সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মুখ ফসকে বলা ভুল নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি যতই কটাক্ষ করুক না কেন, দমতে নারাজ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। কর্নাটকে নির্বাচনী প্রচারে ভুল করে তিনি দলেরই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার’ চালানোর দায়ে অভিযুক্ত করেছিলেন। শুক্রবারও অনুবাদকের ভুলে অমিত শাহের বক্তব্যের মানে পালটে যায়। তাঁর বক্তব্যের যে মানে করেন প্রহ্লাদ জোশি, তাতে শাহের বক্তব্যের নির্যাস দাঁড়ায়, ‘ভারতকে ধ্বংস করবেন মোদি।’ এই নিয়ে ফের শোরগোল জুড়ে দেয় কংগ্রেস। কংগ্রেসকে পালটা আক্রমণ করে শাহ শুক্রবার মাইসুরুতে বলেছেন, তাঁর ভুল হতে পারে। কিন্তু রাজ্যের মানুষ আর ভুল করবেন না। যদিও লিঙ্গায়তকে পৃথক ধর্মীয় সংখ্যালঘুর স্বীকৃতি দিয়ে রাজ্যের সিদ্দারামাইয়া সরকার ‘পাশার দান’ উলটে দিয়েছে বলে মনে করছে কংগ্রেস।
[‘মোদি ভারতকে ধ্বংস করবেন’, অমিত শাহের বক্তৃতার অনুবাদে শোরগোল]
গত মঙ্গলবার রাজ্যের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের কথা বলতে গিয়ে অমিত শাহ মুখ ফসকে ইয়েদুরাপ্পা (বিজেপি) সরকারের কথা বলে ফেলেছিলেন। বি এস ইয়েদুরাপ্পা শুধু তাঁর দলেরই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নন, আসন্ন নির্বাচনে তাঁকে সামনে রেখেই লড়াইয়ে নেমেছে দল। আর বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া কংগ্রেসের। দ্রুত ভুল শুধরে নিলেও যা হওয়ার ততক্ষণে হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে দলের অনেক নেতাই শাহ-কে কটাক্ষ করা শুরু করেন। যার জবাব শুক্রবার দিয়েছেন শাহ। পালটা আক্রমণ করে বলেন, “আমার মুখ ফসকে কোনও কথা বেরিয়ে যেতেই পারে। তাতে কংগ্রেসের উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। রাহুল মনে রাখবেন, আমার ভুল হতে পারে। কিন্তু কর্নাটকের মানুষ ভুল করবেন না।” কংগ্রেস আমলে রাজ্যে বিজেপি-আরএসএস কর্মীদের খুন নিয়ে কড়া আক্রমণ করে শাহ বলেন, “২৪ জনেরও বেশি দলীয় কর্মী খুন হয়েছেন। আর পুলিশ খুনিদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সিদ্দারামাইয়া সরকারের দিন ঘনিয়ে এসেছে। বিজেপি সরকারে এসে ন্যায়বিচার করবে।” দু’দিনের সফরে কর্নাটকে গিয়েছেন শাহ। সেখানে ১২ মে বিধানসভা নির্বাচন।
এদিকে ভোটের অব্যবহিত আগে লিঙ্গায়তদের পৃথক ধর্মীয় সংখ্যালঘুর মর্যাদা দিয়ে বিজেপির পালের হাওয়া কেড়ে নেওয়া গিয়েছে বলে মনে করছে কংগ্রেস। যেভাবে বৌদ্ধ, জৈন বা শিখদের আলাদা স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৯০-এ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা কংগ্রেস সভাপতি রাজীব গান্ধী রাজ্যের লিঙ্গায়ত মুখ্যমন্ত্রী বীরেন্দ্র পাতিলকে আচমকাই সরিয়ে দিয়েছিলেন। যা প্রায় রাজ্যের ১৭ শতাংশ উচ্চবর্ণের প্রভাবশালী লিঙ্গায়ত ভোটার ভালভাবে নেয়নি। তিন দশক ধরে তারা বিজেপির বড় ভোটব্যাঙ্ক। ইয়েদুরাপ্পা তাঁদের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা। কিন্তু হাজার খানেক মঠ তাদের মতামতকে প্রভাবিত করে। প্রতিটি মঠের ধর্মগুরুও আলাদা। বিজেপির অভিযোগ, এই ঘোষণার মাধ্যমে কংগ্রেস হিন্দুদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে। কিন্তু তাতে কতটা সুবিধা হবে, সংশয় থাকছেই।
[নীরব-মেহুলকে দেশে ফিরিয়ে আনবে কেন্দ্র, আশ্বাস প্রতিরক্ষামন্ত্রীর]
উত্তর কর্নাটকের একটি প্রসিদ্ধ লিঙ্গায়ত মঠের প্রধান সিদ্দালিঙ্গা স্বামী বলছেন, “আমাদের হিন্দুদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। আমরা হিন্দু-বিরোধী নই। আবার হিন্দু ধর্মের অধীন কোনও মতবাদে বিশ্বাসী নই। একমাত্র যারা অখণ্ড হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী, তারাই প্রমাদ গুনছে। তারা ধর্মের সংস্কারে উদ্যোগী নয়, স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চায়। আমরা তাদের চ্যালেঞ্জ করেছি।” এখন তাই লিঙ্গায়তদের নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছে। ফেব্রুয়ারিতে একটি বড় লিঙ্গায়ত মঠে গিয়েছিলেন রাহুল। শুক্রবার অন্য মঠে অমিত শাহ। উল্লেখ্য, দ্বাদশ শতকে হিন্দুদের জাতিভেদ প্রথা ও লিঙ্গবৈষম্য অস্বীকার করে লিঙ্গায়ত মতবাদ প্রচার করেন সমাজ সংস্কারক বাসভান্না। দক্ষিণের রাজ্যে নয়ের দশক থেকে বিজেপির প্রভাব বাড়লেও ২০০৮-এ প্রথম সেখানে সরকার গড়ে বিজেপি। সেই সাফল্যেও লিঙ্গায়তদের অবদান ছিল প্রচুর। ২২৪টি আসনের মধ্যে অন্তত একশোটিতে তারাই ফলাফল নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা নেয়।
কর্নাটকের শাসক কংগ্রেস হিন্দু সংখ্যালঘু ও দলিতদের পাশে টেনে ভোটে বাজিমাত করার স্বপ্ন দেখছে। সিদ্দারামাইয়া নিজেও দলিত শ্রেণির। এক শতক আগে থেকেই নিজেদের পৃথক ধর্মীয় পরিচয় চেয়ে আন্দোলন শুরু করেন লিঙ্গায়তরা। কিন্তু গত বছর থেকে তা যেন প্রবল হয়েছে। বিদার, হুবলি, বেলগাঁও ও ধারওয়াড়ের মতো উত্তর কর্নাটকের লিঙ্গায়ত অধ্যুষিত এলাকায় প্রায় প্রতিটি সভাতেই লক্ষাধিক জনসমাগম। যা কংগ্রেসের প্রত্যক্ষ সমর্থন ছাড়া সম্ভব ছিল না বলেই মনে করেন যুবসমাজের একাংশ। ধর্মীয় সংখ্যালঘুর তকমা রাজনীতিবিদ ও মঠগুলিকে প্রচুর সুবিধা দেবে। লিঙ্গায়তদের মধ্যেই ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অর্থাৎ লিঙ্গায়তদের সঙ্গে বীরশৈবদের। দ্বিতীয় অংশ শিবের উপাসক, বেদ মানেন, হিন্দুদের রীতিনীতিই মেনে চলেন। ফলে লিঙ্গায়ত ভোট ভাগ হলে কংগ্রেসই ফায়দা তুলবে। রাজ্যের আর একটি সম্পন্ন শ্রেণি ভোক্কালিগা তাদের নেতা এইচ ডি দেবগৌড়ার প্রতি অনুগত। সব মিলিয়ে নির্বাচনের আগে বিজেপি মহাসংকটে। একদিকে, ভোটের দায়, অন্যদিকে হিন্দুঐক্যের আদর্শ। ইয়েদুরাপ্পা নিজে লিঙ্গায়তদের পৃথক মর্যাদার দাবি খারিজ করেছেন। কিন্তু ২০১২-য় দল ছাড়ার সময় নিজেই যে একই দাবি তুলেছিলেন, তা তাঁর গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে। সিদ্দালিঙ্গা স্বামী বলছেন, “আমরা কোনও রাজনৈতিক দল বা নেতার অনুগত নই। লিঙ্গায়ত ধর্মের পুনরুজ্জীবনই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।” তাঁর এই মন্তব্য কীসের ইঙ্গিত, আপাতত তা নিয়েই জল্পনা বিজেপি ও কংগ্রেসের অন্দরে।
[চিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ১০ দিনের গোলাবারুদও নেই ভারতীয় সেনার ভাঁড়ারে]
The post আমার ভুল হতে পারে, কিন্তু কর্নাটকের মানুষের হবে না: অমিত শাহ appeared first on Sangbad Pratidin.