সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইটালিতে কাজ করতে গিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে সৎনাম সিং নামে এক ভারতীয়র। ৩১ বছর বয়সি ওই পাঞ্জাবি যুবক খেতে কাজ করার সময় দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। তাঁর একটি হাত কাটা পড়ে ফল কাটার যন্ত্রে। অভিযোগ, ওই পরিস্থিতিতেই চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে তাঁকে রাস্তায় ফেলে চলে যায় খেতের মালিক। প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এই ঘটনায় অভিযুক্তদের কোনও শাস্তি হয়নি। এনিয়ে ইটালিতে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ভারতীয়রা। কড়া পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে ভারতও। এদিকে, গোটা ঘটনাকে 'অমানবিক' বলে পার্লামেন্টে মৃত শ্রমিককে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি।
বুধবার সৎনাম সিং নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইটালির ভারতীয় দূতাবাস। বিবৃতি দিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে জানানো হয়, 'আমরা চাই, সৎনাম সিংয়ের মৃত্যুতে ইটালি কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। যারা এর জন্য দায়ী তাদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। আমরা ওই যুবকের পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তাঁর দেহ দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।' এদিনই পার্লামেন্টে এই ঘটনা তুলে ধরেন ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। সেখানে মৃত সৎনাম সিংকে শ্রদ্ধা জানান তিনি। 'অমানবিক' ও 'বর্বরোচিত' ঘটনা বলে উল্লেখ করে দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মেলোনি।
[আরও পড়ুন: ধস ও বন্যায় বিপর্যস্ত নেপাল, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৃত্যু শিশু-সহ অন্তত ১৪ জনের]
গত সপ্তাহে মৃত্যু হয় ওই পাঞ্জাবি যুবকের। কিন্তু এখনও বিচার হয়নি অপরাধীদের। এনিয়ে গত দুদিন ধরে ব্যপক প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন ইটালিতে থাকা হাজার হাজার ভারতীয় শ্রমিক। কাজ করানোর নামে কার্যত 'দাসত্ব' বন্ধ করার দাবি জানান তাঁরা। এঁদের মধ্যে অধিকাংশ শ্রমিকই সেদেশের শস্যখেতে কাজ করেন। এনিয়ে মধ্য ইটালির লাজিও অঞ্চলের ভারতীয় কমিউনিটির প্রধান গুরমুখ সিং সংবাদমাধ্যমে বলেন, "সৎনাম সিংকে কুকুরের মতো ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে প্রতিদিন শোষণ হয়, আমরা প্রতিদিন তা ভোগ করি। এটা এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। আমরা এখানে কাজ করতে এসেছি, মরতে আসেনি।"
উল্লেখ্য, রোমের একটি শস্যখেতে কাজ করতেন সৎনাম। সেখানেই কাজ করার সময় ফল কাটার যন্ত্রে একটি হাত কাটা পড়ে যায় তাঁর। ওই অবস্থায় ওই খেতের মালিক অ্যান্তনিও লোভাতো সৎনাম ও তাঁর স্ত্রীকে একটি ভ্যানে বসিয়ে সেখান থেকে নিয়ে এসে রাস্তার ধারে রেখে দিয়ে পালিয়ে যায়। সৎনামের স্ত্রী চিৎকার করে সাহায্যের জন্য আর্তি জানান। পরে এক সহকর্মীর উদ্যোগে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তিনিও সেখান থেকে পালিয়ে যান। সৎনামের অসহায় স্ত্রী যখন জানতে চান, কেন তিনি এমন করছেন তখন তাঁদের বলা হয়, সৎনাম যেহেতু স্থায়ী কর্মী নন তাই এমন করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, অ্যান্তনিও লোভাতোর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। তবে তাঁর পালটা দাবি, তিনি সৎনামকে যন্ত্রের বেশি কাছে যেতে বারণ করেছিলেন। এই ঘটনায় এবার ইটালির সরকারের হস্তক্ষেপ চাইল ভারত।