সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সোমবার থেকে শুক্রবার। কেটেছে পাঁচদিন। শনিবার ধরলে টানা ৬ দিন ৭০০ ফুট বোরওয়েলের ১৫০ ফুট গভীরে আটকে ৩ বছরের চেতনা। এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, র্যাট হোল মাইনরদের উপস্থিতি, তিনটি জেসিবি মেশিন, দুটি পাইলিং মেশিন, দুটি ক্রেন, ১০টি ট্রাক্টর- সহ একাধিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেও এখনও উদ্ধার করা যায়নি শিশুকন্যাটিকে। এরপরই প্রশ্ন উঠছে কেন এত সময় লাগছে। প্রশাসন কি সঠিক সময়ে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি? কেন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন উদ্ধারকারীরা?
উদ্ধারকারী দলের কাছে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, মাটির তলায় থাকা পাথরের স্তর। বোরওয়েলের চারপাশে খননকার্য চালাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। বারবার পাথরে আটকে যাচ্ছে মেশিন। বৃহস্পতিবার বিকেলে কোটপুতলি-বেহরোর জেলা কালেক্টর কল্পনা আগরওয়াল জানান, মাটির তলায় পাথর থাকায় সমস্যা হচ্ছে। ১৫৫ ফুটে গিয়ে আটকে যায় মেশিন। ফের নতুন পাইলিং মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে।
প্রশাসনের আধিকারিকরা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেছেন বলে অভিযোগ চেতনার পরিবার ও স্থানীয়দের। শিশুকন্যাটি সোমবার সকালে বোরওয়েলে পড়ে যাওয়ার পর দেশীয় পদ্ধতিতে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। সেই চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর জয়পুর থেকে এসডিআরপিএফের দলকে ডাকা হয়। ঘটনাস্থলে আসতে আসতে তাঁদের সোমবার রাত হয়ে যায়। রাতভর উদ্ধারকার্যের বিশেষ অগ্রগতি হয়নি। অভিযোগ, আধিকারিকরা রাতভর আলোচনা করেছেন।
রাজস্থানের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলা এই উদ্ধারকার্যে আরও দেরির অন্যতম কারণ দেশি সরঞ্জামের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা। দুর্ঘটনার দিন রাত ৯টার দিকে স্থানীয় একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ দলের উপস্থিতিতে, বাড়িতে তৈরি ছাতা এবং রিং রড ব্যবহার করে প্রথমে উদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়। ২৪ ডিসেম্বর রাতে মেয়েটিকে একটি হুকে আটকে ১৫ ফুট উপরে তুলে আনা হয়। ব্যস, ওই টুকুই। তারপর থেকে আর উপরে আনা যায়নি। প্রশ্ন উঠছে, উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার না করে কেন দেশি ব্যবস্থার উপর বেশি ভরসা করা হল?
এছাড়াও উদ্ধারকার্যে ব্যবহৃত পর্যাপ্ত যন্ত্র স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ছিল না। হরিয়ানার বেসরকারি সংস্থার থেকে তা আনতে হয়েছে। ফলে অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে। এদিকে বড় মেশিনগুলোকে ঘটনাস্থলে আনতে প্রশাসনকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। যার জেরে উদ্ধারে বেশ কিছু সময় নষ্ট হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
উদ্ধারকার্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আবহাওয়াও। চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে বৃষ্টি ও প্রতিকূল আবহাওয়া জেরে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে উদ্ধারকারীদের। বারবার উদ্ধার অভিযান বন্ধ রাখতে হয়েছে। এনডিআরএফের ইনচার্জ যোগেশকুমার মীনা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টির কারণে বারবার উদ্ধারকাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ভিতরে ৫টি পাইপের ভিতরে প্রবেশ করিয়েছি তা ঢালাইয়ের কাজ চলছিল, কিন্তু বৃষ্টির কারণে আমাদের সমস্যা হচ্ছে।
তবে আশার আলো, সমস্ত বাধা কাটিয়ে বোরওয়েলের পাশে খোঁড়া গর্ততে কেসিং পাইপ প্রবেশ করানো হচ্ছে। তারপর নব্বই ডিগ্রি কোণে হাতে খননকার্য চালিয়ে চেতনার কাছে পৌঁছবেন উদ্ধারকারীরা। এই সময়ে চেতনা যাতে আরও গভীরে না চলে যায় তার জন্য একটি হুক দিয়ে তাকে আটকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন ধীরে ধারে গর্তে প্রবেশ করেছেন উদ্ধারকারীরা। তবে আরও কতক্ষণ লাগবে উদ্ধারকার্যে? সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, চেতনাকে উদ্ধার করতে শনিবার বিকেলে হয়ে যেতে পারে।
এদিকে তার মায়ের শারীরিক অবস্থাও খারাপ। সোমবার থেকে তিনি না খেয়ে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গোটা গ্রামের একটাই প্রার্থনা চেতনাকে যেন জীবন্ত উদ্ধার করা যায়।