সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অপারেশন সিঁদুর ও কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের মামলায় অন্তবর্তী জামিন পেলেন অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলি খান মেহমুদাবাদ। বুধবার তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে তাঁর বিরুদ্ধে যে তদন্ত চলছিল, তাতে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি আদালত। অধ্যাপককে ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, “এত সস্তা প্রচারের লোভ কেন? একদল দানব এসে দেশকে আক্রমণ করল আর আপনি এই ধরণের মন্তব্য করলেন!” পাশাপাশি, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যেতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হরিয়ানা পুলিশকে একটি সিট গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
বুধবার মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং এন কোটিশ্বর সিংয়ের ডিভিশন বেঞ্চ বলে, “বাকস্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের অধিকার সবার রয়েছে। কিন্তু এখন কি এই সব নিয়ে কথা বলার সময়? একদল দানব এসে আমাদের দেশের নাগরিকদের আক্রমণ করেছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সেখানে এত সস্তার প্রচারের লোভ কেন?”
আদালতের পর্যবেক্ষণ, স্বাধীন দেশের স্বাধীন সমাজে এই ধরনের মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান এবং অস্বস্তিতে ফেলার জন্য জন্য এরকম শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছে। এমন ভাষা যা অন্যকে আঘাত করতে পারে, তার ব্যবহার থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত। এরপরই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে তদন্ত পক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি সিট গঠনের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তবে সেই নির্দেশে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, এই সিটে যেন হরিয়ানা বা দিল্লির কোনও আধিকারিক না থাকেন। পাশাপাশি, সেখানে একজন মহিলা আধিকারিক থাকা বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছে আদালত।
পর্যটকদের ধর্ম জিজ্ঞাসা করে গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল জঙ্গিরা। যার প্রত্যাঘাতে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯ জায়গায় হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। এই ঘটনার পর দেশবাসীকে গোটা ঘটনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দুই মহিলা সেনা আধিকারিক। একজন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও দ্বিতীয়জন উইং কমান্ডার ভ্যোমিকা সিং। ভারতীয় মহিলাদের সিঁদুর মোছার বদলায় দুই মহিলা মুখকে সামনে আনা ছিল যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। পাশাপাশি ওই সাংবাদিক বৈঠকে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু দুই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছিল নিভৃতে।
এই ঘটনার পর সোশাল মিডিয়ায় অপারেশন সিঁদুর ও সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, অপারেশন সিঁদুর ও সোফিয়া কুরেশিকে সামনের সারিতে তুলে আনার ঘটনা লোক দেখানো। আসলে নাটক করা হচ্ছে সরকারের তরফে। পাশাপাশি তিনি লেখেন, ‘আমি খুশি যে সংবাদমাধ্যম মানুষ কর্নেল সোফিয়া কুরেশির প্রশংসা করছেন। তাহলে এরা কি একইভাবে সেই ঘটনাগুলির প্রতিবাদ করবেন গণপিটুনি, বুলডোজার ও সংখ্যালঘুদের উপর ঘৃণা ছড়ানোর ঘটনায়।’ অপারেশন সিঁদুর নিয়ে অধ্যাপকের এহেন মন্তব্যের প্রতিবাদে সরব হন নেটিজেনরা। ঘটনার পর হরিয়ানার রাজ্য মহিলা কমিশনের তরফে নোটিস পাঠানো হয় আলি খান মেহমুদাবাদকে। তারপরই গ্রেপ্তার হন অধ্যাপক।
