সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নদী যখন যুদ্ধের হাতিয়ার! এবার প্রকৃতিকেই ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার ছক কষেছে চিন। ব্রহ্মপুত্র নদের উপর পৃথিবীর সব থেকে বড় বাঁধ তৈরি করতে চলেছে বেজিং। ছাড়পত্র মিলেছে এই প্রকল্পের। যা চিন্তা বাড়িয়েছে ভারতের। এই বাঁধটি তৈরি করে ফেললে ব্রহ্মপুত্রের জল নিজেদের ইচ্ছে মতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কমিউনিস্ট দেশটি। এমনটা হলে কখনও বন্যা আবার কখনও খরার কবলে পড়বে অসমের মতো উত্তর-পূর্বের একাধিক রাজ্য। তাই গোটা পরিস্থিতির উপর তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে নয়াদিল্লির।
চিন অধিকৃত তিব্বত অঞ্চলের উৎসস্থল থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে ইয়ারলাং জ্যাংবো নদী। অরুণাচলে পৌঁছে এর নাম হয়েছে সিয়াং। আর অসমে প্রবেশ করার পরে এই সিয়াংই পরিচিত হয় ব্রহ্মপুত্র নামে এবং এর পর ফের সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তা। জানা গিয়েছে, এই অরুণাচল সীমান্তের কাছাকাছি তিব্বতের মেডগ কাউন্টিতে ইয়ারলাং জ্যাংবো নদীর উপর বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করেছে বেজিং। এই প্রকল্পে খরচ করা হচ্ছে ১৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চিনের দাবি পৃথিবীর সবথেকে বড় বাঁধ হতে চলেছে এটিই। যা ইতিহাস গড়বে। হংকংয়ের ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের আর কোনও প্রকল্পে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়নি।
বলে রাখা ভালো, এই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা চিনের বহুদিনের। এর আগেও এনিয়ে বেজিংয়ের বিরোধিতা করেছে ভারত। বাংলাদেশও এই বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু চিন বারবার বোঝাতে চেয়েছে এতে অন্য দেশের কোনও সমস্যা হবে না। প্রকৃতির রোষের কথা ভেবে কিছুটা থমকে যায় সেই বাঁধের স্বপ্নপূরণ। তবে এখন তেড়েফুঁড়ে উঠেছে বেজিং। যা নতুন করে চিন্তায় ফেলেছে দিল্লিকে। এর আগেও ব্রহ্মপুত্রের উপরে একাধিক ছোট–বড় বাঁধ নির্মাণ করেছে শি জিংপিনের দেশ।
এর আগে চিন জানিয়েছিল, নতুন এই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের জাতীয় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই। ইতিহাসে এমন প্রকল্পের উল্লেখ নেই। চিনের জলবিদ্যুৎ শিল্পে এ এক ঐতিহাসিক সময়। এটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও পরিবেশ সংরক্ষণ, জাতীয় নিরাপত্তা, জীবনযাপনের মানোন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। প্রসঙ্গত, নদীর অবস্থানের সুবাদে ভারতের চেয়ে অনেক সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে চিন। বিশেষ করে তিব্বত অঞ্চল নিজেদের দখলে রাখার পরে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম নদীগুলোর উৎস রয়েছে বেজিংয়ের কবজায়। এর মধ্যে ৪৮% নদীর জলই ভারতের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলে। নয়া এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে স্বভাবতই জল কমে যাবে ব্রহ্মপুত্রের। আবার বর্ষার সময় বাঁধের জল ছাড়লে অসমের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, বাংলাদেশের একাধিক জায়গা জলের তলায় চলে যেতে পারে।