shono
Advertisement

ধৈর্য, শীতল মস্তিষ্ক, বঙ্গকন্যা ‘ফিনিশার’রিচার মধ্যে কি ধোনির ছায়া?

ধোনির মতোই দল প্রাধান্য পায় রিচার কাছে।
Posted: 05:46 PM Oct 17, 2022Updated: 12:02 PM Oct 18, 2022

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারত-পাক ম্যাচ (India vs Pakistan) মানেই আবেগের ফুটন্ত কড়াই। প্রাণান্তকর চাপ। মাঠের ক্রিকেটারদের উপরেই চেপে বসে দুই দেশের কোটি কোটি ক্রিকেটভক্তদের যাবতীয় আশা-প্রত্যাশা। কথিত আছে, এই ম্যাচে স্নায়ুর চাপ যে সামলাবে ম্যাচ তার। এই ম্যাচ দেখেছে তারা খসা। আবার এই ম্যাচ জন্ম দিয়েছে নতুন তারকার। বাংলাদেশের সিলেটে ৭ অক্টোবর সেরকমই এক ম্যাচ ছিল। মহিলাদের এশিয়া কাপের (Women’s Asia Cup) গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ। ভারতের সামনে পাকিস্তান। এই ম্যাচেই এক বঙ্গকন্যার হাত ধরে বিশ্বক্রিকেটে ফিরে এসেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির ছায়া।

Advertisement

অপেক্ষাকৃত সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে চাপের মুখে পরপর উইকেট হারিয়ে দেওয়ালে প্রায় পিঠ ঠেকে গিয়েছিল ভারতের। স্মৃতি মন্ধানা, হরমনপ্রীত কউর-দলের সিনিয়র ব্যাটাররা প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়েছেন। ভারতীয় দলের অতি বড় সমর্থকও ধরে নিয়েছেন, এই ম্যাচ হারবে ভারত। সেই সময়ই মাঠে নামলেন বঙ্গতনয়া রিচা ঘোষ (Richa Ghosh)। পরপর চার আর ছক্কা হাঁকিয়ে সমর্থকদের মনে বিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছিলেন, নাটকীয়ভাবে ম্যাচে ফিরে আসবে ভারত এবং উত্তেজক ম্যাচ নিয়ে যাবেন নিজেদের ড্রেসিং রুমে। 

ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীরা এই রকম ঘটনার সঙ্গে বেশ পরিচিত। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও তো একই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন তাঁরা। আরেক উইকেট কিপার ব্যাটারের হাত ধরে অসম্ভব ম্যাচ জেতার স্বপ্ন দেখেছিল ভারত। সিলেট ও ম্যাঞ্চেস্টার- দুই ক্ষেত্রেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ের কারিগর ছিলেন উইকেটকিপার-ব্যাটার। সিলেটে শিলিগুড়ির মেয়ে রিচা। আর ম্যাঞ্চেস্টারে এমএস ধোনি। ঝাড়খণ্ড-বাংলা প্রতিবেশী রাজ্য। দুই প্রতিবেশী রাজ্যের দুই ক্রিকেটারের মধ্যে মিল নেহাত কম নয়! 

[আরও পড়ুন: ‘সৌরভ বঞ্চিত’, ICC-তে মহারাজকে পাঠানোর জন্য মোদিকে অনুরোধ মমতার]

মহিলাদের এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে হারাতে পারেনি ভারত। ২০১৯ সালে ম্যাঞ্চেস্টারে ভারতের স্বপ্ন ভেঙেছিল মার্টিন গাপ্তিলের থ্রো। দুই ক্ষেত্রে ভারত ব্যর্থ হলেও, ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে যায়, তাহলে কি মহেন্দ্র সিং ধোনির (MS Dhoni) ছায়া বাংলার রিচার মধ্যে? সবাই জানেন ম্যাচ ছোট করে আনেন ধোনি। শেষ বল পর্যন্ত তিনি বাঁচিয়ে রাখেন জয়ের স্বপ্ন। পাকিস্তানের মহিলা দলের বিরুদ্ধেও রিচা একই কাজ করছিলেন। ম্যাচ সংক্ষিপ্ত করছিলেন। শেষ ওভারে নিয়ে গিয়েছিলেন খেলা। শেষে রিচা সফল হননি বটে, তবে তিনি প্রশংসিত হন।

এশিয়া কাপে ভারত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিন রিচার বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ মেয়ে সম্পর্কে যা বলছিলেন, তাতে বলাই যায় ভারতের মহিলা দলের উইকেটরক্ষকের মধ্যে ধোনির ছায়া প্রবলভাবে রয়েছে। বিশ্বজয়ী প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের মতোই নট আউট থাকতে ভালবাসেন রিচা। ধোনি যেমন শান্ত, হাজার চাপেও তাঁকে ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি, রিচাও অনেকটা সেরকমই। তাঁর মস্তিষ্কও শান্ত, অসম্ভব ধৈর্যের অধিকারী। ধোনির মতোই নিজের কথা না ভেবে, শুধুমাত্র দলকে জেতানোর লক্ষ্যে মাঠে নামেন রিচা। 

দেশের ক্রিকেটে উল্কার মতো উত্থান রিচার। তাঁর বাবার থেকেই জানা গেল, মাত্র পাঁচ বছর বয়সে উইকেটকিপার বাবার হাত ধরে মাঠে যেতেন রিচা। ধৈর্য ধরে বসে সমস্ত খেলা দেখতেন। তারপরে যখন নিজে খেলার সুযোগ পেলেন, তখন এক স্ট্রোকে মাঠের বাইরে বল পাঠাতে পারতেন না। খুচরো রান নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখতেন। রিচার বাবা বলছিলেন, ”অধিকাংশ ম্যাচেই ওপেন করতে নামত রিচা। শেষ পর্যন্ত ইনিংস ধরে রাখার দায়িত্বও থাকত ওর কাঁধেই।” সেখান থেকেই হয়তো শিখেছেন, ম্যাচ ধীরে ধীরে শেষের ওভারে টেনে নিয়ে যাওয়ার কৌশল। 

ধোনি বরাবর বিশ্বাস করতেন, নিজের কথা না ভেবে দলের জন্য খেলতে হয়। একই দর্শন মেনে চলেন রিচাও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হোক বা ঘরোয়া ক্রিকেট, টিম তাঁর কাছে সবার আগে। রিচার কাছে আমরা আগে। পরে আমি। মেয়ের খেলা সম্পর্কে মানবেন্দ্র ঘোষ বলছিলেন, ”ওর সব ইনিংসগুলোই আমার ভাল লাগে। আমি ওকে বলতাম ক্রিজে টিকে থাকলে রান আসবেই।” বাবার পরামর্শ নিয়েই এগিয়ে চলেছেন রিচা। আগামী দিনে রিচার ছায়া ভারতের মহিলা ক্রিকেটে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় কিনা, সেটাই দেখার।  

[আরও পড়ুন: ‘শামি ছাড়া বিশ্বকাপে আর কোনও বিকল্প নেই’, ম্যাচ জেতানো ওভারের পর দাবি কোচের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement