সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: এনডিএ-র বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া’র লড়াই আদৌ কি সফল হবে? নয়া নামকরণে নয়া জোট গঠনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃহত্তম শরিক কংগ্রেসের যা ভাবভঙ্গি, তাতে উঠে গেল এই প্রশ্ন। বামেদের সুরেই ২৪, আকবর রোড কার্যত ইঙ্গিত দিয়ে রাখল ‘ইন্ডিয়া’তে যতই পাশাপাশি বসুন সোনিয়া-মমতা-রাহুল, বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করবে কংগ্রেস (Congress)। আবার একইভাবে কেরল ও ত্রিপুরাতেও বামেদের বিরুদ্ধে লড়বে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল।
বিহারের বৈঠকের পরই সিপিএম (CPIM) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি (Sitharam Yechuri) ইউপিএ আমলের উদাহরণ টেনে বলেছিলেন, সেই সময়ও যা হয়েছিল, এবারও তাঁরা সেভাবেই এগোবেন। অর্থাৎ, বিজেপিকে ঠেকাতে নির্বাচন পরবর্তী সমঝোতা। তাঁর বক্তব্য ছিল, সেবারও ৫৭টি আসনে কংগ্রেসকে হারিয়ে সংসদে এসেছিলেন বাম সাংসদরা। দেশের স্বার্থে সেই কংগ্রেসকেই আবার সমর্থন করে তৈরি হয়েছিল মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার।
[আরও পড়ুন: প্রকাশিত হল বিশ্বের পাসপোর্টের ক্রমতালিকা, কত নম্বরে ভারত?]
এবার কংগ্রেসের মুখেও শোনা গেল কার্যত সেই বুলি। আসন সমঝোতার সমীকরণকে ভবিষ্যতের গর্ভে ঠেলে দিয়েও আগেরদিন বেঙ্গালুরুতে উপস্থিত থাকা এক কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, কেরলে কোনওভাবেই এলডিএফ (LDF) এবং ইউডিএফের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই সম্ভব নয়। আবার পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলায় যা ঘটেছে, তাতে প্রদেশ স্তরের নেতৃত্বের বক্তব্যও ফেলে দেওয়ার নয়। বলছিলেন, “আসন সমঝোতা নয়। বৃহত্তর স্বার্থে নীতিগত লড়াইয়ের জন্যই আমরা সবাই সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছি।” প্রশ্ন উঠছে, এ কেমন দ্বিচারিতা? একদিকে বিজেপি বিরোধী লড়াই করার জন্য প্রত্যেককে একত্রিত করার চেষ্টা, আবার পরমুহূর্তেই তার বিরুদ্ধাচরণ করলে কি আদৌ সাফল্য পাবে INDIA?
[আরও পড়ুন: কর্ণাটক বিধানসভায় ধুন্ধুমার, অধ্যক্ষের সঙ্গে ‘অভব্য’ আচরণ, সাসপেন্ড ১০ বিজেপি বিধায়ক]
এদিন, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রণদীপ সিং সুরজেওয়ালার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কোন ফর্মুলায় আসন সমঝোতা করবে জোট। উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের কয়েকজন নেতার আপত্তির কথাও। বলেন, “এতগুলো দল একসঙ্গে এলে বৈচারিক বৈপরীত্য, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকাটাই স্বাভাবিক। দেশ ও জাতির স্বার্থে সেগুলো সরিয়ে রেখেই আমাদের চলতে হবে।” বিজেপির ‘ইন্ডিয়া’-‘ভারত’ বিভাজন প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছে কংগ্রেস। এক শ্রেণির বক্তব্য, অবশেষে রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) দেশের ভিতর দুই দেশ তত্ত্ব মেনে নিল বিজেপি। যেখানে রাহুল দাবি করতেন ইন্ডিয়া হল মোদি ঘনিষ্ঠ কয়েকজন শিল্পপতি ও হাতেগোনা কিছু উচ্চবিত্তের। আসল আসল ভারত হল কোটি কোটি মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের। জয়রাম রমেশের প্রশ্ন, “ইন্ডিয়া যদি ঔপনিবেশিক বিষয় হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল ইন্ডিয়া, স্কিল ইন্ডিয়া, স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া-সহ অন্য প্রকল্পগুলির নামকরণ নিয়ে তাঁদের ‘বস’ মোদিজিকেও প্রশ্ন করুন বিজেপি নেতারা।” পাশাপাশি কংগ্রেসের বক্তব্য, শুধু ‘ইন্ডিয়া’ নয়। তাদের নামকরণে আছে ‘ভারত’-ও। কারণ নয়া জোটের ট্যাগলাইন হল, ‘জিতেগা ভারত’। অর্থাৎ ভারত জিতবে।