ভারত (প্রথম ইনিংস) ৩২৬-৫ (রোহিত ১৩১, জাদেজা অপরাজিত ১১০, সরফরাজ ৬২, মার্ক উড ৩-৬৯)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অবশেষে কাটল খরা। ১০ ইনিংস পর টেস্টে শতরান করলেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। গত বছর জানুয়ারি মাসে শেষ বার সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন হিটম্যান। তারপর থেকে বড় রান পাচ্ছিলেন না তিনি। প্রায় এক বছর পরে রাজকোটে রাজ করে গেলেন হিটম্যান। রোহিত খেললেন ১৩১ রানের ক্যাপ্টেন্স নক।
চোটের জন্য দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে (IND vs ENG) খেলতে পারেননি রবীন্দ্র জাদেজা (Ravindra Jadeja)। চোট সারিয়ে ফিরে রাজকোটে অন্য অবতারে ধরা দিলেন জাদেজা। ঘরের মাঠে দিনের শেষে ১১০ রানে অপরাজিত জাড্ডু। জোড়া সেঞ্চুরিতে রাজকোট টেস্টের প্রথম দিনের শেষে ভারত বেশ ভালো জায়গায়। প্রথম দিনের শেষে ভারতের রান ৫ উইকেটে ৩২৬। জাদেজার সঙ্গে ক্রিজে রয়েছেন কুলদীপ যাদব (১)।
জোড়া শতরানকারী রোহিত ও জাদেজার পাশাপাশি চমকে দেন সরফরাজ খান। বৃহস্পতিবার অভিষেক ঘটে সরফরাজ খান ও ধ্রুব জুড়েলের। ঘরোয়া ক্রিকেটে ঝুড়ি ঝুড়ি রান করেও দীর্ঘদিন জাতীয় দলের দরজা বন্ধই ছিল সরফরাজের জন্য। অবশেষে সুযোগ এল। দেশের হয়ে টেস্ট খেলতে নামলেন সরফরাজ খান (Sarfaraz Khan)। জাতীয় দলের জার্সি পরে ছেলেকে খেলতে দেখে আবেগে চোখের জল সামলাতে পারলেন না গর্বিত বাবা। শুরুতে আবেগী দৃশ্যের জন্ম দিয়েছিলেন সরফরাজ। সরফরাজ টেস্ট ক্যাপ পেতেই আনন্দে কেঁদে ফেলেন তাঁর বাবা ও স্ত্রী। মুম্বইকরের পাওয়া টেস্ট ক্যাপে চুমু খান। স্ত্রীর চোখের জল মুছিয়ে দেন সরফরাজ। বাবার জন্য এদিন বিশেষ জার্সি পরে নামেন তিনি। নওশাদ নামের আদলে নয় ও সাত অর্থাৎ ৯৭ নম্বর জার্সি গায়ে জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে নামলেন সরফরাজ খান।
[আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রোহিতদের হেডস্যর রাহুল দ্রাবিড়, স্পষ্ট করে দিলেন জয় শাহ]
রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হওয়ার পরে সরফরাজ (৬২) সেরকমই আবেগের চাদর ছড়িয়ে দিয়ে গেলেন মাঠে। তাঁকে রান আউট হতে দেখে ড্রেসিং রুমে বসে থাকা রোহিত শর্মা টুপি ছুড়ে ফেলে দিলেন। স্ট্যান্ডে বসে থাকা সরফরাজের স্ত্রী ও বাবা হতচকিত হয়ে যান। সরফরাজ যেভাবে এগোচ্ছিলেন, তাতে সেঞ্চুরি হয়তো পেয়েও যেতেন। কিন্তু রান আউট হয়ে ফেরার অব্যবহিত পরে সেঞ্চুরি হাঁকান জাদেজা। সেঞ্চুরি করার পরে তিনিও ভালো করে সেলিব্রেট করতে পারলেন না। সরফরাজের রান আউট জাদেজাকেও নাড়া দিয়ে যায়।
এদিন টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন রোহিত শর্মা। গত ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো যশস্বী জয়সওয়াল এদিন সফল হননি। রোহিতের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে যশস্বী করেন মাত্র ১০ রান। প্রথম উইকেট ভারত হারায় ২২ রানে। শুভমান গিল টেস্টে ফের ব্যর্থ। এদিন খাতা খুলতে পারেননি তিনি। রজত পাতিদার মাত্র ৫ রানে আউট হন। ভারত হঠাৎই চাপে পড়ে যায়। ৩৩ রানে তিন উইকেট খুইয়ে ভারত তখন প্রবল চাপে। এরকম সময়ে রোহিত ও জাদেজা দলের হাল ধরেন। রক্তের গন্ধ পাওয়া ইংল্যান্ড বোলারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এই দুই ব্যাটার। শুরুর বিপর্যয় সামলে উঠে ধীরে ধীরে পালটা মারের খেলায় নেমে পড়েন। রাজকোটে নামার আগে গত চার ইনিংসে রোহিতের ব্যাট থেকে এসেছিল মাত্র ৯০ রান। গড় ২২.৫। সর্বোচ্চ ৩৯। সমালোচনা ধেয়ে এসেছিল। সেই রোহিত এদিন নিন্দুকদের জবাব দিলেন। অবশ্য ২১ রানের মাথায় জীবন ফিরে পান রোহিত। তাঁর ক্যাচ ছাড়েন জো রুট। জীবন ফিরে পাওয়ার পরে রোহিত আক্রমণের রাস্তা নেন। চা বিরতির পরেই শতরান করেন মুম্বইকর। ১৯৬ বলে ১৩১রানের ইনিংস খেলে আউট হন হিটম্যান। ভারত অধিনায়কের ইনিংসে সাজানো ছিল ১৪টি বাউন্ডারি ও ৩টি ওভার বাউন্ডারি। রোহিত ও জাদেজা ২০৪ রান জোড়েন। রোহিত ফেরার পরে ইংল্যান্ড ম্যাচে ফিরতেই পারত। নবাগত সরফরাজকে তুলে নিয়ে ভারতের ব্যাটিংয়ের উপরে আরও চাপ বাড়াতেই পারত ইংল্যান্ডের বোলাররা। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। কারণ সরফরাজ রুখে দাঁড়ান। একদিকে জাদেজা, অন্যদিকে সরফরাজ ইংল্যান্ড বোলারদের বিরুদ্ধে সাবলীল ভাবে ব্যাট করতে থাকেন। জাদেজা ও সরফরাজ ৭৭ রান জোড়েন জুটিতে। রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন সরফরাজ। তার পরেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় মাঠে। দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নেমে জাদেজাকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। তিনিই ভরসা জোগাচ্ছেন ভারতীয় দলকে।