সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পিঠের চোট সারিয়ে অনেক মাস পর ফিরেছিলেন এশিয়া কাপে (Asia Cup 2023) । কিন্তু সুপার ফোরে পাকিস্তানের (Pakistan) বিরুদ্ধে নামার কিছুক্ষণ আগেই ঘটেছিল অঘটন! পিঠের পুরনো চোট আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। ফলে তাঁর আর মাঠে নামা হয়নি। এরপর এল অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে প্রথম একদিনের ম্যাচ। ক্রিজে গিয়েও সুবিধা করতে পারেননি। নিজের ভুল ও শুভমান গিলের (Shubman Gill) সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির জন্য রান আউট হয়েছিলেন। স্বভাবতই বিশ্বকাপের (ICC ODI World Cup 2023) ঠিক আগে শ্রেয়স আইয়ারের (Shreyas Iyer) লাগাতার পাওয়া চোট ও মানসিকতা নিয়ে উঠে গিয়েছিল প্রশ্ন। তবে ইন্দোরের (Indore) হোলকার স্টেডিয়ামের (Holkar Stadium) বাইশ গজের সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিলেন শ্রেয়স। ১১ মাস পর একদিনের ক্রিকেটে করলেন তৃতীয় শতরান। টিম ইন্ডিয়ার (Team India) তারকা ব্যাটার বুঝিয়ে দিলেন কেন তাঁর উপর অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) ও হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid) ভরসা রেখেছিলেন। তবে এদিন ৯০ বলে ১০৫ রান করলেও শ্রেয়সকে চোট-আঘাত পিছু ছাড়েনি।
সেই ঘটনায় প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রীর কাছে তুলে ধরলেন শ্রেয়স। সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি বলেন, “আমার সব নজর ছিল ক্র্যাম্পের দিকে। মাঠে প্রচণ্ড গরম। সেইজন্য বারবার ক্র্যাম্প লাগছিল। শতরান করার একটা সময় তো ব্যাট ধরতেই পারছিলাম না। হাত প্রায় অসাড় হয়ে আসছিল। একবার প্রায় কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে যাচ্ছিলাম।” কিন্তু কীভাবে চোটের মোকাবিলা করে বড় রান গড়লেন? শ্রেয়স যোগ করেন, “ফের মাঠে নামার পরেই ঠিক করে নিয়েছিলাম এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। সেইজন্য আরও মারমুখী মেজাজে রান তোলা শুরু করলাম। আশাকরি এরপর বড় রান করতে না পারলেও দলের সবার বিশ্বাস ও ভরসার দাম দিতে পারলাম।”
[আরও পড়ুন: স্বস্তি শ্রেয়সের শতরান, সেঞ্চুরি শুভমানেরও, অজিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৩৯৯ রানের রেকর্ড ভারতের]
এদিকে কাপ যুদ্ধ যত এগিয়ে আসছে তত চিন্তা বাড়ছে রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) ও রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid)। এটা অবশ্য ভালো চিন্তা। এবার ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তা এবার বাড়িয়ে দিলেন শ্রেয়স। ২০২২ সালে ৯ মার্চ রাঁচির বাইশ গজে দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) বিরুদ্ধে ১১১ বলে ১১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। আর এবার তিনি থামলেন ৯০ বলে ১০৫ রানে। মারকুটে ইনিংস ১১টি চার ও ৩টি ছক্কা দিয়ে সাজানো ছিল। নিজের ইনিংস নিয়ে শ্রেয়সের ব্যাখ্যা, “যে যাই বলুক, আমি বাইরের কথায় কান দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না। আর তাই শুরুর দিকে ‘ভি’-তে খেলতে চেয়েছিলাম। এবং বলকে জোরে না মেরে শুধু টাইমিং-এর উপর খেলতে চেয়েছিলাম।
দ্বিতীয় ম্যাচে অধিনায়কত্ব করতে নেমেছিলেন স্টিভ স্মিথ। তিনি টসে জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন। যদিও এদিন রুতুরাজ গায়কোয়াড় বড় রান পেলেন না। ৩.৪ ওভারের মাথায় জশ হ্যাজেলউডের বাইরে যাওয়া ডেলিভারিতে খোঁচা দেন রুতুরাজ। প্রথম স্লিপের দিকে উড়ে দুরন্ত ক্যাচ ধরেন অ্যালেক্স ক্যারি। ফলে ১৬ রানে ১ উইকেট হারায় ভারত। আর এরপর বাইশ গজে বিপক্ষের বোলারদের বধ করতে শুরু করে দিলেন শুভমান গিল ও শ্রেয়স। এমনিতেই শুভমান চলতি বছর দারুণ ছন্দে রয়েছেন। দেখতে দেখতে একদিনের কেরিয়ারে ষষ্ঠ শতরান সেরে ফেললেন। যার মধ্যে চলতি বছরেই সেরে ফেললেন পঞ্চম শতরান। এদিন থামলেন ৯৭ বলে ১০৪ রানে।
স্বভাবতই এহেন শুভমানকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত শ্রেয়স। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “শুভমানের সঙ্গে ব্যাট করার অভিজ্ঞতা দারুণ। শুরু থেকে আমি আগ্রাসী মেজাজে থাকলেও শুভমান নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিল। তবে একবার সেট হয়েই চালিয়ে খেলতে থাকে। এরপর বাকিটা তো সবাই দেখেছে। আমাদের জুটির জন্যই বাকি ব্যাটাররা খলা মনে রান তুলতে পেরেছিল।”
[আরও পড়ুন: বিরাট-রোহিত নন, কাপ যুদ্ধে কার উপর বাজি ধরলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট?]
শ্রেয়সের ব্যাটিং নিয়ে কারও মনে কোনও সন্দেহ ছিল না। প্রশ্ন উঠেছিল বারবার চোট পাওয়া নিয়ে। এবার শতরান হাঁকিয়ে তিনি নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করে দিলেন। একইসঙ্গে স্বস্তি পেল টিম ম্যানেজমেন্ট। স্বভাবতই বিশ্বকাপে শ্রেয়সের এমন ফর্ম দেখার অপেক্ষায় রয়েছে গোটা দেশ।