সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিচ্ছেন ইমরান খান। শুক্রবার পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নিয়ম মেনে ভোটাভুটি হয়। প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য একদিকে ছিলেন ইমরান। তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধী প্রার্থী ছিলেন শাহবাজ শরিফ। শাহবাজ শরিফ হলেন জেলবন্দি প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই। শাহবাজ পাঞ্জাব প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং এখন পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) দলের সুপ্রিমো।
এদিন ইমরান পান ১৭৬টি ভোট। শাহবাজ পান মাত্র ৯৬টি ভোট। ফলে অবিসংবাদিতভাবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ইমরান। ভোটদানে বিরত ছিলেন বিলাবল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নির্বাচিত এমপি’রা। ফলে কার্যত ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে জিতে যান ইমরান। তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ছিল ১৭২ জন এমপি’র সমর্থন। তিনি নিশ্চিত করেছেন ১৭৬ জনের সমর্থন। পাক পার্লামেন্টে ভোটাভুটি শুরুর আগে এদিন শাহবাজ শরিফ ও তাঁর দলের এমপি’রা বেনজির ভুট্টোর পুত্র বিলাবলকে বার বার অনুরোধ করেন যাতে বিলাবলের দলের এমপি’রা কেউ যেন অনুপস্থিত না থাকেন। তাঁরা যেন শাহবাজ শরিফের পক্ষেই ভোট দেন। কিন্তু বিলাবল ভুট্টো ও তাঁর দলের নির্বাচিত এমপি’রা ভোটদানে বিরত থাকেন এবং মূল কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান। ফলে ইমরান সহজেই জিতে যান।
[ধ্বংস হবে উড়ন্ত শত্রু, গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বারাক-৮ বসাচ্ছে ইজরায়েল]
পাক সংবাদমাধ্যমগুলি জানিয়েছে, ইমরানকে সমর্থন করে ভোট দিয়েছেন ছোট দলগুলির এমপি’রা। যেমন, মুত্তাহিদা কোয়ামি মুভমেন্ট, বালুচিস্তান আওয়ামি পার্টি, বালুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি, পাকিস্তান মুসলিম লিগ (কায়েদে আজম), জামওয়ারি ওয়াতন পার্টি, গ্র্যান্ড ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স।
শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নব নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। তার পরই শুরু হয় ভোটাভুটি। ৩৪২ আসনের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ১৭২ হল ম্যাজিক ফিগার।
এদিকে, ইমরানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে পাকিস্তানে পৌঁছে গেলেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার নভজ্যোত সিং সিধু।
অন্যদিকে, চলতি বছরের শেষে সার্ক সম্মেলনের আয়োজন করার জন্য কোমর বাঁধছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের শীর্ষ কূটনীতিকদের উদ্ধৃত করে এমন খবর জানিয়েছে পাক সংবাদমাধ্যমগুলি। সূত্রের খবর, বিষয়টি ইমরান খানের ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে একাধারে মর্যাদা রক্ষা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির কাছে ইমরানের বার্তা পৌঁছানোর একটা প্রধান রাস্তা। ২০১৬-য় ভারতের সার্বিক চেষ্টায় ভেস্তে গিয়েছিল সার্ক সম্মেলন। উরি হামলার জেরে বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলিকে সঙ্গে নিয়ে সার্ক বয়কট করেছিল ভারত।
[ইন্দো-পাক মৈত্রীতেই যোগ্য সম্মান বাজপেয়ীর, শান্তির কামনায় ইমরান]
প্রশ্ন হল, এ বারের সার্কে যোগ দিতে পাকিস্তানের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসলামাবাদে যাবেন কি না। এখনও পর্যন্ত যা খবর, ইমরানের পক্ষ থেকে শীর্ষ পর্যায়ের কোনও রাজনৈতিক নেতাকে দূত হিসেবে ভারতে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তাঁদের দিক থেকে ভারতকে সার্কের মঞ্চে হাজির করতে সবরকম চেষ্টা করা হবে। ইমরান দুনিয়াকে দেখাতে চাইবেন, তাঁরা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ফেরাতে সবরকম চেষ্টা করছেন। কিন্তু সাউথ ব্লক সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত সার্কে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে অনীহা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির।
নভেম্বরে গোটা দেশে ভোটের মরসুম শুরু হয়ে যাবে। তিনটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন এবং তার পরেই লোকসভা। সূত্রের মতে, এমন স্পর্শকাতর সময়ে ইসলামাবাদে গিয়ে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চাইছেন না প্রধানমন্ত্রী। এখনও পর্যন্ত দিল্লির ঘোষিত অবস্থান- সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। বিদেশমন্ত্রকের এক অফিসারের দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হয়তো পাকিস্তানে সার্ক সম্মেলন করে ফিরলেন। তার পরেই দেশের কোথাও অথবা কাশ্মীরেই সন্ত্রাসবাদী হামলা হল। তাতে সরকারের চরম মুখ পুড়বে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল পাঠানকোটের সেনা ছাউনিতে হামলার সময়ে।’’ পাঠানকোট হামলার এক সপ্তাহ আগে বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে বিনা আমন্ত্রণেই মোদি গিয়েছিলেন লাহোরে তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পারিবারিক অনুষ্ঠানে।
[কিমের বন্ধু! ট্রাম্প প্রশাসনের কোপের মুখে একাধিক রুশ ও চিনা বাণিজ্যিক সংস্থা]
The post আজ ইমরানের স্বপ্নপূরণ, বন্ধুর শপথগ্রহণে পাশে থাকতে হাজির সিধু appeared first on Sangbad Pratidin.