ভারত: ২০৫/৫ (রোহিত ৯২, সূর্য ৩১, স্টার্ক ২/৪৫)
অস্ট্রেলিয়া: ১৮১/৭ (হেড ৭৬, মার্শ ৩৭, অর্শদীপ ৩/৩৭)
ভারত ২৪ রানে জয়ী।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপের ফাইনাল হেরে চোখে জল এসেছিল ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার (Rohit Sharma)।
সেন্ট লুসিয়ায় সেই হারের বদলা নিল টিম ইন্ডিয়া (Team India)। সৌজন্যে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তিনি একাই অস্ট্রেলিয়াকে (Australia) এদিন নক আউট করে দিলেন। ভারতের পাহাড়প্রমাণ ২০৫ রান তাড়া করতে নেমে অজিরা থেমে যায় ১৮১ রানে। তবে বিশ্বকাপ অভিযান অজিদের এখনই শেষ হয়ে গেল কিনা তার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের দিকে নজর থাকবে অস্ট্রেলিয়ারও। আফগানরা জিতলে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ অভিযান শেষ। অন্যদিকে প্রবল শক্তিধর অস্ট্রেলিয়াকে ২৪ রানে মাটি ধরিয়ে ভারত পৌঁছে গেল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। গোটা দেশের প্রার্থনা এই স্বপ্নের দৌড় যেন না থামে।
[আরও পড়ুন: সেন্ট লুসিয়ায় সুপারহিট হিটম্যান শো! রোহিতের ব্যাটে রানের পাহাড়ে ভারত]
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটের ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পড়ছিল আহমেদাবাদের সেই অভিশপ্ত ফাইনালের ছায়া। সেদিন হেড ছিলেন নায়ক। এদিন তিনি ট্র্যাজিক নায়ক। একেই হয়তো বলে পোয়েটিক জাস্টিস! আহমেদাবাদের সেই ফাইনালে মারাত্মক হয়ে ওঠা রোহিত শর্মার ক্যাচ ধরেছিলেন ট্রাভিস হেড। তার পরে ভারতের রান তাড়া করতে নেমে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে হেড ম্যাচ নিয়ে চলে গিয়েছিলেন অজিদের সাজঘরে। রোহিতদের সামনে বিশ্বকাপ হাতে তুলেছিলেন প্যাট কামিন্সরা।
রোহিত রোশনাই।
এদিন সেই হেড ভারতের রান তাড়া করতে নেমে একসময়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ম্যাচের মোক্ষম সময়ে বুমরাহর বলে হেডকে (৭৬) তালুবন্দি করলেন রোহিতই। ইতিহাসের পাতায় ধার-বাকি থাকে না কিছুই। এদিন খেলার মাঠেই ঋণ চুকিয়ে গেলেন রোহিত।
সুপার এইটে দুদ্দাড়িয়ে শুরু করেছিল টিম ইন্ডিয়া। অন্য দিকে আফগানিস্তানের কাছে হেরে হঠাৎই ব্যাকফুটে চলে যায় অজিরা। চাপ অনুভব করতে শুরু করেন প্যাট কামিন্সরা। ভারতের বিরুদ্ধে তাঁদের জেতা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও রাস্তা খোলা ছিল না। টস জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান অজি অধিনায়ক মিচেল মার্শ। কিন্তু দিনটা যে ছিল রোহিত শর্মার (৪১ বলে ৯২)।
শুরু থেকেই হিটম্যান ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন। বিরাট কোহলি খাতা না খুলে ফিরে গেলেও অস্ট্রেলিয়া যে ভারতের উপরে চেপে বসতে পারেনি, তার প্রধান কারণ মুম্বইকর। তিনি নির্দয় হয়ে ওঠেন। ছক্কার বর্ষণ হল। কোন লেন্থে বল করবেন, সেটাই যেন ভুলে গেলেন অজি বোলাররা। রোহিত শর্মা তাঁদের ইচ্ছামতো মাঠের যত্রতত্র ছুড়ে ফেললেন।
আজ ভারতীয় ব্যাটিংয়ের স্টার তিনি। রোহিত শর্মা এমনই। যেদিন তিনি খেলেন, সেদিন বাকিরা পার্শ্বচরিত্র। বড় ম্যাচের বোলার মিচেল স্টার্কের এক ওভারে উঠল ২৯ রান। তাঁর ওভারে চারটি ছক্কা এবং একটি চার মারেন রোহিত। স্টার্ক একটি বল ওয়াইড করেন। ১৯ বলে অর্ধশতরান করলেন রোহিত। তার পরে খেলা যত গড়িয়েছে রোহিত আরও ভয়ংকর হয়েছেন। ভারত অধিনায়ক একদিকে ঝোড়ো ব্যাটিং করলেও পন্থ (১৫) কিন্তু মারতে গিয়ে ফেরেন। ঠিক যখন মনে হচ্ছে ভারত অধিনায়কের দ্রুততম সেঞ্চুরি পাওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা, ঠিক তখনই স্টার্কের ইয়র্কার উইকেট ভেঙে দিল তাঁর। সূর্যকুমার (৩১), শিবম দুবে (২৮) এবং হার্দিক পাণ্ডিয়ার (২৭*) জন্য ভারত রানের পাহাড়ে চড়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটাই সর্বোচ্চ স্কোর।
ভারতের ৫ উইকেটে ২০৫ রানের জবাব দিতে নেমে শুরুতেই ফেরেন ডেভিড ওয়ার্নার (৬)। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনালে ট্রাভিস হেড একাই ভারতের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছিলেন। এদিনও তিনি আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠেন।
সেদিনের নায়ক। আজকের ট্র্যাজিক নায়ক।
অজি অধিনায়ক মিচেল মার্শও ভয়ংকর হয়ে ওঠার ঈঙ্গিত দিতে থাকেন। কথায় বলে ক্যাচেস উইন ম্যাচেস। মার্শ ও হেড যখন আহমেদাবাদের সেই অভিশপ্ত রাত ফেরানোর চেষ্টায় মত্ত, ঠিক তখনই কুলদীপের বলে মার্শের দুর্ধর্ষ ক্যাচটি ধরেন অক্ষর প্যাটেল। ওই রকম ক্যাচ ভারতীয় দলের মনোবল বাড়িয়ে দিল কয়েকগুণ। ৮১ রানের পার্টনারশিপ ভাঙলেন কুলদীপ। ম্যাক্সওয়েল যে কোনও দিন, যে কোনও সময়ে ম্যাচের গতিপ্রকৃতি ঘুরিয়ে দিতে পারেন। হেডের সঙ্গে ম্যাড ম্যাক্সও বিপজ্জনক হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু কুলদীপের ম্যাজিক ডেলিভারিতে ম্যাক্সওয়েলের (১৯) উইকেট ভেঙে গেল। মার্কাস স্টোয়নিসও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। কিন্তু ট্রাভিস হেড একাই লড়াই নিয়ে যাচ্ছিলেন ভারতের ক্যাম্পে। বুমরাহ থামিয়ে দিলেন হেডকে। তিনি যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, ততক্ষণই শ্বাস ছিল অস্ট্রেলিয়ার। তিনি ফিরতেই ম্যাচের দখল আরও নিয়ে নেয় ভারত। একে একে অজিদের দেউটি নিভল। ভারত শেষ চারের ছাড়পত্র জোগাড় করে ফেলল।