরা ২০-২৫ বছর ধরে ওখানে শিক্ষকতা করছেন, তাঁদের কথা ভেবেই খারাপ লাগছে যে এরকম একটা ঘটনায় তাঁরা কতটা অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়েছেন।”
[আরও পড়ুন: ‘থাপ্পড়’ দেখে অভিনব উদ্যোগ রাজস্থান পুলিশের, মহিলাদের জন্য চালু হল বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর ]
“রুচিবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলা সংস্কৃতির জন্য অতন্ত্য আশঙ্কাজনক” মন্তব্য পরিচালক গৌতম ঘোষের। “ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ছবিটা দেখেই তো গা শিউরে উঠছে পড়তে গিয়ে। অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। পরের বছর থেকে এগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। পরশু দিনই গিয়েছিলাম ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে। গিয়ে দেখলাম কত ভাল, সুন্দর পরিবেশ। আর গতকালের ঘটনাটা দেখার পর সত্যিই খুব খারাপ লাগছে।” “একটা বিশ্ববিদ্যালয়, পড়ার জায়গা সেখানে কীভাবে এরকম অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করা যেতে পারে?” প্রশ্ন তুলেছেন খ্যাতানামা সংগীত শিল্পী শ্রাবণী সেন।
[আরও পড়ুন: ‘করোনা বিদায় না নেওয়া অবধি ‘সালাম-নমস্তে’ জানান’, মারণ রোগ এড়াতে পরামর্শ সলমনের]
The post ‘লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে’, রবীন্দ্রভারতীর দোল উৎসব বিতর্কে গর্জে উঠলেন প্রাক্তনী ইমন appeared first on Sangbad Pratidin.