সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: খলিস্তানপন্থী সন্ত্রাসবাদী হরদীপ সিং নিজ্জর খুনের ঘটনা ফের তপ্ত ভারত-কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভারতীয় হাই কমিশনারের যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে কানাডা। এই ইস্যুতে এবার কড়া পদক্ষেপ নিল ভারত। দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হল কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সঞ্জয়কুমার বর্মাকে। পাশাপাশি দিল্লিতে নিযুক্ত কানাডার ৬ কূটনীতিবিদকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিল বিদেশমন্ত্রক।
গত বছর জুন মাসে খুন হন হরদীপ সিং নিজ্জর। যার পর খোদ প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো অভিযোগ করেন, নিজ্জর হত্যার সঙ্গে জড়িত ভারতের গুপ্তচর সংস্থা। যদিও তখনই ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ উড়িয়ে দিয়েছিল দিল্লি। নতুন করে সেই বিতর্ক ফের দানা বেঁধেছে সঞ্জয়কুমার বর্মার বিরুদ্ধে কানাডার তদন্তকারী সংস্থার বক্তব্যে। তারা দাবি করেছে, ভারতীয় হাই কমিশনার সঞ্জয়কুমার বর্মা এই মামলায় ‘স্বার্থ সম্পর্কিত ব্যক্তি’। নেহাত কূটনৈতিক রক্ষাকবচ থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়নি। এই মন্তব্যের পর দিল্লি পালটা ভারতে নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূত স্টুয়ার্ট হুইলারকে তলব করে। তাঁর কাছে গোটা বিষয়ের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এবং স্পষ্ট জানানো হয়, কানাডা সরকার যে অভিযোগ তুলছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
এই বিষয়েই সোমবার বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল। অথচ কানাডা সরকার নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ পেশ করেনি। এখন ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে ভারতকে অপমান করা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কানাডা সরকারের রাষ্ট্রদূত সঞ্জয়কুমারকে নিরাপত্তা দেবেন এমন ভরসা নেই। যার জেরেই কানাডা সরকারের নিশানায় থাকা ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সঞ্জয়কুমার বর্মা ও অন্যান্য কূটনীতিকদের দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে কানাডা সরকারের এহেন আচরণে কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, কানাডায় পার্লামেন্ট নির্বাচন আসন্ন। সেই কারণেই নতুন করে নিজ্জর হত্যা নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে ট্রুডো সরকার। লক্ষ্য কট্টরপন্থী খলিস্তানি গোষ্ঠীগুলির সমর্থন পাওয়া।
এদিকে দিল্লিতে থাকা কানাডার ৬ কূটনীতিবিদকে দেশ ছাড়তে বলল বিদেশমন্ত্রক। শনিবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে এদেশের মাটি ছাড়তে হবে তাঁদের। এই তালিকায় রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার স্টুয়ার্ট রস হুইলার। ডেপুটি হাই কমিশনার প্যাট্রিক হেবার্ট। এছাড়া ৪ সচিবও রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ জুন কানাডার মাটিতে আততায়ীর গুলিতে মৃত্যু হয়ে খালিস্তান টাইগার ফোর্স সংগঠনের প্রধান হরদীপ সিং নিজ্জরের। ভারত সরকারের জঙ্গি হিটলিস্টে প্রথম সারিতে নাম ছিল এই জঙ্গির। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কানাডার সংসদ হাউস অফ কমন্সে স্পিকার গ্রেগ ফোগর্স নিজ্জরের উদ্দেশে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন। এর পর উপস্থিত সাংসদদের উদ্দেশে বলেন, নিজ্জরের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করতে। কানাডার সংসদে ঘটা এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পরে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে ভারতের যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। এবার সেই ঘটনায় নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভারত-কানাডার সম্পর্ক।