সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ও সেই সময় অখ্যাত। বয়স মাত্র সাত। বাবা লখবিন্দর সিংয়ের (Lakhwinder Singh) হাত ধরে সেই প্রথম বার মোহালি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে (Mohali Cricket Stadium) পা রাখা। এরপর ক্রিকেট পাঠ নেওয়ার সময় থেকে এই মাঠের প্রতিটা ঘাস, ড্রেসিংরুম শুভমান গিলের (Shubman Gill) কাছে নিজের ঘরের মতো হয়ে গিয়েছিল। পাঞ্জাব ক্রিকেট সংস্থার (Punjab Cricket Association) কর্তা থেকে মাঠের মালি সবাইকে তিনি চেনেন। আইপিএল-এর (IPL) মঞ্চে এই মাঠে রান পেয়েছেন। আর এবার এমন ভেন্যুতে প্রথম বার আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেই নিজের নামের প্রতি সুবিচার করলেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) তরুণ ওপেনার। ৬৩ বলে ৭৪ রানের ইনিংস অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে প্রথম একদিনের ম্যাচ পাঁচ উইকেটে জেতাতে বড় সাহায্য করল।
এহেন শুভমান ম্যাচের শেষে বলেছেন, “আমার বয়স তখন মাত্র সাত। সেই সময় বাবার সঙ্গে মোহালি স্টেডিয়ামে পা রেখেছিলাম। এরপর থেকে এই স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে অনেক ম্যাচ দেখেছি। আর ম্যাচ দেখার সময় সবসময় ভাবতাম, একদিন এই মাঠের পিচে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলব। এবং আমাকে দেখার জন্য গ্যালারি ভরে যাবে। আইপিএল-এর মঞ্চে এখানে রান পেয়েছি। তবে জাতীয় দলের হয়ে রান করার অনুভূতি সবসময় আলাদা। টিম ইন্ডিয়ার হয়ে এখানে প্রথম বার খেলতে নেমেই রান পেলাম। আমার স্বপ্ন সত্যি হল।”
[আরও পড়ুন: শুভমান-রুতুরাজের পর রাহুল-সূর্যর দাপট, অজিদের পাঁচ উইকেটে হারাল টিম ইন্ডিয়া]
আধুনিক যুগের একদিনের ক্রিকেটে ২৭৬ রান চেজ করা খুব কঠিন নয়। তেমনই প্যাট কামিন্স (Pat Cummins)-অ্যাডাম জাম্পা (Adam Zampa) সম্বলিত বোলিং অ্যাটাককে হেলাফেলা করা যায় না। তবুও বিপক্ষের বোলিংকে বুঝে প্রথম উইকেটে রুতুরাজ গায়কোয়াড়কে (Ruturaj Gaikwad) সঙ্গে নিয়ে ১৪২ রান তুলে দিয়েছিলেন শুভমান। আর সেখানেই ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা নির্ধারিত হয়ে যায়। শুভমান এমনিতেই দারুণ ছন্দে আছেন। অন্যদিকে রুতুরাজের এটি ছিল কেরিয়ারের তৃতীয় একদিনের ম্যাচ। এরমধ্যে আবার অজিদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ বলে কথা। তবে তাঁর মধ্যে কোনও জড়তা দেখা গেল না। রুতুরাজ ৭৭ বলে ৭১ রানে ফিরে যান। মারলেন ১০টি চার।
স্বভাবতই নতুন পার্টনার রুতুরাজকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন তিনি। শুভমান যোগ করেছেন, “আন্তর্জাতিক মঞ্চে রুতুরাজ নতুন হলেও, ঘরোয়া ক্রিকেট ও আইপিএল-এ ও ধারাবাহিক ভাবে রান করেছে। আর তাই ও শুরু থেকেই ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করে গেল। এটা আমাদের জন্য খুব ভালো লক্ষ্মণ।”
[আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ভারত, দুনম্বরে নেমে গেল পাকিস্তান]
তাঁকে ‘নেক্সট বিগ থিং ইন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট’ বলা হচ্ছে। আর কয়েক দিন পরেই শুরু হয়ে যাবে বিশ্বকাপ। ২০১১ সালের পর ফের ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জিততে হলে এহেন ফর্মে থাকা শুভমানকে ধারাবাহিক ভাবে রান করতেই হবে। শুভমানও আগ্রাসী মেজাজেই রান করার জন্য মুখিয়ে আছেন।
বলছেন, “আমি জানি আমার শক্তি কতটা। ডিফেন্সের পাশাপাশি আমি দরকারে আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করতে পারি। তাই বিশ্বকাপে দলের প্রয়োজন অনুসারে ব্যাট করতে চাই। সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু হয়ে গিয়েছে।”
চলতি বছরটা শুভমানের দারুণ কাটছে। ভারতের তরুণ ওপেনার ইতিমধ্যেই চলতি বছর ১৯টি একদিনের ম্যাচে ১১২৬ রান করে ফেলেছেন। গড় ৭০.৩৭। স্ট্রাইক রেট ১০৪.৮৪। সঙ্গে রয়েছে ৪টি শতরান ও ৫টি অর্ধ শতরান। এদিকে একদিনের কেরিয়ারে ৩৪টি ম্যাচে তাঁর রান ১৮১৩। গড় ৬৪.৭৫। স্ট্রাইক রেট ১০২.৬০। সঙ্গে রয়েছে ৫টি শতরান ও ৯টি অর্ধ শতরান। সর্বাধিক নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০৮ রান। এহেন শুভমানের উপর কাপ যুদ্ধে টিম ম্যানেজমেন্ট ভরসা করে থাকবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।