সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে 'অভিন্ন দেওয়ানি বিধি' লাগু নিয়ে বিতর্কের মাঝেই এবার বড় পর্যবেক্ষণ কর্নাটক হাই কোর্টের। এক মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে উচ্চ আদালত কেন্দ্র ও রাজ্য বিধানসভাগুলিকে প্রস্তাব দিল অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আইন প্রণয়নের। আদালতের পর্যবেক্ষণ, শুধুমাত্র এই আইনই পারে সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদের মূল উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করতে।
এক মুসলিম মহিলার সম্পত্তি বণ্টন সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে রায় ঘোষণা করতে গিয়ে আদালত 'মুসলিম পার্সোনাল ল'-এর বিরোধিতায় সরব হন। বিচারপতি সঞ্জীব কুমার দেশের আইন ও 'মুসলিম পার্সোনাল ল'-এর মধ্যকার বৈষম্য তুলে ধরে বলেন, হিন্দু কন্যারা সমস্ত বিষয়ে পুত্রের সমান আইনি অধিকার পান। যা মুসলিম মহিলারা পান না। এহেন লিঙ্গ বিভাজন মুছে দিয়ে সংবিধানে সমতা রক্ষার জন্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রয়োজন রয়েছে। এই আইন বাস্তবায়িত হলেই দেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪-এর উদ্দেশ্য সফল হবে। দেশের ধর্মের ভিত্তিতে মহিলাদের প্রতি বঞ্চনা করার কুপ্রবণতা বন্ধ হবে।
শুধু তাই নয়, এই মামলার রায় দিতে গিয়ে আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার যাতে অবিলম্বে 'অভিন্ন দেওয়ানি বিধি' আইন প্রণয়নে সচেষ্ট হয় তার জন্য আদালতের তরফে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হবে। বিচারপতি আরও জানান, এই আইন সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদের অধীনে সংবিধানের প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলির উদ্দেশ্য পূরণ করবে। যেগুলি হল, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও জাতীয় সংহতি।
উল্লেখ্য, দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আইন (Uniform Civil Code) কার্যকর হয়েছে উত্তরাখণ্ড। যে আইনে একাধিক নিয়মের পাশাপাশি উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে যাতে সন্তান সমানাধিকার পায়, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে পুত্র ও কন্যা উভয়েই পাবেন সমানাধিকার। বিয়ের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স থাকবে ২১ বছর, যা আগে থেকেই কার্যকর রয়েছে। নিজ নিজ সম্প্রদায়ের রীতি-রেওয়াজ মেনে বিয়ে করতে পারবেন দম্পতি। তবে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। দেবভূমির পর এই আইন পাশ করতে উদ্যোগী হয়েছে আরও দুই বিজেপি শাসিত রাজ্য গুজরাট ও গোয়া। বিজেপির শীর্ষ নেতাদের মুখেও বারবার শোনা গিয়েছে 'এক দেশ এক আইন'-এর কথা। সেখানে হাই কোর্টের এহেন প্রস্তাব এক দেশ এক আইনের পথে মোদি সরকারকে আরও একধাপ এগিয়ে দিল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।