সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় অর্জন করেছে আওয়ামি লিগ। বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসতে চলেছেন তিনি। আর সবার প্রথম তাঁকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানালো ভারত। সোমবার সকালে ঢাকায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। শুভেচ্ছা জানিয়ে মুজিবকন্যার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন তিনি। এর আগে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ের পর হাসিনাকে প্রথম অভিনন্দন জানিয়েছিল চিন।
বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনার ঘটলেও রবিবার বাংলাদেশে মোটের উপর শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে ভোট প্রক্রিয়া। ২৯৯টি সংসদীয় ক্ষেত্রের (মোট ৩০০) জন্য ভোটগ্রহণ । প্রার্থীর মৃত্যুতে একটি আসনে ভোট হয়নি। ফলাফল বেরলে দেখা যায় প্রত্যাশা মতো আওয়ামি লিগ জয়ী হয়েছে ২২৩টি আসনে। শাসকদলের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টি (এরশাদ) পেয়েছে মাত্র ১১টি সিট। আসনরফা মেনে ২৬টি আসনে লড়াই করার সুযোগ পেলেও এরশাদের দল তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্লেষকদের চমকে, ৬১টি সিট ঝুলিতে পুরতে সক্ষম হয় নির্দল প্রার্থীরা।
[আরও পড়ুন: হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিলেন ভারতের রাষ্ট্রদূত, দিল্লিকেই অগ্রাধিকার মুজিবকন্যার]
বলে রাখা ভালো, হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত ছিল। তবে গণতন্ত্র বিপন্ন এবং মানবাধিকার হননের অভিযোগে সরব হয়েছিল আমেরিকা ও পশ্চিমের দেশগুলো। অবশ্য সোমবার হাসিনা সরকারকে দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। তবে পশ্চিমা চাপের মুখে প্রাচীর হয়ে ঢাকার পাশে ছিল নয়াদিল্লি। তাই বিপদের বন্ধু ভারতকেই যে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এদিন তা আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন শেখ হাসিনা। জনমত পেয়ে ভারতের রাষ্ট্রদূতের হাত থেকেই প্রথম ফুলের তোড়া নেন তিনি।
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় হামবানটোটা বন্দর চিনের দখলে। নেপালে প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসেছেন বেজিং ঘনিষ্ট পুষ্পকমল দহল। আফ্রিকায় জিবৌতিতে নৌসেনা ঘাঁটি তৈরি করেছে লালফৌজ। এবার বাংলাদেশেও শিকড় মজবুত করতে চাইছে শি জিনপিংয়ের প্রশাসন। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ যে ভারতের কাছে কৌশলগত ভাবে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলাই বাহুল্য। ফলে বাংলাদেশে ঢালাও বিনিয়োগ করছে দিল্লি। ঢাকার সঙ্গে মোদি সরকারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রা লাভ করেছে।
[আরও পড়ুন: হাসিনা হাসলেও বাংলাদেশে নির্দলদের দাপট, সংসদে প্রধান বিরোধী ‘দলহীন’রাই?]
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক রক্তে গড়া। আক্ষরিক অর্থেই তাই। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে ভারতীয় ফৌজ। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে প্রাণ আহুতি দেন তিন হাজার ভারতীয় জওয়ান। সেসমস্তই মুজিবকন্যা জানেন। দিল্লি পাশে না থাকলে পিতৃহন্তা রাজাকররা আবারও মাথাচাড়া দেবে এটাও তাঁর থেকে ভালো কে বোঝে। তাই ভারতকে পাশে নিয়েই চলায় বিশ্বাসী তিনি। ১৯৯৬ সালে যখন হাসিনা প্রথমবার বাংলাদেশের মসনদে বসেন তখন থেকে তিনি ভারতের সঙ্গে এই সখ্য বজায় রেখেছেন। ২০২২ সালে ভারত সফরে এসে তিনি বলেছিলেন, “বাংলাদেশ কখনও ভারতকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান আমরা অস্বীকার করতে পারি না।” বাংলাদেশ যে শুধু ভারতের প্রতিবেশি রাষ্ট্র তা নয় কৌশলগত অংশীদারও।