সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কেটে গিয়েছে ১২টা বছর। কিন্তু, পরিস্থিতি পাল্টায়নি এতটুকু। ফের বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ে দুষ্কৃতীদের নিশানায় সংবাদমাধ্যম। ‘খবর’ লেখার ‘অপরাধে’ খুন হতে হল সাংবাদিককে। নিহত সাংবাদিক ‘মহানগরী টাইমস’-এর বছর আটচল্লিশের শশীকান্ত ওয়ারিশ। সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গাড়ির ধাক্কায় ভয়ঙ্কর আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার হাসপাতালে মৃত্যু হয় শশীকান্তর। পান্ধারিনাথ আম্বেরকর নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে খবর লিখেছিলেন। খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় আম্বেরকরকে।
এই মৃত্যুর ঘটনা মনে করিয়ে দিল ২০১১-র ১১ জুন দিনটাকে। সে দিন নিজের বাড়ির সামনেই শয়তানদের গুলিতে ঝাঁজরা হতে হয়েছিল ক্রাইম রিপোর্টার জ্যোতির্ময় দে-কে। পরে জানা গিয়েছিল, এই খুনের মাস্টার মাইন্ড অন্ধকার জগতের বেতাজ বাদশা ছোটা রাজন। শশীকান্তর খুনের পিছনেও এমন কোনও ‘বড়’ হাত আছে কি না, খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে মহারাষ্ট্র (Maharashtra) পুলিশ। এই ঘটনায় একনাথ শিন্ডে-দেবেন্দ্র ফড়নবিস সরকারকে নিশানা করতে ছাড়েনি উদ্ধব ঠাকরের শিবির। সাংবাদিক শশীকান্ত ওয়ারিশের মৃত্যু ঘিরে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। একাধিক সংবাদমাধ্যম দাবি তুলেছে শশীকান্ত ওয়ারিশের ‘দুর্ঘটনাজনিত’ মৃত্যুর সঠিক তদন্ত করতে হবে। মারাঠি সাংবাদিক (Journalist) সংঘ (এমএমপিএস) মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিসকে চিঠি দিয়েছে। ‘জঘন্য হত্যাকাণ্ড’-র যথাযথ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
[আরও পড়ুন: ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া! সময়ের আগেই ৪ হাজার কোটির ঋণ শোধ আদানি গোষ্ঠীর, এবার নজর সুপ্রিম কোর্টে]
কী ঘটেছিল সোমবার বিকেলে? সেদিন রাজাপুর হাইওয়েতে একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন শশীকান্ত। তখনই একটি অত্যধিক দ্রুত গতিতে আসা গাড়ি ধাক্কা মারে। হিঁচড়াতে হিঁচড়াতে অনেকটাই দূরে নিয়ে ফেলে ক্ষতবিক্ষত শশীকান্তর দেহটাকে। স্থানীয়রা ছুটে আসতেই অভিযুক্ত পালিয়ে যায়। শশীকান্তকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যু হয়। রত্নাগিরি জেলার পুলিশ সুপার ধনঞ্জয় কুলকার্নি বলেন, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধৃতের পুলিশ হেফাজত। খুনের উদ্দেশ্য জানার জন্য ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সোমবার শশীকান্তর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বারসুতে একটি রিফাইনারি প্রকল্পের বিরুদ্ধে খবর লিখেছিলেন তিনি। খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত পান্ধারিনাথ আম্বেরকরকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন শশীকান্ত। সেই প্রতিবেদনের জেরেই এই খুন কি না, দেখছে পুলিশ। শশীকান্তর বাড়িতে আছেন মা, স্ত্রী, ১৯ বছরের ছেলে ।
উদ্ধব ঠাকরে ঘনিষ্ঠ শিবসেনা সাংসদ বিনয় রাউত দাবি করেছেন, এটা খুনের ঘটনা। বিষয়টি তিনি সংসদে তুলবেন। তিনি জানিয়েছেন, ধৃত আম্বেরকরের এরকম ‘ইতিহাস’ রয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে আম্বেরকরকে অভিযুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এলাকার বাসিন্দা যাঁরা ওই রিফাইনারির বিরুদ্ধে ছিলেন, তাঁদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আছে আম্বেরকরের বিরুদ্ধে। উদ্ধব মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে জানিয়েছিলেন, সেখানে কোনও প্রকল্প হবে না। এমনকী দেবেন্দ্র ফড়নবিসও জানিয়েছিলেন, ওই প্রকল্প হবে না।