সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নব দম্পতিদের অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন আগেই। এ যে নিতান্ত কথার কথা ছিল না সোমবার তা স্পষ্ট করে দিলেন অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। নিজ রাজ্য থেকে ৩০ বছরের পুরোনো দুই সন্তান নীতি প্রত্যাহার করে নিল টিডিপি সরকার। এই বিষয়ে বিধানসভায় দুটি বিল পাশ করানো হয়েছে শাসকদলের তরফে। যেখানে দুইয়ের বেশি সন্তান জন্ম দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে দম্পতীদের।
একটা সময় হাম দো হামারে দো, ছোট পরিবার সুখি পরিবারের মতো স্লোগান দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। যদিও বাস্তবে গো বলয়ে এই নীতি খুব একটা কার্যকর হয়নি তা বোঝা যায় দেশের বর্তমান জনসংখ্যায়। ১৪০ কোটি ছাপিয়ে চিনকে পিছনে ফেলে বিশ্ব তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ভারত। তবে রাজ্যভিত্তিক যদি দেখা যায় তবে দক্ষিনের রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যার হার ক্রমশ কমছে। এক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে অন্ধ্রে মোট সন্তান উৎপাদনের হার অনেকখানি কমে গিয়েছে। এই রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, ২০১৯-২১ সালের মধ্যে বিবাহিত মহিলা পিছু সন্তান ১.৭ জন। জন্মহার কমে গিয়েছে। ৭৭ শতাংশ বিবাহিত মহিলা ও ৭৪ শতাংশ বিবাহিত পুরুষের কোনও সন্তান নেই। ২২ শতাংশ মহিলা ও ২৬ শতাংশ পুরুষ প্রথম সন্তানের ২ বছর পর সন্তান নিতে আগ্রহী। ৯০ শতাংশ পুরুষ ও ৮৬ শতাংশ মহিলা এক অথবা দুইয়ের বেশি সন্তান নিতে ইচ্ছুক নন। এই পরিস্থিতিতে বদল আনতে ৩০ বছর পর দুই সন্তান নীতি প্রত্যাহার করল নাইডুর সরকার। বিধানসভায় পাশ করানো হল পঞ্চায়েত রাজ (সংশোধনী) আইন, ২০২৪ এবং অন্ধ্রপ্রদেশ পুর আইন (সংশোধনী) বিল।
সম্প্রতি রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বার্তা দিয়ে নাইডু জানিয়েছিলেন, আধুনিক প্রজন্মের দম্পতিরা একটির বেশি সন্তান নিতে অনিহা প্রকাশ করছেন। যা আগামী দিনের জন্য এঁকে বারেই শুভ সংকেত নয়। এই মানসিকতা দক্ষিণের রাজ্যগুলির জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠবে। একই মত শোনা গিয়েছিল তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর গলায়, তিনি আবার নবদম্পতিদের ১৬টি করে সন্তান নেওয়ার আবেদন জানান। কিন্তু দেশে যখন জনবিস্ফোরণ তখন কেন এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে দক্ষিনের রাজ্যগুলি? এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, এর একটি কারণ অবশ্যই রাজ্যে যুব সম্প্রদায়ের হার কমে যাওয়া। পাশাপাশি সবচেয়ে বড় কারণ হল জাতীয় রাজনীতিতে দক্ষিনের প্রভাব কমে যাওয়ার ভয়।
আসন্ন জনগণনা এবং লোকসভা-বিধানসভা কেন্দ্রের পুনর্বিন্যাস কমিটি জনসংখ্যার নিরিখে আগামিদিনে আসন সংখ্যা পুনর্গঠন করবে। যার ফলে জনসংখ্যা কম হলে দক্ষিণের রাজ্যগুলি গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে জাতীয় রাজনীতিতে। একদিকে উত্তরপ্রদেশের জনসংখ্যা বেশি থাকার জেরে সেখানে আসন সংখ্যা আরও বাড়বে ঠিক উলটোটা হবে দক্ষিনের ক্ষেত্রে। হিসেব বলেছে, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশে কমে যাবে আসন। তামিলনাড়ুতে অবশ্য একটি আসন বাড়তে পারে। তবে উত্তরপ্রদেশের ১১ থেকে ১৩টি আসন বাড়ার সম্ভাবনা। এই পরিস্থিতিতে বদল আনতেই অধিক সন্তানের জন্ম দেওয়ার পক্ষে পুরোনো আইন তুলে দিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু।