স্টাফ রিপোর্টার, নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরদিনই ভোটপ্রচারে নেমে পড়ল বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ নেতৃত্ব (INDIA Alliance)। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রত্যেকে আসন্ন নির্বাচনে দিল্লির মসনদ থেকে নরেন্দ্র মোদিকে উপড়ে ফেলার আহ্বান জানালেন।
মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কে রবিবার ছিল চাঁদের হাট। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi), সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও কর্মসমিতির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন তামিলনাড়ু ও ঝাড়খণ্ডের দুই মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, চম্পাই সোরেন, এনসিপি (এসপি) নেতা শরদ পাওয়ার, শিবসেনার (ইউবিটি) উদ্ধব ঠাকরে, আরজেডির তেজস্বী যাদব, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লা, পিডিপির মেহবুবা মুফতি, সিপিআই(এমএল)-এর দীপঙ্কর ভট্টাচার্য , সৌরভ ভরদ্বাজ-সহ প্রায় গোটা বিরোধী শিবির।
উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতির তালিকায় ছিলেন সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, সিপিএম ও সিপিআই-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজারা। ২০ মার্চ থেকে উত্তরপ্রদেশে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। সেই কাজে ব্যস্ত থাকায় এদিন আসতে না পারায় রাহুলকে চিঠি লিখে শুভেচ্ছা জানান অখিলেশ। আসতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ করে রাহুলের দৃঢ় সংকল্পের জন্য তাঁকে ‘বিরল’ হিসাবে উল্লেখ করেন।
রবিবাসরীয় জনসভায় প্রায় প্রত্যেক নেতা নরেন্দ্র মোদির জয়ের সঙ্গে ইভিএম-এর কটাক্ষ করেন। ইভিএম-এ কারচুপি না করে বিজেপি নির্বাচনে (Lok Sabha 2024) জিততে পারবে না সেই উল্লেখ করে মোদির নাম না করে রাহুল বলেন, “উনি হলেন সেই রাজা, যার প্রাণভোমরা ইভিএম।” চেনা স্টাইলে কখনও নাম নিয়ে, বেশিরভাগ সময় নাম না করে প্রধানমন্ত্রীকে চাঁচাছোলা আক্রমণ করেন রাহুল। বলেন, “উনি সমুদ্রের নিচে ডুব দিচ্ছেন, কখনও অন্য কোনও স্টান্ট। তবে কোনওটাই নিজে থেকে নয়। উনি তো শুধুমাত্র অভিনেতা। পরিচালক অন্য কেউ।”
[আরও পড়ুন: ঝুলিতে ৮৭.৮% ভোট, রেকর্ড গড়ে টানা পঞ্চমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন]
কেন প্রথমে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ভারত জোড়ো যাত্রা ও পরে মণিপুর থেকে মুম্বইয়ের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা? রাহুলের মতে, “দেশে এত জ্বলন্ত সমস্যা। অথচ কোনও সংবাদমাধ্যম তা সামনে আনে না। দেশবাসীকে দেশের আসল সমস্যার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই তাই আমরা যাত্রায় নামতে বাধ্য হয়েছি।”
কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে বলেন, “থেকে থেকে খালি গ্যারান্টি গ্যারান্টি। এতটাই ঔদ্ধত্য যে বিজেপির গ্যারান্টিও বলে না। শুধু নিজের নাম। ওঁর এই গ্যারান্টি মনুবাদের গ্যারান্টি। বড়লোকদের জন্য গ্যারান্টি। সাধারণ মানুষের জন্য কিছু নেই।” আসন্ন নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) দেশকে বাঁচাতে এদিন উপস্থিত প্রত্যেক নেতার গলায় ছিল এক সুর। সিপিআই(এমএল) সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “২০০৪ সালে যেভাবে ইন্ডিয়া শাইনিং-এর ভ্রান্ত স্লোগান ছাড়খার হয়ে গিয়েছিল, এবার তেমনই অমৃতকালের মিথ্যে ধারণা ভাঙতে হবে।” ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন আহ্বান জানান, “যাত্রায় এত লোক দেখে বিজেপির ঘুম উড়ে গেছে। আজ যাত্রা মুম্বই এল। শীঘ্র দিল্লি পৌঁছবে।” ফারুক আবদুল্লা বলেন, “দিল্লিতে বসে ভারতের আসল ছবি দেখা যায় না। তার জন্য গ্রামেগঞ্জে যেতে হয়। রাহুল গান্ধী সেটা করেছেন। দেশের আসল ছবি দেখেছেন।”
মেহবুবা মুফতি কটাক্ষ করে বলেন, “মহাত্মা থেকে শুরু করে রাজীব। গান্ধীরা নিজেদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে দেশ রক্ষা করেছে। তাই বিজেপি গান্ধী পদবীকে ভয় পায়।” ইতিহাসের তুলনা করে শরদ পাওয়ার ডাক দেন, “১৯৪২ সালে মহারাষ্ট্র থেকেই গান্ধীজি ভারত ছোড়োর ডাক দিয়েছিলেন। এবার আমরা বিজেপি ছোড়োর ডাক দেব।” উদ্ধব ঠাকরে মনে করিয়ে দেন, “দেশ বাঁচলে আমরা বাঁচব। তাই দেশ বাঁচাতে হবে।” তেজস্বী যাদব আবার বলেন, “আমাদের লড়াই মোদি-শাহের সঙ্গে নয়। যারা স্বাধীনতা সংগ্রাম করেনি, যারা নিজেদের পার্টি অফিসে তেরঙ্গা লাগায় না, তাদের বিরুদ্ধে।” এদিনের জনসভায় অবশ্য আপ বা তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি।