ভারত: ৩৯৯/৫ (শ্রেয়স ১০৫, শুভমান ১০৪, সূর্য কুমার ৭২*, রাহুল ৫২)
অস্ট্রেলিয়া: ২১৭ (অশ্বিন ৩/৪১, জাদেজা ৩/৪২, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা ২/৫৬)
ভারত ৯৯ রানে জয়ী
২-০ ব্যবধানে এগিয়ে টিম ইন্ডিয়া
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৩৯৯ রান চেজ করে অস্ট্রেলিয়ার (Australia) পক্ষে জেতা সম্ভব নয়। ভারতের ইনিংস শেষ হওয়ার পর সেটা বোঝা গিয়েছিল। আর সেটাই হল সিরিজের দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে ব্যাটে-বলে দুরন্ত পারফরম্যান্স করে অজিদের …রানে উড়িয়ে দিল টিম ইন্ডিয়া (Team India)। বিরাট কোহলি (Virat Kohli) -রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) নেই। তবে তাঁদের অভাব বুঝতে দিলেন না বাকিরা।তাই এমন দাপুটে জয়ের সুবাদে বিশ্বকাপের আগে টিম ইন্ডিয়ার ড্রেসিংরুমে বাড়তি অক্সিজেন যোগাবে সেটা আর নতুন ভাবে বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্যাটে শুভমান গিল (Suhbman Gill) ও শ্রেয়স আইয়ার (Shreyas Iyer) দাপট দেখানোর পর বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে বল হাতে ম্যাজিক দেখালেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin)। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিলেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা (Prasidh Krishna) ও রবীন্দ্র জাদেজা (Ravindra Jadeja)। তাই একপেশে ম্যাচ ৯৯ রানে জিতে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যেতে একেবারেই বেগ পেতে হল না।
একে তো মাথার উপর ৪০০ রানের বোঝা, এরমধ্যে নতুন বল হাতে নিয়েই আগুন ঝরাতে শুরু করে দেন প্রসিদ্ধ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে ফেরালেন ম্যাথু শর্ট এবং স্টিভ স্মিথকে। মাত্র ৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে অজিরা ব্যাপক চাপে। যদিও এরপর কিছুটা লড়াই শুরু করেন ডেভিড ওয়ার্নার এবং মার্নাস লাবুশান। তবে শেষরক্ষা হয়নি। সন্ধ্যা ৭:২২ মিনিট। বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এর এক ঘণ্টার বেশি সময় মাঠে নামে দুই দল। রাত ৮:৩৫ মিনিট থেকে খেলা শুরু হওয়ার জন্য অজিদের টার্গেট হয়ে যায় ৩৩ ওভারে ৩১৭ রান!
আর এরপরেই অশ্বিনের খেল শুরু। গত ম্যাচে ৪৭ রানে পেয়েছিলেন মাত্র ১ উইকেট। নিজের পারফরম্যান্সে একেবারেই সন্তুষ্ট ছিলেন। তবে এবার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। স্পিনের ফাঁদে পড়েন ওয়ার্নার থেকে লাবুশান। অশ্বিনকে ফর্মে ফিরতে দেখে জাদেজাও বাইশ গজে ম্যাজিক দেখাতে শুরু করেন। দুই অভিজ্ঞ স্পিনারের দাপটে মাত্র ২১৭ রানে গুটিয়ে যায় অজিদের ইনিংস। ওয়ার্নার ৫৩ ও শেষ দিকে সন অ্যাবট ৪৫ রানে অপরাজিত থাকলেও সেটা ম্যাচ জয়ের পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। অশ্বিন ৪১ রানে ৩ উইকেট এবং জাড্ডু ৪২ রানে ৩ উইকেট নেন। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার ঝুলিতে এল ৫৬ রানে ২ উইকেট।
তবে বিশ্বকাপ যত এগিয়ে আসছে তত চিন্তা বাড়ছে রোহিত ও রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid)। এটা অবশ্য ভালো চিন্তা। এবার ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তা এবার বাড়িয়ে দিলেন শ্রেয়স। ২০২২ সালে ৯ মার্চ রাঁচির বাইশ গজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১১১ বলে ১১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। আর এবার তিনি থামলেন ৯০ বলে ১০৫ রানে। মারকুটে ইনিংস ১১টি চার ও ৩টি ছক্কা দিয়ে সাজানো ছিল। এদিকে ফর্ম বজায় রেখে শুভমানের ব্যাট থেকে এল ষষ্ঠ শতরান। পঞ্জাব তনয়ের ব্যাট থেকে এল ৯৭ বলে ১০৪ রান। মারলেন ৬টি চার ও ৪টি ছক্কা। শ্রেয়স ও শুভমান দ্বিতীয় উইকেটে ২০০ রান তুলে দেওয়ার জন্যই নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৫০ রান তুলে দিল টিম ইন্ডিয়া। অবশ্য ‘স্টপগ্যাপ’ অধিনায়ক লোকেশ রাহুলও পিছিয়ে ছিলেন না। তিনি ৩৮ বলে ৫২ রান করেন। সূর্য কুমার যাদব (Suryakumar Yadav) গত ম্যাচের ফর্ম বজায় ৩৭ বলে ৭২ রানে অপরাজিত রইলেন। ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৯৯ রান তুলে দিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া।
[আরও পড়ুন: চোট নিয়েই কাপ যুদ্ধের আগে মারকুটে মেজাজে শতরান! কীভাবে সম্ভব হল? জানালেন শ্রেয়স]
একদিনের ক্রিকেটে ভারতের সর্বাধিক রান ওয়েস্ট ইন্ডিজের (West Indies) বিরুদ্ধে। ২০১১ সালে এই ইন্দোরের (Indore) মাঠেই ৫ উইকেটে সর্বাধিক ৪১৮ রান করেছিল টিম ইন্ডিয়া। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এতকাল সর্বোচ্চ রান ছিল ৬ উইকেটে ৩৮৩। ২০১৩ সালে বেঙ্গালুরুতে (Bengaluru) সেই ঘটনা ঘটেছিল। আর এবার ১০ বছর পর অজিদের বিরুদ্ধে সেই রেকর্ড ভেঙে দিল ভারত। ব্যাটারদের আগ্রাসী মেজাজের দাপটে সেই ইন্দোরের হোলকার স্টেডিয়ামে (Holkar Stadium) পাঁচবারের বিশ্বজয়ী দলের বিরুদ্ধে ৫ উইকেটে সর্বাধিক ৩৯৯ রান তুলে দিল ‘মেন ইন ব্লু’ ব্রিগেড। সেই রান চেজ করে সমতা ফেরানো যে আকাশকুসুম কল্পনা, সেটা আগে থেকেই জানা ছিল।
এদিন প্যাট কামিন্স বিশ্রাম নিয়েছিলেন। ফলে দ্বিতীয় ম্যাচে অধিনায়কত্ব করতে নেমেছিলেন স্টিভ স্মিথ। তিনি টসে জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন। যদিও এদিন রুতুরাজ গায়কোয়াড় বড় রান পেলেন না। ৩.৪ ওভারের মাথায় জশ হ্যাজেলউডের বাইরে যাওয়া ডেলিভারিতে খোঁচা দেন রুতুরাজ। প্রথম স্লিপের দিকে উড়ে দুরন্ত ক্যাচ ধরেন অ্যালেক্স ক্যারি। ফলে ১৬ রানে ১ উইকেট হারায় ভারত।
তবে এরপর শুরু হল অজি বোলারদের সংহার করার পালা। গত ম্যাচে অর্ধ শতরান করা অনেকটা শান্ত ছিলেন। তবে ক্রিজে এসেই চালিয়ে ব্যাট করতে থাকেন শ্রেয়স। পিঠের চোটের জন্য অনেক মাস তাঁকে বাইরে থাকতে হয়েছিল। আর আগে কাঁধের চোট তাঁর কেরিয়ারের অনেক ক্ষতি করেছিল। সেই শ্রেয়স দীর্ঘ ১১ মাস পর একদিনের কেরিয়ারের তৃতীয় শতরান পেলেন। বিশ্বকাপের আগে এমন পারফরম্যান্স শ্রেয়সকে অবশ্যই আত্মবিশ্বাস যোগাবে।
ভারতের মিডল অর্ডারে কারা খেলবেন সেটা নিয়ে চলছে লড়াই। লোকেশ রাহুল রান পেয়েছেন। তাঁর খেলা নিশ্চিত। ঈশান কিষানও ফর্মে আছেন। গত ম্যাচে ৪৯ বলে ৫০ রান করে দলকে জিতিয়েছেন সূর্যকুমার যাদব। এবার শতরান করলেন শ্রেয়সও। এই চার জনের মধ্যে কোন দু’জনকে চার ও পাঁচ নম্বরে খেলানো হবে সেটা নিয়ে কিন্তু জোর আলোচনা হবেই।
[আরও পড়ুন: বিরাট-রোহিত নন, কাপ যুদ্ধে কার উপর বাজি ধরলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট?]
অর্ধশতরান করার পরে রানের গতি আরও বাড়ে শ্রেয়সের। অজি পেসারদের গতি ব্যবহার করে উইকেটের সামনে তিনটি ছক্কা মারেন শ্রেয়স। তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন শুভমান। দু’জনের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছিল।
এদিকে কাপ যুদ্ধে যত এগিয়ে আসছে ততই আরও আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করছেন শুভমান। প্রথম ম্যাচে শতরান ফিরে এলেও এবার তাঁর ব্যাট থেকে এল ফের শতরান। ফিরলেন ১০৪ রানে। ক্যামেরন গ্রিনের বলে তুলে মারতে গিয়েছিলেন তিনি। ব্যাটের কানায় লেগে বল আকাশে উঠে যায়। ক্যাচ ধরেন উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারে।
তবে তাই বলে রানের গতি থেমে থাকেনি। লোকেশ রাহুল, ঈশান (১৮ বলে ৩১) ও শেষ দিকে সূর্য কুমার যাদবও। ফলে অজিদের টার্গেট দাঁড়িয়েছিল ৪০০ রান। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা জোড়া ধাক্কা দিয়ে বিপক্ষের ব্যাটিংকে শুরুতেই কাঁপিয়ে দেন। এরপর বৃষ্টি থামলে অজিদের বুঝে নেন অশ্বিন। ফলে ২৮.২ ওভারে ২১৭ রানে বিপক্ষকে অল আউট করে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে থাকার সুবাদে বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিল বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাবিহীন ভারত।