নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে (UP Election 2022) প্রথম দু’দফাই বিজেপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রথম দফায় পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মেরঠ থেকে শুরু করে মুজফফরনগর ও দ্বিতীয় দফায় আগ্রা, মথুরা তথা ব্রজভূমি–এই দুই অঞ্চলের শতাধিক আসনে ভোট রয়েছে। একের পর দলিত নেতার দল ছেড়ে সমাজবাদী পার্টিতে চলে যাওয়া, ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে সপা’র জোট, বিজেপির (BJP) কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে।
বাংলার মতোই উত্তরপ্রদেশে দ্বিমুখী লড়াই চাইছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। বিজেপি বনাম সমাজবাদী পার্টি (SP), এই ছবি তুলে ধরতে চাইছে তারা। কংগ্রেস বা মায়াবতীর বসপা-কে নিয়ে তাদের বিশেষ মাথাব্যথা নেই। রাজ্যে দ্বিপাক্ষিক লড়াই হলেই তাঁদের জন্য ভাল বলে দাবি করেছেন বিজেপির প্রথম সারির এক নেতা। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলার প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, “দ্বিমুখী লড়াই তো ভাল। তাতে মানুষের পক্ষেও ঠিক করা সুবিধা কাকে তারা বেছে নেবে। বিগত কয়েক বছরে তো উত্তরপ্রদেশে সেটাই হচ্ছে। আর বাংলাতেই দেখুন না, বাম ও কংগ্রেস একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছে। সেখানেও দ্বিমুখী লড়াই হবে। তাতে আগামিদিনে বিজেপির জন্য ভালোই।” বাংলায় ভোটের ময়দানে দলীয় সাংসদদের নামানো হলেও উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপি সেই রণকৌশল আর প্রয়োগ করবে না বলেই ঠিক হয়েছে। বাংলাতে একাধিক দলীয় সাংসদের পরাজয়ের পরেই এই সিদ্ধান্ত বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
[আরও পড়ুন: Abu Dhabi Drone Attack: আবু ধাবিতে ড্রোন হামলা ইয়েমেনের, মৃত দুই ভারতীয়-সহ ৩]
উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি যে দিনে দিনে জটিল হয়ে উঠছে, তা মুখে স্বীকার না করলেও ভালই বুঝতে পারছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই আর দেরি না করে মাঠে নামতে চলেছেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। গত লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে দেশের সবথেকে বড় রাজ্যে বিজেপির ভাল ফল করার পিছনে শাহ-র ভূমিকাই ছিল প্রধান। এবারে সেখানে নির্বাচনের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের হাতে দেওয়া হলেও পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে শাহ নিজেই পুরো উত্তরপ্রদেশ জুড়ে সফর শুরু করতে চলেছেন। চলতি মাসের ২২ তারিখের পর থেকে শাহ তাঁর রাজ্য সফর শুরু করবেন বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। নির্বাচন কমিশন ২২ তারিখ পর্যন্ত সমস্ত ধরনের রোড শো, সমাবেশ, বাইক রালি নিষিদ্ধ করেছে। এ বিষয়ে কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপ দেখে নিয়েই শাহ-র সফরের কর্মসূচি তৈরি হবে। তবে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক, দলের নেতাদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গার পরিস্থিতি অনুযায়ী রণকৌশল তৈরি ইত্যাদি শাহ নিজেই করে দেবেন বলেই জানা গিয়েছে।
তবে দলের একের পর ওবিসি নেতা ছেড়ে যাওয়ায় বিজেপির যে ক্ষতিই হয়েছে, সে কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন ওই শীর্ষ নেতা। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “দল থেকে যাঁরা চলে যাচ্ছেন তাঁদের নিয়ে আমরা কখনই বলতে পারি না যে, যাচ্ছেন তো কী হয়েছে বা ইচ্ছে হলে যেতে পারেন। বিজেপির সেই ঔদ্ধত্য নেই। আমরা আলোচনায় বিশ্বাসী। স্বামী প্রসাদ মৌর্য দল ছাড়ার পরেও আমাদের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য তাঁকে আলোচনায় ডেকে টুইট করেছিলেন। সেটা হয়েছিল দলের নির্দেশেই।” প্রথম দু’দফার প্রার্থী তালিকায় ২০ জন বিধায়কের নাম বাদ গিয়েছে। তঁাদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়াই মূল কারণ বলে জানিয়েছেন শীর্ষ নেতা।
[আরও পড়ুন: Abu Dhabi Drone Attack: আবু ধাবিতে ড্রোন হামলা ইয়েমেনের, মৃত দুই ভারতীয়-সহ ৩]
রাজ্যের ৪০৩টি বিধানসভা আসনের মধে্য ৩৩০টির বেশি আসনে বিজেপি সদস্যদেরই টিকিট দেওয়া হবে এবং এক পরিবারে একজনকেই টিকিট দেওয়া হবে বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তঁার বক্তব্য, “আমাদের লড়াই জাতপাত, তোষণের রাজনীতি ও পরিবারবাদের সঙ্গে। তাই একই পরিবারের দু’জন সদস্যকে কোনওভাবেই টিকিট দেওয়া হবে না। তবে বাবা যদি নিজের পরিবর্তে ছেলে, মেয়ে বা পরিবারের অন্য সদস্যের জন্য টিকিট চায়, সে বিষয়টি দল অবশ্যই ভাবনা চিন্তা করবে।”