সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কেন্দ্রের তৃতীয় এনডিএ সরকার শরিক নির্ভর হয়ে যাওয়ার পর অনেকে আশঙ্কা করছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে সংস্কারমুখী প্রশাসনের কথা বলেন, সেই লক্ষ্যে এগোনো তাঁর পক্ষে হয়তো আর সম্ভব হবে না। কিন্তু লালকেল্লায় দেশের ৭৮ তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর সরকার পূর্বঘোষিত সংস্কারের পথ থেকে সরবে না। লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে প্রথমে তিনি ঘোষণা করলেন, দেশের প্রয়োজন ধর্মনিরপেক্ষ দেওয়ানি বিধি। তারপর জোরাল সওয়াল করলেন এক দেশ এক ভোটের পক্ষেও।
প্রধানমন্ত্রী বললেন, "আজ দেশে যে কোনও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি নির্বাচনের জন্য থেমে যায়। প্রতি তিন মাস অন্তর কোথাও না কোথাও ভোট হচ্ছে। কাজ শুরু হয়, ভোট আসে, থমকে যায়। বারবার নির্বাচন উন্নয়নের পথে বাধা।" প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমাদের অবিলম্বে এক দেশ এক নির্বাচনের পথে এগিয়ে আসা উচিত। লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে আমি সব রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করব, এই উদ্দেশে এগিয়ে আসুন। ইতিমধ্যেই সরকার কাজ শুরু করেছে। একটি কমিশন তৈরি হয়েছে, যা ভালো রিপোর্ট দিয়েছে।"
[আরও পড়ুন: ‘হিন্দু-সংখ্যালঘুদের নিয়ে চিন্তিত ১৪০ কোটি ভারতীয়’, লালকেল্লা থেকে বাংলাদেশ নিয়ে বার্তা মোদির]
উল্লেখ্য, এক দেশ এক নির্বাচন সম্ভব কি না তা খতিয়ে দেখতে রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি হাই লেভেল কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজনৈতিক দল ছাড়াও বর্তমান ও প্রাক্তন বিচারপতি, যোজনা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছাড়াও সমাজে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ব্যক্তিদের মতামত নিচ্ছে এই কমিটি। আলাদা আলাদা করে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছে সেই কমিটি। রিপোর্টও জমা পড়েছে। সরকারের লক্ষ্য ২০২৯ সালের মধ্যেই দেশের দেশের সব রাজ্যের বিধানসভা এবং লোকসভা ভোট একত্রে করার।
[আরও পড়ুন: ‘৭৫ বছর সাম্প্রদায়িক আইন দেখেছে ভারত’, লালকেল্লায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দেওয়ানি বিধির পক্ষে সওয়াল প্রধানমন্ত্রীর]
যদিও বিরোধীদের এ নিয়ে বিস্তর আপত্তি আছে। তাঁদের বক্তব্য, ভারত এক বিশাল দেশ। ২৯টি রাজ্য, ৮টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ও ১৪০ কোটি জনসংখ্যা। এত দল এত রাজ্য। ১৯৫২ থেকে যে নির্বাচন শুরু হয়, তখন এত রাজ্য ও রাজনৈতিক দল ছিল না। এখন এটা স্পষ্ট যে, যে কোনও সময় দল ভাঙিয়ে সরকার ফেলে দেওয়া যায়। এই অবস্থায় দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অক্ষত রাখতে ও সংসদীয় গণতন্ত্র যাতে বিপন্ন না হয়, সেদিকে জোর দেওয়ার প্রয়োজন। বিরোধীদের আশঙ্কা, দেশে ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অফ গর্ভমেন্ট’ গঠনের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। তারই পদক্ষেপ হিসাবে এটা 'লুকনো' পরিকল্পনা।