সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত থামাতে আসরে নেমেছে আমেরিকা। শনিবার দু'দেশের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে আলোচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজের সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে টুইট করে জানিয়েছিলেন, দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে রাজি। ফের শান্তি ফেরার আগাম শুভেচ্ছাও জানান ট্রাম্প। তারপর বিদেশসচিব সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করেন, পাকিস্তানের অনুরোধ মেনে আপাতত সীমান্তে সংঘাত বন্ধে রাজি ভারত। ১২ মে পর্যন্ত এই সংঘর্ষবিরতি জারি থাকবে, ওইদিন ফের দু'দেশের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অফিসার বা DGMO স্তরে বৈঠক হবে। আর এখানেই সংঘাত থামাতে আমেরিকার 'নাক গলানো' নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। কেন মার্কিন হস্তক্ষেপ মেনে নিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি? এই প্রশ্নের পাশাপাশি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি নস্যাৎ করা 'আয়রন লেডি' ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছে কংগ্রেস। সোশাল মিডিয়া পোস্টে নেতাদের দাবি, 'আজ দেশ ইন্দিরা গান্ধীজির অভাব অনুভব করছে।'
যুযুধান দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি এবং তা প্রশমনে সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কেন হঠাৎ ইন্দিরা গান্ধীর প্রসঙ্গ তুলে আনল কংগ্রেস? এ কি শুধুই বিরোধী হিসেবে বর্তমান কেন্দ্র সরকারের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখানো নাকি এই তুলনা সত্যিই এই মুহূর্তে সুপ্রযুক্ত? এনিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলতেই পারে। তার আগে প্রেক্ষাপট একবার বুঝে নেওয়া যাক।
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত পুরোদমে সামরিক সমর্থন দিয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ সুসম্পর্কের জেরে ভারতের এই পাশে দাঁড়ানো। সেসময় খান সেনাদের অত্যাচারে প্রাণ ওষ্ঠাগত অবিভক্ত বাংলার সাধারণ মানুষের, বিশেষত বাংলাভাষীদের। দুই ভূখণ্ডের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। ভারতীয় সেনা পূর্ব পাকিস্তানের হয়ে রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়। শক্তিশালী আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ইন্দিরা গান্ধীকে যুদ্ধ থামানোর কথা বলেন। তাতে 'আয়রন লেডি' ইন্দিরার দৃঢ় জবাব ছিল, ''হিংসার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের মেরুদণ্ড সোজা। যথেষ্ট ইচ্ছাশক্তি এবং সম্পদ রয়েছে আমাদের। সেই সময় অতীত যখন শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গ হওয়ায় তিন, চার হাজার মাইল দূর থেকে কেউ ভারতীয়দের নির্দেশ দিত, নিজেদের ইচ্ছে চাপিয়ে দিত।’’
কংগ্রেসের অভিযোগ, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র মার্কিন মধ্যস্থতায় পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয়েছে মোদি সরকার। এটা মেনে নেওয়া আর কী? তাঁদের ব্যাখ্যা, আমেরিকার অঙ্গুলিহেলন নোয়াতে পারেনি ইন্দিরা গান্ধীকে। কিন্তু মোদি মাথা নোয়ালেন। গোটা দেশে আজ ইন্দিরার মতো দৃঢ়, ঋজু ব্যক্তিত্বের বড় অভাব।
