সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মিজোরামের গভীর জঙ্গলে ভিয়েতনামের তিন সেনা কার্যত চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছেন এক জঙ্গির খোঁজে৷ টার্গেটের লোকেশন খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা৷ সেই মতো ট্র্যাক করে এগোচ্ছেন৷ প্রয়োজনে গা ঢাকা দিচ্ছেন বড় পাথরের পিছনে৷ হাতে ইনস্যাস রাইফেল৷
[চোখ ধাঁধানো ‘ব্রহ্মস’ মিসাইলের এই গোপন তথ্যগুলি জানেন কি?]
উপরের গোটা ঘটনাটিই সত্যি, শুধু টার্গেটটি কাল্পনিক৷ ভিয়েতনামের সেনাকে এভাবেই হাতেকলমে গভীর জঙ্গলের ভিতর লুকিয়ে থাকা জঙ্গিকে খুঁজে নিকেশ করতে শিক্ষা দিচ্ছেন ভারতীয় জওয়ানরা৷
ভিয়েতনামের সেনারাও কিন্তু দিব্যি মানিয়ে নিয়েছে মিজোরামের জঙ্গলে৷ আপাদমস্তক ভারতীয় সেনার উর্দিতে তাঁদের একঝলক দেখে জওয়ানই মনে হবে৷ জঙ্গলের ভিতর যে পোশাক পড়ে ভারতীয় জওয়ানরা ক্যামোফ্লেজে থাকেন, হুবহু একই বিধি মেনে চলছে ভিয়েতনামের সেনা৷
ভারতীয় সেনার কাছ থেকে নেওয়া এই শিক্ষা নিয়ে তাঁরা ফিরে যাবে ভিয়েতনামে৷ সেখানকার সেনাবাহিনীকে শেখাবে এই সব কলাকৌশল৷ ১৯৭৯-এ চিনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে যুদ্ধে ভিয়েতনামের হাজার হাজার সেনা মারা পড়েছিল৷ সেই থেকে হ্যানয়ের সঙ্গে বেজিংয়ের সম্পর্ক নরমে-গরমে৷ বর্তমানে দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিংয়ের আগ্রাসনে বেজায় উদ্বেগে হ্যানয়৷ স্পার্টলে দ্বীপপুঞ্জে চিন পূর্ণাঙ্গ সামরিক বহর মোতায়েন করায় ভারত-সহ-একাধিক দেশ ঘোরতর আপত্তি তুলেছে৷ তিক্ত হয়েছে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক৷
[চিনকে ‘শিক্ষা’ দিতে ভিয়েতনামকে ‘আকাশ’ মিসাইল দিচ্ছেন মোদি]
এই পরিস্থিতিতে চিন যখন পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য করার কথা খোলাখুলি ঘোষণা করেছে, তখন ভারতীয় সেনাই বা চুপ করে বসে থাকবে কেন, বলছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা? শুধু পাকিস্তান নয়, চিনা সাবমেরিন বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তেও টহল দিচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷ এই পরিস্থিতিতে চিনের প্রথাগত শত্রুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে নয়াদিল্লি৷ তারই অংশ হিসাবে ভারত ও ভিয়েতনামের সেনার এই যৌথ মহড়া৷
ভারতীয় সেনা শিবিরে কী শিখলেন? ভাঙা ভাঙা ইংরাজিতে ক্যাপ্টেন সান বলছেন, “ভারতের মানুষকে আমরা খুব ভালবাসি৷ দুই দেশের মানুষই একে অপরের বন্ধু৷ এই দেশটা খুব সুন্দর৷ প্রশিক্ষণও খুব ভালভাবে চলছে৷ আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছি৷”
[ভিয়েতনামকে অস্ত্র বিক্রি করলে ভারতকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি চিনের]
দক্ষিণ চিন সাগরের জলসীমার দখল নিয়ে ভিয়েতনামের সঙ্গে চিনের বিবাদ সুবিদিত। সেই সংঘাতের মধ্যে ভারত আগেই নাক গলিয়েছে। ভিয়েতনামের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দক্ষিণ চিন সাগরের এমন সব এলাকায় ভারত খনিজ তেলের অনুসন্ধান শুরু করেছে, যে এলাকাকে ভিয়েতনামের জলসীমা হিসাবে স্বীকৃতি দেয় না চিন। নয়াদিল্লিকে এ নিয়ে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বেজিং। কিন্তু ভারত সে হুঁশিয়ারিতে পাত্তা না দিয়ে নিজেদের অনুসন্ধানকারী দলের নিরপত্তার স্বার্থে ভিয়েতনামে নিজস্ব নৌ-ঘাঁটি তৈরি করেছে।
ভিয়েতনামের সঙ্গে স্থলসীমান্ত নিয়েও বিবাদ রয়েছে চিনের। দেশের উত্তর সীমান্তের সেই সমস্যার জেরে ভিয়েতনামকে চিনের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধেও জড়াতে হয়েছে। তাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ভিয়েতনাম বরাবরই চিনের বিপরীত মেরুতে। সেই ভিয়েতনামকে আগেই বিশ্বের দ্রুততম ক্রুজ মিসাইল ‘ব্রহ্মস’ বিক্রির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হেভিওয়েট ইলেকট্রিক টর্পেডো বরুণাস্ত্রও বিক্রি করতে চায় ভারত। ২০ কিলোমিটার পাল্লার এই মাঝারি ক্ষমতাসম্পন্ন টর্পেডো সবমিলিয়ে মাত্র ৮টি দেশের নৌ-সেনার কাছে মজুত রয়েছে। এরকম এক একটি টর্পেডোয় ২৫০ কিলোগ্রামেরও বেশি বিস্ফোরক ঠাসা থাকে।
[চিনের বিরুদ্ধে সমরাস্ত্র মজুত করছে ভিয়েতনাম]
জঙ্গলে লড়াইয়ের কলা-কৌশলের পাশাপাশি, দ্রুতই ভারতীয় পাইলটরা সুখোই ৩০ এমকেআই-এর মতো যুদ্ধবিমান ওড়ানোর প্রশিক্ষণ দেবেন ভিয়েতনামের বায়ুসেনাকে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্কর ভিয়েতনামকে ভারতের ‘ঘনিষ্ঠ’ বন্ধু বলেও উল্লেখ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে গতবছর ভিয়েতনামের রাজধানী হানয় সফরে গিয়েছেন। সূত্রের খবর, সেই সফরেই ভিয়েতনামের সঙ্গে ভারতের সামরিক বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করার আশ্বাস দেন মোদি। আর এখন চিন যখন করাচির বন্দরে সাবমেরিন নামিয়ে ক্রমশ ভারতকে ঘিরে ফেলতে চাইছে, তখন ভারত-ভিয়েতনাম দুই দেশ একত্রে তাদের সামরিক বহর বাড়াচ্ছে।
The post কীভাবে লড়তে হবে জঙ্গলে, ভিয়েতনামের সেনাকে শেখাচ্ছেন ভারতীয় জওয়ানরা appeared first on Sangbad Pratidin.