shono
Advertisement
Royal Bengal Tiger

কোথায় লুকিয়ে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার? আতঙ্কের চাণ্ডিলে দ্বিতীয় শিকারই বলবে অবস্থান

রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আতঙ্কে ১৮৯ (৪) ধারা জারি করা হয়েছে সরাইকেলা-খরসোওয়া জেলার চৌকা থানার বালিডি জঙ্গল সহ লাগোয়া ১০ টি গ্রামে।
Published By: Sucheta SenguptaPosted: 09:35 PM Jan 04, 2025Updated: 09:45 PM Jan 04, 2025

সুমিত বিশ্বাস, ঝাড়খণ্ড: প্রথম শিকারের পর পার হয়ে গিয়েছে চারদিন। কিন্তু পদচিহ্ন ছাড়া বনদপ্তরের ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা দেয়নি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। তাই বাঘের সঠিক অবস্থান বুঝতে 'সেকেন্ড কিলিং' অর্থাৎ তার দ্বিতীয় শিকারের দিকে তাকিয়ে ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ। এদিকে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আতঙ্কে ১৮৯ (৪) ধারা জারি করা হয়েছে সরাইকেলা-খরসোওয়া জেলার চৌকা থানার বালিডি জঙ্গল সহ লাগোয়া ১০ টি গ্রামে। চাণ্ডিল মহকুমা প্রশাসন এই নির্দেশিকা জারি করেছে। আদেশনামায় উল্লেখ, পাঁচজনের বেশি মানুষ একসঙ্গে ওই জঙ্গলে যেতে পারবেন না। তবে রয়্যাল বেঙ্গলের আতঙ্কে বালিডি, তুলগ্রাম, কুড়লি, খুঁটি, চৌকা, ঘোড়ালিঙ্গী, জুরগু, রাইডি, দুলমির বিস্তীর্ণ এলাকার একজনও ওই জঙ্গলপথে পা মাড়াচ্ছেন না! ফলে জঙ্গলে গিয়ে বনজ সম্পদ সংগ্রহ সম্পূর্ণ বন্ধ। গবাদি পশু থাকছে বাড়ির উঠোনে। ফলে টান রুটি-রুজিতে।

Advertisement

সন্ধ্যা হলেই যেন রাত নেমে আসছে ওই বালিডি পাহাড়তলিতে। পরিস্থিতি এমনই যে শৌচকর্মের জন্যও রাতে কেউ ঘর থেকে বেরতে সাহস পাচ্ছেন না। গ্রাম জুড়ে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় ক্ষোভ বাড়ছে জঙ্গল লাগোয়া ওই গ্রামগুলিতে। এদিকে ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা পুরুলিয়ার রেঞ্জগুলিতে পুরুলিয়া বনবিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী, শনিবার থেকে জলাশয়ের পাশে বাঘের পায়ের ছাপ রয়েছে কিনা তার খোঁজ চলছে। আসলে এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার যেভাবে জিনাতকে খুঁজতে প্রতি রাতে ১৫ কিলোমিটারের বেশি হাঁটছে, তাতে উদ্বিগ্ন পুরুলিয়া বনবিভাগ। সেই কারণেই বলরামপুর, বাঘমুন্ডি বনাঞ্চলে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। চাণ্ডিল রেঞ্জ আধিকারিক শশীরঞ্জন প্রকাশ বলেন, "ট্র্যাপ ক্যামেরায় বাঘের ছবি এখনও মেলেনি। তবে আমাদের ধারণা, বালিডি জঙ্গলেই রয়েছে। সঠিক অবস্থান তখনই বুঝতে পারব সেকেন্ড কিলিং যখন হবে। আমরা সেই দিকেই তাকিয়ে আছি।"

গবাদি পশুদের আর বনে চড়াতে নিয়ে যাচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: অমিত সিং দেও।

ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞদের কথায়, একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পেট ভর্তি করে খাওয়ার পর ৬-৭ দিন পর আবার শিকার করে। যেহেতু গত মঙ্গলবার একটি গবাদি পশুকে 'খুন' করার পাশাপাশি বাছুর নিয়ে চলে যায়। তাতে চাণ্ডিল রেঞ্জ কর্তৃপক্ষের ধারণা, রবি-সোমবারের মধ্যেই সেকেন্ড কিলিং করতে পারে। সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের জিনাত ওরফে গঙ্গার গলায় রেডিও কলার থাকার পরেও ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বাংলা - তিন রাজ্যের বনদপ্তরকে নাকানি চোবানি খাইয়েছিল। আর এই রয়্যাল বেঙ্গলের গলায় কোন রেডিও কলার না থাকায় প্রযুক্তিগত সহায়তা পাচ্ছে না ঝাড়খণ্ড বন বিভাগ। ফলে চাপ ক্রমশ বাড়ছে ওই রেঞ্জ কর্তৃপক্ষের।

জিনাতের ক্ষেত্রে রেডিও কলার থাকায় তাকে ধরতে ফাঁদ পাতা হয়েছিল। বালিডির এই ঘন জঙ্গলে এখনও পর্যন্ত সেরকম কোনও পদক্ষেপ নেয়নি ঝাড়খণ্ড বনদপ্তর। তবে কোনওরকম যাতে অঘটন না ঘটে, তাই বনদপ্তরের সচেতনতার প্রচারে মাইকিং চলছেই।

সিমলিপালের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগ্রেস জিনাত। ছবি: অমিত সিং দেও।

গত মঙ্গলবার বালিডির জঙ্গলে সুমিত মাহাতো নামে ১৩ বছরের যে কিশোর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দর্শন করেছিল, সে এখনও ভয়ে কাঁটা! রেঞ্জ কর্তৃপক্ষ তার বয়ান রেকর্ড করে রেখেছে। শনিবার সন্ধ্যায় তার বাড়িতে গিয়ে প্রথমে তাকে পাওয়া যায়নি। অনেক অনুরোধের পর তাকে সামনে নিয়ে আসা হয়। চোখমুখ দেখেই মনে হয় ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছে সে। একাধিক প্রশ্ন করার পর তার সংক্ষিপ্ত জবাব, "গরু নিয়ে জঙ্গলে গিয়েছিলাম। ছাগলকে পাতা খাওয়াব বলে গাছের উপরে উঠেছি। এই সময় দেখি, হলুদ ডোরাকাটা টাইগার কয়েকটা গরুকে তাড়া করছে। একটা হালকা বাদামি রঙা গরুকে ধরতে গিয়েও ফসকে যায়। পরে একটা সাদা গরুকে চোখের সামনে মেরে ফেলে। সঙ্গে বাছুর ছিল। সেটার কী হল আর বুঝতে পারিনি।"

ব্যাঘ্র দর্শনকারী কিশোর সুমিত মাহাতো এখনও ভয়ে কাঁটা। ছবি: অমিত সিং দেও।

এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আতঙ্ক শুধু বালিডি জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে নয়, চৌকা সদর থেকে চাণ্ডিল শহরে এমনভাবে চেপে বসেছে যে ড্যাম লাগোয়া এলাকায় এই শীতের মরশুমেও সেভাবে পিকনিক পার্টি আসছে না। চাণ্ডিল শহর লাগোয়া ড্যামের পাশে গাঙ্গুডি, পুনর্বাস, ভালুককোচার মানুষজনও সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বার হচ্ছেন না। রাত আটটাতেই চান্ডিল শহর শুনশান। চৌকা সদরের চা বিক্রেতা নকুলচন্দ্র মণ্ডল বলেন, "আগে আমরা রাত নটার পর চা দোকান বন্ধ করতাম। এখন সন্ধ্যা সাতটাতেই সবকিছু গুটিয়ে নিচ্ছি। বাঘটা ধরা না পড়া পর্যন্ত ভয় কাটছে না।" বালিডি গ্রামের বাসিন্দা মঙ্গল সিং মুন্ডার কথায়, "ফরেস্টাররা জঙ্গলে যেতে নিষেধ করায় আমাদের রুটি-রুজি সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জঙ্গল থেকে কাঠ এনে তা বিক্রি করে আমাদের সংসার চলে। জানি না কবে আবার সব স্বাভাবিক হবে।" চৌকায় লোহা কারখানায় কাজ করা দেবনাথ সিং মুন্ডা বলেন, "আমরা জঙ্গল পথ দিয়ে ওই কারখানায় কাজ করতে যেতাম। এখন আমাদের ঘুর পথে যেতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর আর কেউ ঘর থেকে বার হচ্ছে না। এমনকি রাতের বেলায় শৌচকর্ম করতেও না।" 

রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আতঙ্কে সন্ধ্যাতেই শুনশান চাণ্ডিল। ছবি: অমিত সিং দেও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
Advertisement