সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এক দিকে সারা বিশ্ব জুড়েই চোখে পড়ছে ধর্মের নামে অসহিষ্ণুতা আর হত্যালীলা। তারই উল্টো পিঠে ধর্মীয় বিভেদের ঊর্ধ্বে নিরন্তর নজির গড়ে চলেছে বিশ্ব। সেই নজিরের নিদর্শন সম্প্রতি ধরা দিল ইউএস-এর ইন্ডিয়ানাপোলিস সিটির বৃহত্তম হিন্দু মন্দিরে। মন্দিরটির প্রধান নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে নিযুক্ত হলেন একদা মুম্বইনিবাসী পুলিশ অফিসার জাভেদ খান।
হিন্দু মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্ব ইসলাম-ধর্মাবলম্বীর হাতে এভাবে ন্যস্ত হওয়ায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। কিন্তু, লেফটেন্যান্ট জাভেদ খান এসব কূটকচালির ধার-কাছ দিয়েও যেতে চান না। তাঁর বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট, ঈশ্বর এক! এবং সেই সূত্রে তাঁর সৃষ্টির অন্তর্গত মানুষও এক! দুইয়ের মধ্যে কোনও ভাবেই কোনও ধর্মীয় বিভাজনরেখা টানতে রাজি নন তিনি!
”আদতে আমরা সবাই ঈশ্বরের সন্তান। ঈশ্বর প্রথম প্রকাশে নিরাকার। মানুষ একেকটি ভক্তিমার্গ অনুসরণ করে একেক ভাবে তাঁর উপাসনা করে থাকে। এর মধ্যে বিভাজনের কোনও প্রশ্নই নেই”, জানাচ্ছেন জাভেদ।
জাভেদ খান
মার্শাল আর্টে পারদর্শী জাভেদ ১৯৮৬ সালে দেশ ছাড়েন। লক্ষ্য ছিল, মার্কিন মুলুকের বিভিন্ন মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া! তার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে ২০০১ সালে থিতু হন ইন্ডিয়ানাপোলিসে।
তবে, তখনও পর্যন্ত তাঁর এই আধ্যাত্মিক সম্প্রীতির যাত্রা শুরু হয়নি। শুরু হল তখন, যখন নিজের মেয়ের সঙ্গে এক তেলুগু যুবকের বিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি প্রথম পা রাখেন ইন্ডিয়ানাপোলিসের এই হিন্দু মন্দিরে।
”মন্দিরটি আমায় টানে! আমি খুব কাছ থেকে খুঁটিয়ে দেখতে থাকি এর সঙ্গে জড়িত মানুষে জীবনযাত্রা। এবং মনে হয়, মন্দিরটি সুরক্ষিত রাখার জন্য আমার কিছু করার আছে”, জানাচ্ছেন তায়কোন্ডোর ব্ল্যাক বেল্ট শিরোপাজয়ী এবং কিক-বক্সিং চ্যাম্পিয়ন জাভেদ।
সেই শুরু! জাভেদ তাঁর ইচ্ছার কথা জানান। এবং, তা মঞ্জুর করা হয় মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে। আপাতত, মন্দিরের প্রধান নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে নিজের দিন-রাত উৎসর্গ করে কাজ করে চলেছেন জাভেদ।
হিংসার চোরা স্রোতে তলিয়ে যেতে থাকা বিশ্বের কাছে জাভেদ নিঃসন্দেহে এক দৃষ্টান্ত। সে কথা স্বীকার করেছেন মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য রবি পট্টরও! জাভেদের মতো মানুষ আছেন বলেই যে মানবিকতাও বহাল তবিয়তে আছে, সে কথাও উল্লেখ করতে ভুলছে না ইন্ডিয়ানাপোলিস।
The post মার্কিন মুলুকের এই হিন্দু মন্দির পাহারা দেন এক মুসলিম appeared first on Sangbad Pratidin.