সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বেঙ্গালুরু পুলিশের মতে চারটি বুলেটের কার্টরিজ পড়েছিল ঘটনাস্থলে। বেসরকারি সূত্রে খবর, তিনটি বুলেট লেগেছিল সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের শরীরে। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল গোটা জায়গা। একটি বুলেট ফুঁড়ে দিয়েছিল প্রবীণ সাংবাদিকের মাথা। কে বা কারা করেছে এই কাজ? কেনই বা ৫৫ বছরের সাংবাদিককে এভাবে খুন হতে হল? এই প্রশ্নই উঠছে বিভিন্ন মহলে। দুটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্তের জন্য তিনটি দল গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রামলিঙ্গ রেড্ডি। সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছে গৌরীর পরিবার। টুইটারে শোকপ্রকাশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের খুনের ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। অত্যন্ত উদ্বেগেরও। আমরা এই খুনের বিচার চাই।”
কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী টুইটারে বলেছেন, “সত্যের কণ্ঠরোধ এভাবে করা যাবে না। গৌরী লঙ্কেশ আজীবন আমাদের হৃদয়ে থাকবেন। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। দোষীদের কড়া শাস্তি হওয়া উচিত।”
আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “নতুন এই ভারতে গৌরী লঙ্কেশের মতো এক প্রতিবাদী সাংবাদিক ও দক্ষিণপন্থী রাজনীতির কট্টর সমালোচকের কণ্ঠরোধ করা হল। খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে চলেছি আমরা।” লালু-পুত্র তেজস্বী যাদব বলেছেন, “স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এক বড় বিপদ ঘনিয়ে এসেছে। এর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াই করতে হবে।” ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও।
[২ লক্ষের বেশি ভুয়ো সংস্থার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক]
কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া জানিয়েছেন, “পুলিশ কমিশনার ও ডিজির সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। দোষীদের দ্রুত ধরার নির্দেশ দিয়েছি। দোষীদের কোনওভাবে রেয়াত করা হবে না। কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।” খুনের নিন্দা করে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের টুইট, “গৌরী লঙ্কেশের হত্যার ঘটনায় মর্মাহত। যত দ্রুত সম্ভব দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।” লঙ্কেশের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এদিন রাতেই ঘোষণা করা হয়, বুধবার দিল্লি প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাবেন। ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন প্রখ্যাত সাংবাদিকরাও।
‘লঙ্কেশ পত্রিকে’র সম্পাদক গৌরী লঙ্কেশ ছিলেন প্রখ্যাত কবি-সাহিত্যিক পি লঙ্কেশের কন্যা। পি লঙ্কেশের সম্পাদনাতেই শুরু হয়েছিল পত্রিকাটি। মঙ্গলবার ভোরেও গৌরী লঙ্কেশ টুইট করে বলেছিলেন, “আমরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করছি। কিন্তু আমরা সকলেই জানি কারা আমাদের আসল শত্রু। সেদিকেই আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত।” বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার টি সুনীল কুমার জানিয়েছেন, রাত আটটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে। খুব কাছ থেকে ওই সাংবাদিককে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। তাঁর মাথায় ও পাঁজরে গুলি লাগে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই মহিলা সাংবাদিকের। কমিশনার জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে ওই সাংবাদিকের ফোনে দু’বার কথা হয়। সেই সময় গৌরী লঙ্কেশ প্রাণহানির বিষয়ে কোনও কথা অবশ্য পুলিশ কমিশনারকে বলেননি। দুষ্কৃতীরা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ এম এম কালবুর্গির মতোই একই কায়দায় গৌরী লঙ্কেশকেও হত্যা করেছে বলে জানা গিয়েছে। পরিকল্পনা করেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অনুমান পুলিশের।
এই খুনের পিছনে কারা জড়িত থাকতে পারে? পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সঠিকভাবে কারা এই খুনের পিছনে জড়িত তা জানা যায়নি। বাড়ি ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা হচ্ছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে। শোনা গিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে বাইকে করে হেলমেট পড়া দুই দুষ্কৃতীকে আসতে দেখা গিয়েছে। এই হত্যার পিছনে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের হাত রয়েছে বলে দাবি উঠেছে কোনও কোনও মহলে। গত বছরই বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে একটি খবর প্রকাশ করেছিলেন গৌরী। তাঁর বিরুদ্ধে মানহানি মামলাও দায়ের করা হয়। এমনকী, এ জন্য ওই মহিলা সাংবাদিককে ছ’মাস জেলেও থাকতে হয়েছিল। দিতে হয়েছিল বিরাট অঙ্কের জরিমানাও। কিন্তু এরপরও তাঁর প্রতিবাদী লেখনি থামেনি। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সমালোচক ছিলেন তিনি। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন দক্ষিণপন্থী সংগঠনের সঙ্গেও তাঁর প্রবল বিরোধ চলছিল। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শেষ হলেই স্পষ্ট হবে, এই খুনের সঙ্গে কারা জড়িত। ইতিমধ্যেই কর্নাটকজুড়ে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে।
[নতুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘অনন্ত’ অভিযোগ, কী করবেন মোদি?]
The post সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের নির্মম হত্যা, বিচারের দাবি মমতার appeared first on Sangbad Pratidin.