সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের একবার কাঠগড়ায় বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা। এবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে গুরুগ্রামের ফর্টিস হাসপাতাল। যেখানে এক ডেঙ্গি আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসার বিল ছাড়িয়ে গেল ১৮ লক্ষ টাকা। যদিও তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। ১৫ দিন লড়াইয়ের পর ফর্টিস হাসপাতাল থেকে রোকল্যান্ড হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার পরই মৃত্যু হয় সাত বছর বয়সি শিশুকন্যা আধ্যার। সম্প্রতি ঘটনার কথা প্রকাশ্যে এসেছে টুইটার মারফত। আর তাতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা দেশে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, যতই বেসরকারি হাসপাতাল হোক, একজন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য এত টাকা বিল হয় কীভাবে? এদিকে, মেয়েটির বাবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতি এবং অতিরিক্ত বিল তৈরির অভিযোগ এনেছেন। এমনকী হাসপাতাল স্থানান্তরিত করার সময় অ্যাম্বুল্যান্স না দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। ঘটনার কথা জানতে পেরেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা।
[বাড়ির ছাদেই তৈরি ‘মোদি’ বিমান, কীর্তি মুম্বইকরের]
জানা গিয়েছে, গত ২৭ আগষ্ট দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী আধ্যাকে জ্বরের কারণে রকল্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি হয়। দু’দিন পর জানা যায়, সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এরপরই পরিবারের লোকজনকে চিকিৎসকরা আধ্যাকে অন্য হাসপাতালে ভরতি করার পরামর্শ দেন। সেই মতো ৩১ আগস্ট আধ্যাকে ভর্তি করা হয় ফর্টিসে। টানা ১৫ দিন রাখা হয় আইসিইউতে। কিন্তু এর মধ্যেই তার অবস্থার আরও অবনতি হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর চিকিৎসকরা জানান, আধ্যার মস্তিকের ৭০ শতাংশ অংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এরপরই পরিবারের লোকজন তাকে ফের একবার রকল্যান্ড হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে। সেখানেই মৃত্যু হয় ওই শিশুকন্যার। এদিকে, ফর্টিস হাসপাতালের বিলের খতিয়ান হাতে পেয়ে ততক্ষণে চক্ষু চড়কগাছ আধ্যার পরিবারের। তাঁরা জানতে পারেন, ফর্টিস হাসপাতালের বিল হয়েছে ১৮ লক্ষ টাকা।
[বান্ধবীকে নিয়ে জয় রাইডের নামে বাইক নিয়ে উধাও বন্ধু]
হাসপাতালের তরফ থেকে দেওয়া বিলে দেখা যাচ্ছে, আধ্যাকে ১৫ দিনে ৬৬০টি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এক-একদিন ওই ছোট্ট শরীরে দেওয়া হয়েছে ৪০টি ইঞ্জেকশন। এছাড়া শেষ পাঁচদিনে ভেন্টিলেশনে থাকা মেয়ে বেঁচে আছে কিনা তা জানতে এমআরআই বা সিটি স্ক্যানের কথা বলা হলেও ফর্টিস হাসপাতালের চিকিৎসকরা সেটা করতে চাননি। এমনকী বিলে দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলির বিকল্প ওষুধের দাম অনেক কম। যেমন- কোনও ওষুধের দাম যদি ৫০০ টাকা হয়, সেটি না দিয়ে আধ্যাকে দেওয়া হয়েছে ৩১০০ টাকা দামের ওষুধ। অথচ দু’টি ওষুধের কাজই কিন্তু এক। এছাড়া ২৭০০ হাতের গ্লাভস ব্যবহারের জন্য ধার্য করা হয়েছে ১৭ হাজার ১৪২ টাকা। রক্ত পরীক্ষা-সহ অন্যান্য পরীক্ষার জন্য খরচ ধার্য করা হয়েছে ২ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা। এছাড়া জানা গিয়েছে, বিলের বকেয়া টাকা না মিটিয়ে শিশুটিকে প্রথমে ছাড়তে চায়নি ফর্টিস হাসপাতাল। পরে একটি ‘লিভ এগেইনস্ট মেডিক্যাল অ্যাডভাইস’ নামে একটি চিঠিতে পরিবারের লোককে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া হয়। তারপরই শিশুটিকে ছাড়তে রাজি হয় তাঁরা। এছাড়া অমানবিকতার আরও অভিযোগ উঠছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, স্থানান্তরিত করার সময় অ্যাম্বুল্যান্স দিতেও রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারণ শিশুটি তাঁদের অ্যাম্বুল্যান্সে মারা গেলে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর রেকর্ডে ফর্টিস হাসপাতালের নাম থাকত। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের বিল মিটিয়ে দেওয়ার পরও আধ্যাকে দেওয়া পোশাকের জন্য ফোন করে টাকা চাওয়া হয়েছে পরিবারের কাছ থেকে। এই সমস্ত অভিযোগ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানানোর পর আধ্যার বাবা জয়ন্ত সিং-কে পুরো ব্যাপারটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জে পি নাড্ডা।
The post ১৫ দিনে ডেঙ্গুর বিল ১৮ লক্ষ, তবুও বাঁচল না সাত বছরের শিশুকন্যা appeared first on Sangbad Pratidin.